গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর গাংনী উপজেলার মাথাভাঙ্গা নদীতে ডিঙ্গি নৌকা ডুবিতে নিখোঁজ যুবক তুষার হোসেনের (২৫) মরদেহ গতকাল বুধবার বিকেলে উদ্ধার করা হয়েছে। প্রথমে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা জাল টেনে এবং পরবর্তীতে ছয় ডুবুরী নদীর বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি করছিলেন। পানির নিচে মাছ হাতড়ে ধরার কায়দায় এগিয়ে চলছিলো উদ্ধার কাজ। সম্ভাব্য দু কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তল্লাশি করেও নিখোঁজের সন্ধান মিলছিলো না। নিরুপায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গতকাল বিকেলে যখন হাল ছেড়ে দেয়ার অবস্থায় ঠিক তখনই মিললো তুষারের সন্ধান। তবে জীবিত নয় মৃত। পানিতে পেট ভর্তি হওয়ায় মরদেহ পানির ওপরে ভেসে ওঠে। যেখানে মরদেহ ভেসে ওঠে সেখান থেকে প্রায় একশো গজ দূরে নৌকা ডুবি ঘটেছিলো। তল্লাশির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ওই জায়গায় অসংখ্যবার তল্লাশি করেছিলেন ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় লোকজন। কিন্তু কোনোভাবেই তুষারের অবস্থান শনাক্ত হয়নি।
মেহেরপুর ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক রফিকুল ইসলাম জানান, নদীতে স্রোতে এবং গভীরে পানির পাক রয়েছে। পাকের মধ্যে তুষার আটকে যাওয়ায় তল্লাশিকারীদের নজরে পড়েনি বলে ধারণা করছেন তিনি। তিনি আরো জানান, মঙ্গলবার বিকেলে ডিঙ্গি নৌকা ডুবির আঘাঘণ্টা পর থেকে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা নদীতে জাল ফেলে তল্লাশি করছিলেন। সন্ধ্যায় যোগ হয় খুলনা থেকে আসা ডুবরি দলের ছয় সদস্য। তুষারের সন্ধান না পেয়ে রাত বারোটার দিকে তল্লাশি অভিযান স্থগিত করা হয়। গতকাল সকাল থেকে নদীর ২-৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ডুবুরিয়া তল্লাশি চালান। এক পর্যায়ে মরদেহ ভেসে উঠলে তা উদ্ধার করা হয়। নদীর গভীরে স্রোতের পাকে মরদেহ আটকে ছিলো বলে জানান তিনি। মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে ফায়ার সার্ভিস।
এদিকে নৌকা ডুবির পর থেকেই কাজিপুর গ্রামের পাশাশি বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজারো মানুষের ভিড় পড়ে নদীপাড়ে। স্বজনদের বুক ফাটা কান্না ও আর চোখের পানিতে উৎসুক মানুষও চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। গতকাল সকালে ঘটনাস্থল পরির্দশন করেন গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল আমিন ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা দিলীপ কুমার সেন। শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন তারা।
বিকেলে মরদেহ উদ্ধারের পর স্বজনহারা পরিবারের সদস্যদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। গত মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত তুষারে কোনো সন্ধান না পেয়ে তার বাঁচার আশা এক প্রকার ছেড়েই দিয়েছিলো গ্রামবাসী। জীবিত না হোক অন্তত মরদেহ উদ্ধারের দাবি করে পরিবারসহ গ্রামবাসী। সে অনুযায়ী ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা সাধ্যমতো চেষ্টা করেছেন বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের ওই কর্মকর্তা। গতকাল বিকেলে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে মরদেহ পরিবারে হস্তান্তর করা হলে গতকালই জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন হয়।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার বিকেলে নদীর পাড়ের ক্ষেতের কাজ শেষে বাড়ির ফেরার সময় কাজিপুর গ্রামের আশরাফুল ইসলামের ছেলে তুষার হোসেন ডিঙ্গি নৌকা ডুবে নিখোঁজ হন। মাথাভাঙ্গা নদীর ওপারে নিজ ক্ষেতে তিনি কাজ করতে গিয়েছিলেন।