স্টাফ রিপোর্টার: আসন্ন পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। এই নির্বাচনে তারা একক প্রার্থী দেবে। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে কোনো জাতীয় নির্বাচনে না যাওয়ার ব্যাপারে তারা অটল অবস্থানে রয়েছে। গত বুধবার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। ঐ বৈঠকে উপস্থিত শরিক দলের একাধিক নেতা এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন।
আগামী ডিসেম্বরে দেশের ২৬১টি পৌরসভা এবং আগামী বছরের শুরুতে দেশের প্রায় সাড়ে চার হাজার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হবে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসায় বিভিন্ন কৌশলে প্রচার-প্রচারণায় নেমেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, চলতি বছরের ১৯ নভেম্বর থেকে পর্যায়ক্রমে পৌরসভা নির্বাচনের কর্মকাণ্ড শুরু হবে। ফেব্রুয়ারি-মার্চের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। অক্টোবর-নভেম্বরের শুরুতে এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরিকল্পনা রয়েছে।
ইসি সূত্র জানায়, গত ২৫ জুলাই থেকে ভোটারের তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আর ৩১ জানুয়ারির মধ্যে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বর্তমানে দেশে ৩১৯টি পৌরসভা রয়েছে। সর্বশেষ ২০১১ সালের এটিএম শামসুল হুদার নির্বাচন কমিশন ২৮৫টি পৌরসভায় নির্বাচনের আয়োজন করে। ওই বছরের ১২ থেকে ১৮ জানুয়ারির মধ্যে বেশির ভাগ পৌর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ১২ জানুয়ারি ৭৭টি, ১৩ জানুয়ারি ৪৭টি, ১৭ জানুয়ারি ৪৫টি এবং ১৮ জানুয়ারি ৩৫টি পৌরসভার নির্বাচন সম্পন্ন হয়। বাকি পৌরসভার নির্বাচন পর্যায়ক্রমে অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় সরকারের পৌরসভার মেয়াদ পাঁচ বছর। আইন অনুযায়ী, মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের তিন মাসের মধ্যে পৌরসভায় নির্বাচন আয়োজনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
বর্তমান কমিশনের অধীনে পৌরসভার পর ইউনিয়ন পরিষদের ছাড়া আর কোনো বড় ধরনের নির্বাচন বাকি নেই। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে বর্তমান কমিশনের পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হবে। এর আগে অবশ্য পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ এবং কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের বর্তমান পরিষদের মেয়াদ উত্তীর্ণ হবে।
বেগম জিয়ার সাথে বৈঠকে উপস্থিত শরিক দলের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে খালেদা জিয়া ইতিবাচক। তিনি প্রস্তুত থাকতে বলেছেন। তবে এটি যেহেতু স্থানীয় নির্বাচন সেক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত স্থানীয়ভাবেই নেয়া হবে। কেন্দ্র থেকে কাউকে জোর করে সমর্থন দেয়া হবে না। বেগম জিয়া বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমরা আগের অবস্থানেই আছি। যে নামেই হোক নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচনে আমরা যাব না।
বিএনপি শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যেতে পারে- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এমাজউদ্দীন আহমদের এ বক্তব্য প্রসঙ্গে বেগম খালেদা জিয়া বলেন, এটা উনার ব্যক্তিগত অভিমত। আমাদের দলের বক্তব্য নয়। আগেই বলেছি নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করা যায় না। শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচনে যাব না।
নির্বাচনকালীন সরকার: হাইকোর্টের অভিমত নিয়ে বৈঠক করবে বিএনপি। এদিকে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে সুপ্রিমকোর্টের পর্যবেক্ষণের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে দুই-এক দিনের মধ্যেই বৈঠকে বসবে বিএনপি। আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর অধীনে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের নতুন রূপরেখা সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণে উঠে এলে বিষয়টি নিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানানো হবে। আর এর জন্য বিএনপির শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা হবে এবং সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে অবহিত করা হবে।