আলমডাঙ্গা ব্যুরো: মিরপুর উপজেলা ও আলমডাঙ্গা উপজেলার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত মরা কুমার নদের বাঁধ অপসারণকে কেন্দ্র করে আলমডাঙ্গার হাড়গাড়ি গ্রামবাসীর সাথে মিরপুর উপজেলার কয়েক গ্রামবাসীর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। এ সংঘর্ষের ঘটনায় উভয়পক্ষের ৭ জন রক্তাক্ত জখম হয়েছে।
জানা গেছে, আলমডাঙ্গা উপজেলা ও কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত মরা কুমার নদে প্রায় ১২/১৩ স্থানে বাঁধ দিয়ে ২ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামবাসী পৃথক পৃথকভাবে মাছ চাষ করে আসছে। এ বাঁধগুলোর ফলে কুমার নদের দু পাড়ের মাঠে অতি বৃষ্টিতে জমে থাকা পানি বের হতে পারছে না। মাঠগুলো প্লাবিত করে রেখেছে। বিশেষ করে মিরপুর উপজেলার সোনা কান্দরের বিল। এ বিলে মিরপুর উপজেলার পাগলা, মালিহাদ, শুকচা, বাজিতপুর, চকহারদী, পারকুলা, সুতাইল, নান্দিয়া গ্রামবাসীর হাজার হাজার বিঘা জমি রয়েছে। এ বছর অতি বৃষ্টির কারণে সোনা কান্দরের এ বিলটি এখনও পানিতে তলিয়ে রয়েছে। পাগলার খাল দিয়ে চিরাচরিত নিয়মে এ মাঠের পানি কুমার নদে নিষ্কাশিত হয়ে আসছে। কিন্তু বর্তমানে কুমার নদের বিভিন্ন স্থানে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষের ফলে সোনা কান্দরের বিলের পানি আর বের হতে পারছে না। একই রকম অবস্থা হয়েছে আলমডাঙ্গা উপজেলার জলিবিল নামের মাঠের। হারদী, কুমারী এলাকার বেশ কয়েকটি গ্রামবাসীর ধানী জমি রয়েছে ওই বিলের মাঠে। কুমার নদে বাঁধের ফলে এ মাঠেও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
আমন ধান রোপণ মরসুম শেষ হতে চলেছে। অথচ এখন মাঠ ২টি পানিতে সয়লাব। ধানের চারা রোপণের সুযোগ নেই। বাধ্য হয়ে মিরপুর উপজেলার ভুক্তভোগী কয়েকটি গ্রামের মানুষ সম্প্রতি মিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট মরা কুমার নদের বাঁধগুলো অপসারণ করে প্লাবিত মাঠের পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নিতে লিখিত আবেদন জানান। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে গতকাল মঙ্গলবার মিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আজাদ জাহানের নেতৃত্বে কুমার নদের মিরপুর অংশের ৩টি বাঁধ অপসারণ করা হয়। পরে দুপুরের দিকে মিরপুর উপজেলার শুকচা ও বাজিতপুর গ্রামের মানুষ বাজিতপুর ও আলমডাঙ্গা উপজেলার হাড়গাড়ি গ্রামের মাঝে অবস্থিত হাড়গাড়ি গ্রামের মাছচাষিদের একটি বাঁধ অপসারণ করতে যায়। সে সময় উভয় গ্রামবাসীর মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। এতে উভয়পক্ষের ৭ জন রক্তাক্ত জখম হয়েছে। এরা হলো- মিরপুর উপজেলার বাজিতপুরের মুক্তার মিস্ত্রির ছেলে ইমারত আলী (৪৫), মৃত জব্বার মণ্ডলের ছেলে আব্দুল গণি (৪২), আবু বকরের ছেলে আবু সাঈদ (২৮) ও রহিম মণ্ডলের ছেলে নিজাম (৩০) এবং হাড়গাড়ি গ্রামের আব্দুল লতিফের ছেলে রাসেল (৩০), মৃত আবু তাহেরের ছেলে নাসির (২৮) ও কুমারী গ্রামের নাসির আলী। তাদেরকে হারদী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে ঘাড়ে কোপ খাওয়া হাড়গাড়ি গ্রামের রাসেলের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।
মিরপুর উপজেলার বাজিতপুর গ্রামবাসী অভিযোগ করেছেন, বাজিতপুরের জখম ইমারত আলী ও আব্দুল গণিকে একই গ্রামের মৃত মতলেব মণ্ডলের ছেলে শাহাজুল ও মৃত ইব্রাহিমের ছেলে হজরত মোটরসাইকেলযোগে হারদী স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। এ সংবাদ পেয়ে হাড়গাড়ি গ্রামবাসী হাসপাতালে গিয়ে আক্রমণ করে তাদের মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেছে।
এদিকে এ সংবাদ পেয়ে মিরপুর উপজেলার পল্লি বাজিতপুর, শুকচা, চকহারদী, গোপিনাথপুর, পাগলা, মালিহাদের শ শ ব্যক্তি ঢাল-ফালা নিয়ে আলমডাঙ্গা উপজেলার পল্লি হাড়গাড়ি গ্রামবাসীর ওপর আক্রমণ করতে ছুটে যায়। অন্যদিকে, হাড়গাড়ি গ্রামবাসীও অবস্থান নেয়। এ সংবাদ পেয়ে মিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুল আরেফিন, মিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আজাদ জাহান, মিরপুর থানা অফিসার ইনচার্জ কাজী জালাল, ইউপি চেয়ারম্যান বদর উদ্দীন ভোদু প্রমুখ দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে পরিস্থিত শান্ত করেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে হাড়গাড়ি গ্রামের মৎস্যচাষিদের আগামী ২২ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয় মাছ ধরে নিয়ে বাঁধ অপসারণ করে নেয়ার।