দিনমজুরের স্ত্রীকে ধর্ষণ করতে গেলে তার ক্ষুব্ধ স্বামী ছোটকে কুপিয়ে ঘায়েল করে

পুলিশ বলছে দামুড়হুদার যুবলীগ নেতা আব্দুল হান্নান ছোটর বক্তব্য সঠিক নয় : কোনো দুর্বৃত্ত তাকে কোপায়নি

স্টাফ রিপোর্টার: দুর্বৃত্তদের হাতে নয়, ধর্ষণ করতে গিয়েই ঘায়েল হয়েছেন দামুড়হুদার যুবলীগ নেতা আব্দুল হান্নান ছোট। লোকলজ্জার ভয়ে তিনি আসল ঘটনা আড়াল করে দুর্বৃত্তদের দোহাই দিয়ে ঘটনাকে অন্যদিকে চালান করতে চাইছিলেন। কিন্তু পুলিশ তার মুখোশ খুলে দিয়েছে। পুলিশ বলেছে, রাঙ্গিয়ারপোতা গ্রামের অসহায় দরিদ্র এক গৃহবধূকে তিনি ধর্ষণ করতে গিয়েছিলেন। তার ক্ষুব্ধ স্বামী ধারালো হেঁসো দিয়ে ছোটকে কুপিয়ে ঘায়েল করেছেন। ওই গৃহবধূকে ধর্ষণের উদ্দেশে জাপটে ধরলে তার চেঁচামেচি শুনে ক্ষুব্ধ স্বামী ছোটকে উপর্যুপরি কুপিয়ে ঘায়েল করেন।

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক ও দর্শনা পৌরসভার শ্যামপুরের মরহুম তনু মল্লিকের ছেলে আব্দুল হান্নান ছোট (৪৭) গত বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে রক্তাক্ত অবস্থায় ভর্তি হন। ছোট সেসময় জানান, ‌তিনি রাঙ্গিয়ার পোতা গ্রামের পাশে বাঁওড়ে ‘মাছ’ দেখতে গিয়েছিলেন। সিংনগর ব্রিজের কাছে এলে একদল দুর্বৃত্ত তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করে চলে যায়। এরপর তাকে স্থানীয় জনসাধারণ উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসে। আব্দুল হান্নান ছোটর ফাঁদা কাহিনি বিশ্বাসে না নিয়ে দামুড়হুদা ও চুয়াডাঙ্গা পুলিশ প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনের জন্য তদন্ত শুরু করে। আর এই তদন্তেই বেরিয়ে আসে আসল রহস্য।

চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ লিয়াকত হোসেন জানান, দামুড়হুদা উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল হান্নান ছোট ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত হওয়ার পর পুলিশের পক্ষ থেকে তদন্ত শুরু হলে প্রকৃত রহস্য উদঘাটিত হয়। প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, ঘটনার সময় সদর উপজেলার রাঙ্গিয়ারপোতা গ্রামের পাশে বাঁওড়ে তিনি রাতে মাছ দেখতে যাননি। ওই সময় বাঁওড়ের পাশে হতদরিদ্র এক দিনমজুরের স্ত্রীর (৩০) ঘরে ঢুকে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করেন আব্দুল হান্নান ছোট। ওই গৃহবধূকে জাপটে ধরলে তার চিৎকার শুনে পাশের রান্নাঘরে ঘুমিয়ে থাকা স্বামীর ঘুম ভেঙে যায়। ক্ষুব্ধ স্বামী বিষয়টি বুঝতে পেরে ধারালো হেঁসো নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে ছোটর ওপর। ছোটকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করা হয়। এই অস্ত্রাঘাতেই যুবলীগ নেতা ছোট জখম হন। তাকে কোনো দুর্বৃত্ত কুপিয়ে জখম করেনি। সদর থানার ওসি আরো জানান, ধর্ষণ চেষ্টার শিকার গৃহবধূ যদি মামলা করে তাও গ্রহণ করা হবে। দর্শনা পৌরসভার শ্যামপুর এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অবিবাহিত যুবলীগ নেতা আব্দুল হান্নান ছোটর বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহস পায় না। মামলা, হামলা ও হয়রানির ভয়ে কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খোলে না। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন যুবলীগ নেতা আব্দুল হান্নান ছোট আগের কথা পাল্টে নতুন অভিযোগ করেছেন। তিনি গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গার সাংবাদিককে বলেন, রাঙ্গিয়ারপোতা গ্রামের কাউসার বেশ কিছুদিন আগে আমার কাছে ১ লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছিলো। বৃহস্পতিবার রাতে আমাকে দেখে পুনরায় চাঁদা চায়। আমি না দিলে সাথে সাথে আমার ওপর ধারালো অস্ত্র নিয়ে কাউসার হামলে পড়ে। তবে ঘটনার দিন রক্তাক্ত জখম আব্দুল হান্নান ছোট বলেছিলেন ব্রিজের কাছে একদল দুর্বৃত্ত তাকে কুপিয়েছে। তিনি এও বলেছিলেন, দর্শনায় যুবলীগের গ্রুপিং আছে। এ কারণেই প্রতিপক্ষের কেউ তাকে কুপিয়ে জখম করে থাকতে পারে। মামলার বিষয়ে, চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি লিয়াকত হোসেন মাথাভাঙ্গাকে জানান, এখনো কেউ মামলা করেনি। আজ মামলা হতে পারে। যে ঘটনা তাতে দু পক্ষই মামলা করতে পারবে।

Leave a comment