চুয়াডাঙ্গার স্থানীয় শহীদ দিবস আজ

সম্মুখ সমরে শহীদ হন ৮ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা

Chuadanga Aath Kobor 04.08.15

স্টাফ রিপোর্টার/দামুড়হুদা অফিস: আজ ৫ আগস্ট। চুয়াডাঙ্গার স্থানীয় শহীদ দিবস। ১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া ও মেহেরপুর জেলার ৮ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা সম্মুখসমরে নিহত হন। এই ৮ শহীদের স্মৃতিসৌধ রয়েছে চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামে। এরই পাশে গড়ে তোলা হয়েছে স্মতি কমপ্লেক্স। চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাতীয় সংসদের হুইপ বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপি তার ৮ সহযোদ্ধার প্রতি সম্মান জানাতে নিজ উদ্যোগে স্মৃতি কমপ্লেক্সটি নির্মাণ করেছেন। অবসর পেলেই তিনি এই কমপ্লেক্সে নীরিবিল সময় কাটান, ৮ শহীদকে স্মরণ করেন।

Chuadanga -1 (04.08.15)

১৯৭১ সালের ৫ আগস্ট মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর উপজেলার বাগোয়ান গ্রামের মাঠে পাকহানাদার বাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধ হয়। এতে শহীদ হন ৮ মুক্তিযোদ্ধা। এরা হলেন- চুয়াডাঙ্গার মোমিনপুর গ্রামের সিদ্দিক আহমেদের ছেলে রবিউল ইসলাম, চুয়াডাঙ্গা শহরের মাঝেরপাড়ার মৃত বজলুর রহমানের ছেলে আবুল কাশেম, চুয়াডাঙ্গা শহরের শেখপাড়ার মৃত মহিউদ্দিন আহমেদের ছেলে আলাউল ইসলাম খোকন, আলমডাঙ্গার রোয়াকুলি গ্রামের মৃত রহিম মণ্ডলের ছেলে কিয়ামুদ্দিন, আলমডাঙ্গার গোকুলখালী গ্রামের মৃত ইয়াকুব হোসেনের ছেলে হাসান জামান, আলমডাঙ্গার বটিয়াপাড়া গ্রামের মৃত আজিজুর রহমানের ছেলে রওশন আলম, মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর উপজেলার কোমরপুর গ্রামের রমজান আলীর ছেলে আফাজ উদ্দিন ও কুষ্টিয়া জেলার মীরপুর উপজেলার কাটদহ গ্রামের মৃত মহিউদ্দিন আহমেদের ছেলে খালেদ সাইফুদ্দিন আহমেদ তারিক। ৮ শহীদদের মধ্যে একমাত্র তারিককে দেয়া হয় বীর বিক্রম খেতাব। এই ৮ শহীদের লাশ পাকহানাদার বাহিনী চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার জগন্নাথপুর মাঠে এনে দুটি গর্তে মাটি চাপা দেয়। ওই গণকবরের ওপরই এলজিইডির তত্ত্বাবধানে ১৯৯৮ সালে ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে এক একর জমির ওপর নির্মিত হয় স্মৃতিসৌধ।

চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সি আলমগীর হান্নান জানান, প্রতিবছরের মতো এবারও নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে দিবসটি পালনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলসমূহ। সকাল ৯টায় আনুষ্ঠানিকভাবে দিবসের কার্যক্রম শুরু হবে। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চুয়াডাঙ্গা জেলা ইউনিট কমান্ডের কমান্ডার জানান, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের উদ্যোগে এবার দিবসটি যথাযথভাবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সেই মোতাবেক সকাল সাড়ে ৯টায় আটকবর স্মৃতিসৌধে পতাকা উত্তোলনের মধ্যদিয়ে দিবসের কর্মসূচি শুরু হবে। পরে নীরবতা পালন, স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাল্য অর্পণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে।

১৯৭১ সালের ৩ আগস্ট মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা দামুড়হুদার সীমান্তবর্তী মহাজনপুর গ্রামের শেল্টার ক্যাম্পে অবস্থান করছিলেন। ৪ আগস্ট মুক্তিযোদ্ধারা মুসলিম লীগের দালাল কুবাদ খাঁকে ধরে নিয়ে আসেন। ৫ আগস্ট সকালে কুবাদ খাঁর দুজন লোক মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে এসে খবর দেয় রাজাকাররা তাদের ধান কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এ খবর শুনে মুক্তিযোদ্ধা হাসানের নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা বাগোয়ান গ্রামের মাঠে দক্ষিণ-পশ্চিমে দু দলে বিভক্ত হয়ে অগ্রসর হতে থাকে। পাকসেনারা পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী মাঠের আখক্ষেতে ইউকাটিং অ্যাম্বুশ করে রাখে। মুক্তিযোদ্ধারা কিছু বুঝে ওঠার আগই তাদের অ্যাম্বুশে পড়ে যান। এখানে উভয়পক্ষের মধ্যে প্রায় আড়াই ঘণ্টাব্যাপি মুখোমুখি যুদ্ধ হয়। এতে পাকবাহিনীর অনেক সদস্য মারা যায় এবং আহত হয়। শহীদ হয় ৮ জন মুক্তিযোদ্ধা। এরা হলেন- রবিউল, কাশেম, খোকন, কিয়ামুদ্দিন, হাসান, রওশন, আফাজ ও তারিক। এদের মধ্যে একমাত্র তারিককে দেয়া হয় বীরবিক্রম খেতাব। পরে তাদের লাশ পাকহানাদারবাহিনী চুয়াডাঙ্গার জগন্নাথপুর মাঠে দুটি গর্তে মাটি চাপা দেয়। এই ৮ জন মুক্তিযোদ্ধার কবরকে ঘিরেই এ স্থানটির নামকরণ হয়েছে আটকবর। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সোলায়মান হক ছেলুন জোয়ার্দ্দারের প্রচেষ্টায় ওই গণকবরের ওপরই এলজিইডির তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম সিদ্দিকীর তত্ত্বাবধানে ১৯৯৮ সালে ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ১ একর জমির ওপর নির্মিত হয় স্মৃতিসৌধ। তার পাশেই নির্মাণ করা হয়েছে রেস্ট হাউজ কমপ্লেক্স। এখানে ছবির ফ্রেমে ধরে রাখা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধকালীন ইতিহাস। নাম দেয়া হয় আটকবর কমপ্লেক্স।

এদিকে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা খাঁন ও আলী আজগার ফটিক যুক্ত বিবৃতিতে সম্মুখ সমর ও ৮ শহীদ সম্পর্কে তথ্য দিয়ে বলেছেন, সেদিনের যুদ্ধে যারা প্রাণে রক্ষা পান তারা হলেন- মোস্তফা খান, আলী আজগর ফটিক, আজম আক্তার জেয়ার্দ্দার পিন্টু, হুমায়ুন কবির, আকতারুজ্জামান ও নূরুল আমিন। ৮ জন শহীদ হওয়ার পরদিন ক্যাম্পে ফিরে আমাদের সকলকে কমান্ডার হাফিজুর রহমান জোয়ার্দ্দার বকাবকি করেন। বলেন, আমার হুমুক ছাড়া তোমরা কেন যুদ্ধে গেলে? মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, অভিভাবক এবং বিহার চাকুলিয়ার ট্রেনিংপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জেয়ার্দ্দার ছেলুন এই ৮ জন শহীদ হওয়ার খবর পেয়ে ভারতের হাটখোলা অ্যাকশন ক্যাম্পের কমান্ডার হিসেবে গ্রুপ কামান্ডারকে ডেকে একত্রিত করেন এবং যুদ্ধ পরিচারনা করার জন্য দায়িত্ব নেন। তার পর থেকে সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলেনের নেতৃত্বে আমরা যুদ্ধ করি। তিনিই সকল গেরিলা কমান্ডারদের নেতৃত্ব দিতেন।

Leave a comment