মায়ের কোলে বুলেট বেগম হাসি ফুটেছে মুখে

স্টাফ রিপোর্টার: অবশেষে মায়ের কোলে ফিরেছে মাতৃগর্ভে গুলিবিদ্ধ নবজাতক বুলেট বেগম। গুরুতর অসুস্থ মা-মেয়ের শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হওয়ায় অবশেষে দেখা হয়েছে তাদের। গতকাল বেলা ১১টায় মা-মেয়ের প্রথম সাক্ষাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নবজাতক ওয়ার্ডে সৃষ্টি হয় এক আবেগঘন পরিবেশের। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা শিশু সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে মা নাজমার চোখের দু কোণ বেয়ে নেমে আসে আনন্দের অশ্রু। বুকের ধনকে কাছে পেয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে রাখেন অনেকক্ষণ। এতোদিন খুব কাছাকাছি থাকলেও মাতৃগর্ভে গুলিবিদ্ধ বুলেটকন্যার মুখটি দেখার সুযোগ হয়নি মা নাজমা খাতুনের।

অন্যদিকে চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা ও আবদুল মমিন হত্যা মামলার বাপ্পী (২৫) ও সাগর হোসেন (২৮) নামের আরও দু আসামিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এছাড়া গ্রেফতার সুমন হোসেন ও আবদুস সোবহানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের নির্দেশে পুলিশ দু দিনের রিমান্ডে নিয়েছে। এদিকে ঢামেক হাসপাতালে মেয়েকে দেখে মা নাজমা বেগম বলেন, এতোদিন আমি শুনেছিলাম আমার কলিজার টুকরা ভালো আছে। আজ নিজ চোখে দেখে অনেক ভালো লাগছে। যাদের কারণে আমাদের এ দশা আমি তাদের ফাঁসি চাই। বলে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন তিনি। নবজাতক ওয়ার্ডের বিভাগীয় প্রধান ডা. আবিদ হোসেন মোল্লা বলেন, শিশুটি ১২ দিন ধরে এখানে চিকিৎসাধীন। যখন শিশুটি আসে তখন তার বিভিন্ন সমস্যা ছিলো। জন্ডিস ছাড়াও রক্তে হিমোগ্লোবিন কম ছিলো। এছাড়া তার শরীর গুলিবিদ্ধ ছিলো। আমরা মেডিকেল বোর্ড গঠন করে তার চিকিৎসা দিয়ে আসছি। বাচ্চা আগের চেয়ে ভালো তবে শঙ্কামুক্ত নয়।

শিশু সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. কানিজ হাসিনা শিউলি জানান, বাচ্চার কাছে মা গিয়েছেন। তবে তাদের কারোরই শক্তি নেই বুকের দুধ খাওয়ানো বা খাওয়ার। তাই দুধ খাওয়ানো হয়নি। প্রথমে যখন তাকে এখানে আনা হয় তখন বাচ্চার জন্ডিস ছিলো ১৭ পয়েন্ট। চিকিৎসা দেয়ার পর নেমে আসে ১২ পয়েন্টে। তার হিমোগ্লোবিন ছিলো ৫০ হাজার। রক্তে হিমোগ্লোবিন প্রয়োজন দেড় লাখ থেকে আড়াই লাখ। বর্তমানে ৮০ হাজার হয়েছে। প্রথমে ফিডারে দু ঘণ্টা পরপর ২ এমএল, পরে ৫ এমএল, ৭ এমএল, আজকে (সোমবার) ১০ এমএল খাওয়ানো হয়েছে। শিশুটির অবস্থা ভালো কিন্তু শঙ্কামুক্ত নয়। তবে মায়ের দুধ খেতে পারলে শিশুটি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠত বলে মনে করেন তিনি।

মাগুরা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমাউল হক জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী সাইনবোর্ড এলাকার একটি বাড়ি থেকে সোমবার দুপুরে বাপ্পী ও সাগরকে গ্রেফতার করা হয়। সাগর, বাপ্পী ও ৱ্যাবের হাতে গ্রেফতারকৃত সেন সুমনকে মাগুরায় নিয়ে আসা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত এ মামলায় ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে অন্যতম আলী হোসেন ও আজিবর হোসেনকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২৩ জুলাই বৃহস্পতিবার মাগুরা শহরের দোয়ারপাড় এলাকায় যুবলীগের সমর্থক দু গ্রুপের সংঘর্ষে অন্তঃসত্ত্বা নাজমা খাতুনসহ চারজন গুলিবিদ্ধ হন। ওই রাতেই মাগুরা সদর হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পৃথিবীর মুখ দেখে গুলিবিদ্ধ বুলেটকন্যা। শুক্রবার রাতে মারা যান গুলিবিদ্ধ মমিন ভূঁইয়া।