ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে রইলো যে বিয়ে!

 

স্টাফ রিপোর্টার: চারদিকে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। ৬৮ বছরের বন্দিদশার অবসান ঘটায় ভূবন কাঁপানো আনন্দে মাতোয়ারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরের ছিটমহলবাসীরা। ঘড়ির কাঁটা রাত ১২টা ১ মিনিট ছোঁয়ার সাথে সাথে রাতের আঁধার ঠেলে দেয় মোমবাতি আর মশালের আলো। গগনবিদারী স্লোগান ওঠে বাংলাদেশ, বাংলাদেশ। এর মধ্যে ১৩২ নম্বর ছিটে ঘটে আরো একটি স্মরণীয় ঘটনা। ৩১ জুলাই নিজের জন্মদিনের সাথে ইতিহাসকে সাক্ষী রেখে ১৩২ ছিটমহলের বাসিন্দা রতন মিয়া সেরে ফেললেন বিয়েটাও।

রাত ১২টা এক মিনিট বাজার সাথে সাথে ৬৮টি মোমবাতি ও ৬৮টি মশাল জ্বালিয়ে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করলেন লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলায় অবস্থিত ২০ নম্বর লতাবাড়ি ছিটমহল ও হাতীবান্ধা উপজেলার গোতামারী ছিটমহলের বাসিন্দারা। এসময় আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠেন ছিটবাসিরা। মধ্যরাতে তাদের এদেশের নাগরিক হিসেবে বরণ করতে জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতারা উপস্থিতি ছিলেন এসব ছিটমহলে।

এ সময় হাতীবান্ধা উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি লিয়াকত আলী বাচ্চু গোতামারী ছিটমহলের প্রবীন বাসিন্দা ছব্বর আলীর হাতে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা তুলে দেন। এরপর শুরু হয় সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর পরিবেশনা দেশাত্ববোধক গানের আসর। লালমনিরহাট জেলায় অবস্থিত ১৩১ ও ১৩২ বাঁশকাটা, ভোটবাড়ি সহ অন্যান্য ছিটমহলগুলোতেও চলছে আনন্দ ও উচ্ছাস। এর মধ্যে ১৩২ নম্বর ছিটমহলে গিয়ে চোখ আটকে যায়। এই ছিটমহলে জন্ম নিয়ে গত ২৪ বছর ধরে কাটিয়েছেন টগবগে তরুন মোহাম্মদ রতন মিয়া। ছিটমহল বিনিময়ের দিনক্ষন নির্দিষ্ট হয়ে যাওয়ায় সে নিজের বিয়ের তারিখটাও করে ফেলেন একই দিনে। এদিকে ৩১ জুলাই ছিল রতনের জন্ম দিন। এই তারিখে মধ্যরাত ১২টা ১ মিনিটে নতুন বাংলাদেশি নাগরিক হবেন। ছিটমহল শব্দটি জীবন থেকে মুছে যাবে। এসব কারণ স্মরণীয় করে রাখতে রতন মিয়া বাবা মনছার আলী ও মা অসভা বেগমের কাছে বায়না ধরেন, এই তারিখেই নিজের বিয়েটাও করবেন। একমাত্র ছেলে সন্তান রতনের বায়না পূরণে পাটগ্রাম পৌর এলাকার নুর আলম ও রনজিনা খাতুনের তৃতীয় মেয়ে নুরফা বেগমের সাথে শুক্রবার রাতে মহাআনন্দে বিয়ে দেন।

মোহাম্মদ রতন মিয়ার কাছে অনুভূতি জানতে চাইলে বলেন, আমরা গরিব মানুষ। পড়ালেখা করতে পারি নাই। ৩১ জুলাই আমার জন্ম দিন ছিল। গত ২৪টি বছর ছিটমহল যন্ত্রণায় সামাজিকভাবে দগ্ধ ছিলাম। এই দিনে মধ্যরাতে আমরা নতুন বাংলাদেশি হবো যেনে বাবা-মাকে বলে আমি বিয়ের দিনও ঠিক করি। তাই আজ আমার বিয়ে। জীবনে দিনটি স্মরণীয় করে রাখতেই এই সিন্ধান্ত ছিলো আমার।

এ তো গেলো রতনের জীবনে বাড়তি কিছু আনন্দ-উল্লাস। সেই আনন্দ উল্লাস যেন পাশের ১৩১ নম্বর বাঁশকাটা ছিটমহলেও আঁচড়ে পড়েছিলো। এজন্যই বিয়েতে সবাই নেচে-গেয়ে আনন্দ উল্লাস প্রকাশ করে। সেখানে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে আসেন প্রতিবেশীরাও। ঐতিহাসিক এ শুভ ক্ষণটিকে রতন-নুরফার বিয়ের ঘটনাটি আলোড়িত করে তুলেছে ছিটমহলবাসীদের। বাধভাঙ্গা এ আনন্দের মাঝে তাদের এ বিয়ের অনুষ্ঠান যেন ৬৮ বছরের নানা বঞ্চনার শিকার ছিটমহলবাসীদের নতুন জীবনে প্রবেশের বাসররাতের অনাবিল আনন্দের প্রতীক হিসেবে স্মরণীয় থাকবে।

Leave a comment