হঠাত করেই মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশনের তোড়জোড়

আইন মানতে আমজনতার কখনোই ঘোর আপত্তি ছিলো না, নেইও। না মানার রেওয়াজ? ওটা মূলত কর্তাদের উদাসীনতায় ধুলোর স্তূপ। তা না হলে মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন না করার রেওয়াজ ভেঙে হঠাত করে রেজিস্ট্রেশনের টাকা জমা দেয়ার লম্বা লাইন কেন? এতোদিন কেন রেজিস্ট্রেশনে তেমন তাগিদ পরিলক্ষিত হয়নি? আইন থাকলেই হয় না, আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হয়। আইন প্রয়োগে মাঠপর্যায়ে যারা কর্মরত তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে আন্তরিক করতে ওপর মহলের শুধু তাগিদ থাকলেই হয় না, পরিবেশসহ স্বচ্ছ্ব জবাবদিহিতাও রাখতে হয়।
দেশের ছোট বড় সড়কগুলো মৃত্যুপুরিতে রূপান্তর হয়েছে। সড়কে বেরিয়ে সুস্থভাবে বাড়ি ফেরার আশা অনেকটাই দূরাশার মতো। স্বাভাবিক মৃত্যুর ন্যূনতম নিশ্চয়তা নেই। দুর্ঘটনার পর দুর্ঘটনা। মৃত্যুর মিছিল যেন লেগেই আছে। অবশ্যই এখন আর দুর্ঘটনাকে দুর্ঘটনা বলে দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। সতর্কতা অবলম্বন দুর্ঘটনার ঝুঁকিই শুধু কমায় না, সড়ক নিরাপদ রাখতে সহায়ক। সতর্কতা অবলম্বনে আন্তরিক করার জন্যই বিধি-বিধান ও তার যথাযথ প্রয়োগের ব্যবস্থা। বিধি থাকলেও তার প্রয়োগ না থাকলে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন দূরাস্ত আইনের প্রতিই বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাতে সিদ্ধহস্ত হন অনেকে। অনিয়মই নিয়ম হয়ে দাঁড়ায়। দেশে সড়ক দুর্ঘটনার মহোৎসব দেখে কোনোভাবেই অস্বীকার করার জো নেই যে, ট্রাফিক আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাব পদে পদে। মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন না করে অনটেস্ট লিখেই দিনের পর দিন সড়কে মোটরসাইকেল চালানোর বিষয়টি যেন রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। সড়কে রেজিস্ট্রেশনবিহীন মোটরসাইকেল চালানোটা যেন ক্ষমতা দেখানোর মাধ্যম হয়ে ওঠে। এরই মাঝে সরকারের বিশেষ সিদ্ধান্তে উচ্চ মহলের বিশেষ নিদের্শনায় জেলা-উপজেলা পর্যায়ে রেজিস্ট্রেশনবিহীন মোটরসাইকেল আটকের তোড়জোড় তথা আইন প্রয়োগে শুরু হয়েছে, আর এতেই রেজিস্ট্রেশন করার টাকা ব্যাংকে জমা প্রদানের জন্য লম্বা লাইন পড়তে শুরু করেছে। এতে সরকারের শুধু রাজস্বই আদায় হচ্ছে না, নিরাপত্তাটাও বাড়ছে। অবশ্য যে সব মোটরসাইকেল চোরাই, ভারত থেকে অবৈধভাবে পাচার করে আনা সে সব মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন হয় না, হয়তো হচ্ছেও না। তাই বলে চলবে না? কিছু তো চলবেই। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পরিলক্ষিত হয়, ক্ষমতার ছায়ায় ছিঁচকে অপরাধীরা এসব সুযোগ বুঝে বের করে অপরাধমূলক ঘটনা ঘটিয়ে বেপাত্তা হয়ে যায়। নজর রাখতে হবে, এদের কেউ যেন কোনো নেতার তদবিরে বাড়তি সুযোগ না নেয়।
পুলিশ পারে। আমাদের দেশের পুলিশ কোন কাজটি পারে না? কখন পারে, কখন পারে না তা সাধারণ মানুষের কাছে অস্পষ্ট নয়। অবশ্যই দেশে সর্বক্ষেত্রে আইনের শাসন নিশ্চিত করা খুবই জরুরি। পুলিশকে আইন প্রয়োগে তোষামোদি তথা ক্ষমতার তোষণ পরিহারে পেশাদারিত্ব তুলতে হবে। একই সাথে পুলিশে অপ্রতুলতা কাটিয়ে উঠতে হবে। নেতিবাচক দৃষ্টি দূর করতে হলে পু্লিশে কর্তব্যরতদেরও দায়িত্বপালনে পেশাদারিত্ব ফুটিয়ে তুলতে হবে। মাঝে মাঝে নয়, দেশের স্বার্থে সার্বক্ষণিক আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা জরুরি। সরকারের উচিত সেই পরিবেশ গড়ে তোলা।

Leave a comment