সরকারের সায় মিললে রূপরেখা দেবে বিএনপি

স্টাফ রিপোর্টার: আগাম নির্বাচনের বিষয়ে সরকার সম্মত হলে বিএনপি রূপরেখা ঘোষণা করবে। এর আগে জোটের নেতাদের সাথে আলোচনা করে সব বিষয় চূড়ান্ত করবে দলের হাইকমান্ড। এই পরিকল্পনা থেকে শর্তসাপেক্ষে বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির অধীনে নির্বাচনে যেতে বিএনপিকে ইতিবাচক পরামর্শ দিচ্ছেন দলটির থিঙ্কট্যাঙ্করা। বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাথে আলোচনাও করেছেন তারা।

দল ও জোটের নেতারা বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার কৌশল নিয়ে ভাবছে বিএনপির থিঙ্কট্যাঙ্করা। কেউ কেউ তাদের নিজস্ব মতামতও দিচ্ছেন। বিষয়টি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলার মতো সময় হয়নি। শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতি কি দাঁড়ায় তার ওপর নির্ভর করবে সবকিছু। সেই পরিস্থিতিতেই নেয়া হবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।

শনিবার রাতে এক মতবিনিময় সভায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেন, তত্ত্বাবধায়ক না হোক, যে কোনো নামে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ মধ্যবর্তী নির্বাচন চায় তার দল। রোববার দলের থিঙ্কট্যাঙ্ক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, বর্তমান সরকারের রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর অধীনেও নির্বাচনে যেতে আপত্তি নেই বিএনপির। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসা দলটি হঠাৎ করে তাদের অবস্থান থেকে সরে আসায় রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে নানা ধরনের আলোচনা। বিএনপি ও তাদের শরিকরাও খালেদা জিয়ার এই বক্তব্য নিয়ে বিশ্লেষণ শুরু করেছেন। দলের অধিকাংশ নেতাই চেয়ারপারসনের এমন ঘোষণাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তারা মনে করেন, বিএনপি একটি নির্বাচনমুখী দল। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের নিশ্চয়তা পেলে তারা অবশ্যই নির্বাচনে যাবে। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার কিভাবে গঠন হতে পারে সেই ব্যাপারে ক্ষমতাসীনদের কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ সরকার ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে না এলে অন্যরা কে কি বলল তাতে কিছুই হবে না।

তারা আরও বলেন, সরকার যদি আগাম বা মধ্যবর্তী নির্বাচন দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় তাহলেই বিএনপির পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে একটি রূপরেখা দেয়া হতে পারে। সেই রূপরেখার আলোকে সব দলের সাথে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে। যাতে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে কারও কোনো আপত্তি না থাকে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, দলের চেয়ারপারসন অত্যন্ত ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এই ধরনের ঘোষণা দিয়েছেন। সরকারের উচিত হবে সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আয়োজন করা।

তিনি বলেন, আমরা চাই না নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাঁড়ি, কমা, কোলন হুবহু মিল করে নির্বাচনকালীন সরকার করতে হবে। আমাদের দাবি হচ্ছে, এমন একটা নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা, যার অধীনে সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে যেতে সম্মত হবে। ওই সরকারের ভূমিকা নিয়ে কারও কোনো প্রশ্ন থাকবে না। শর্তসাপেক্ষে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ নিয়ে থিঙ্কট্যাঙ্কদের কেউ কেউ মতামত তুলে ধরলেও দলীয় ফোরামে এখনও কোনো আলোচনা হয়নি। আর নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা কার্যপ্রণালি কেমন হবে তা সব দলের আলোচনার ভিত্তিতেই চূড়ান্ত করা হবে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আমরা সব সময়ই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের কথা বলে আসছি। ম্যাডাম আবারও সেই কথাই বলেছেন। তবে নির্বাচনকালীন সরকারে যারা থাকবেন তাদের নিরপেক্ষ হতে হবে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক জাগপার সভাপতি শফিউল আলম প্রধান বলেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হুবহু আদলে তো করা আর সম্ভব নয়। জোটনেত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন তা বাস্তবমুখী। জানতে চাইলে ২০ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, জোটনেত্রী এর আগেও এমন দাবি জানিয়েছেন। সম্প্রতি তার বক্তব্যকে আমি ইতিবাচক হিসেবেই দেখছি। নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান কে হবেন তার চেয়ে বড় হচ্ছে তার ভূমিকা নিরপেক্ষ কিনা। কয়েকটি শর্তে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনে বিএনপি জোট নির্বাচনে যেতে পারে এমন আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিষয়টি রাজনৈতিক। কোনো থিঙ্কট্যাঙ্ক বা অন্য কেউ কি বলল তাতে কিছু হবে না। রাজনৈতিকভাবে বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে এবং রাজনীতিবিদদেরই এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে।

জোটের এই নেতা আরও বলেন, নানা কারণে বিএনপি জোট যেমন নির্বাচন চাচ্ছে আওয়ামী লীগেরও উচিত সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। কারণ মাগুরার এক উপনির্বাচন নিয়ে বিএনপিকে যদি এখনও অস্বস্তিতে থাকতে হয় তবে ৫ জানুয়ারি বিনা ভোটে ১৫৩ জন নির্বাচিত হওয়ার অস্বস্তিও আওয়ামী লীগকে দীর্ঘদিন বহন করতে হবে। তাই দ্রুত একটি নির্বাচন দিলে উভয়ই উইন উইন সিচুয়েশনে থাকবে বলে মনে করেন পার্থ।

জোটের আরেক শরিক ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ নেজামী বলেন, শর্তসাপেক্ষে প্রধানমন্ত্রীর অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যেতে পারে এই নিয়ে বুদ্ধিজীবীরা তাদের মতামত দিতেই পারেন। কিন্তু জোটগতভাবে এখনও কোনো আলোচনা হয়নি। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে এমন প্রমাণ তারা কখনও দিতে পারেনি। তাই তারা নিরপেক্ষ নির্বাচন দেবেন এটা বললেও সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করবে না। তবে ভবিষ্যতে রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সব দল মিলে একটি সিদ্ধান্তে আসা গেলে নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে বলে জানান তিনি।