অলিম্পিকে বাংলাদেশের স্বর্ণপদক বিরল, বিশেষ অলিম্পিকেও। এবারের আমেরিকা বিশেষ অলিম্পিকে লং জাম্পে স্বর্ণ আর ১শ মিটার তড়িত দৌড়ে রৌপ্যপদক পেয়েছে স্বর্ণালী সুইটি। সে চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের শোলমারীর সন্তান। তার পিতা সেনাসদস্য। স্বর্ণালী ঢাকা মহাখালীর প্রয়াস প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী। বাকপ্রতিবন্ধী হলেও স্বর্ণালী সুইটি বহু প্রতিভার অধিকারী। তার কৃতিত্ব এখন বিশ্বস্বীকৃত। শিশু স্বর্ণালী সুইটি বিশেষ অলিম্পিকে স্বর্ণপদক লাভ করেছে। তার এ অর্জন অনেক বড়। অসামান্য ওই অর্জনে তাকে অবশ্যই অভিবাদন।
দেশে জনসংখ্যা বিস্ফোরণের ভয়াবহ বিরূপ প্রভাব সর্বত্র। হারিয়ে যাচ্ছে খেলার মাঠ, আবাদি জমি গ্রাস করছে মানুষ। শহর, শহরতলী ভরে উঠছে কংক্রিটের জঙ্গলে। বন-বাদাড় যেন গো-গ্রাসে গিলছি আমরা। উজাড় হচ্ছে চক্রবৃদ্ধি হারে। পরিবেশ হারাচ্ছে ভারসাম্য। এরই মাঝে একজন বাকপ্রতিবন্ধী শিশুর লং জাম্পে স্বর্ণ লাভ তথা বিশ্ব জয় কতোটা প্রত্যয়ীর সুফল তা অনুমান করাও কঠিন। অবশ্য শিশু স্বর্ণালী সুইটি ঢাকায় বসবাসের সুবাদে তার উপযোগী বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পেরেছে। বিকেএসপির মতো দেশের ঐতিহ্যবাহী ক্রীড়া প্রশিক্ষণ কেন্দ্রেও তার প্রশিক্ষণের সুযোগ হয়েছে। স্বর্ণালী চুয়াডাঙ্গার যে গ্রামের সন্তান, সেই গ্রামে থাকলে তার এ প্রতিভা বিকাশ দূরের কথা, চুয়াডাঙ্গা শহরে বসবাস করলেও তা সারাটাজীবনই দুঃস্বপ্ন হয়ে থাকতো। এ ক্ষেত্রে স্বর্ণালীর পিতা-মাতাকে বিশেষভাবে স্মরণ করতেই হয়। সন্তানের প্রতিভা বিকাশে যথাসময়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ সুফল বয়ে আনতে বাধ্য। স্বর্ণালীর পিতা-মাতার সন্তানের প্রতি সচেতন দায়িত্বশীলতা অবশ্যই অভিভাবক সমাজকে সন্তানের প্রতি কর্তব্যপরায়ন করতে সহায়ক হবে। তবে অবশ্যই সুযোগ সৃষ্টিতে সরকারের অনেক অনেক আন্তরিক হতে হবে। কেননা সকল অভিভাবক সন্তানকে তো ঢাকায় রেখে প্রতিভা বিকাশের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারবে না, সম্ভবও নয়। বিকেএসপির মতো প্রতিষ্ঠান দেশে ছড়াতে হবে, প্রতিবন্ধী শিক্ষালয় গড়ে তোলার যাবতীয় ব্যবস্থা করতে হবে। এটা সরকারের দায়িত্বেরই অংশ বটে।
শারীরিক মানসিক প্রতিবন্ধীরা অবশ্যই সমাজের বোঝা নয়। ওরাও মানুষ। ওদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার যেমন অধিকার রয়েছে, তেমনই ওদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ সৃষ্টি করা মানে দয়া দেখানো নয়। প্রতিবন্ধী সন্তানকে অবহেলার দৃষ্টিতে দেখে তাকে আরো বেশি অবনতির দিকে ঠেলে দেয়া কোনো দায়িত্বশীল অভিভাবকের কাজ নয়। স্বর্ণালী সুইটি দেশের জন্য যে গৌরব বয়ে এনেছে তা কখনোই সম্ভব হতো না, যদি তার পিতা-মাতা দায়িত্বশীলতার পরিচয় না দিতেন। বিশেষ অলিম্পিকে স্বর্ণজয়ী স্বর্ণালী ও তার অভিভাবকসহ প্রশিক্ষকদের আবারও অভিনন্দন।