মেহেরপুর গাংনীর পীরতলা পুলিশ ক্যাম্পের কনস্টেবল আলা উদ্দীনের দাফন সম্পন্ন
গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর গাংনীর পীরতলা পুলিশ ক্যাম্পের কনস্টেবল আলা উদ্দীন (৩২) হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ব্যবহৃত মাইক্রোবাসটি উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল শনিবার ভোরে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার বারইপাড়া গ্রামের একটি বাঁশবাগান থেকে মাইক্রোবাসটি উদ্ধার করে পুলিশ। আত্মগোপনে রয়েছে মাইক্রোবাসচালক ও যাত্রীবেশী দুর্বৃত্তরা। গতকালই নিহতের মরদেহ নিজ গ্রামে দাফন সম্পন্ন হয়েছে। নিহত আলা উদ্দীন খলিশাকুণ্ডি গ্রামের মৃত রতন সর্দ্দারের ছেলে।
মেহেরপুর সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ঘটনার পর থেকেই বিভিন্ন স্থানে অভিযান চলছিলো। অভিযানের এক পর্যায়ে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বারইপাড়া গ্রামে অভিযান চালানো হয়। এ সময় ওই গ্রামের আনিছের বাড়ির অদূরবর্তী একটি বাঁশবাগান থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় মাইক্রোবাসটি (কুষ্টিয়া-চ-০২-০০১১) উদ্ধার করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে রাতে ঘটনার পর মাইক্রোবাসটি ফেলে পালিয়ে যায় মালিক আনিসসহ তার সঙ্গীয় মাদকব্যবসায়ীরা। মাইক্রোবাসটি হত্যাকাণ্ডের সাক্ষ্য হিসেবে আটক দেখিয়ে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নেয়া হয়েছে। আনিছের ঘনিষ্ঠ দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এদিকে গতকাল জোহরের নামাজের পর মেহেরপুর পুলিশ লাইনে নিহতে প্রথম জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। পুলিশ সদস্যবৃন্দ ছাড়াও জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের অন্য দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ জানাজায় অংশগ্রহণ করেন। জানাজা নামাজ শেষে কান্নায় ভেঙে পড়েন পুলিশের অনেকেই। ঘটনাটি মর্মান্তিক উল্লেখ করে নিহত আলা উদ্দীনের ভূমিকা চির অম্লান হয়ে থাকবে বলে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন তারা। জীবন বাজি রেখে দুর্বৃত্তদের ধরতে আলা উদ্দীন যে সাহসী কাজটি করছে তা কোনো দিনও ভোলার নয়। নিহত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করে তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয়। মেহেরপুর পুলিশ লাইনে জানাজা শেষে নিহতের মরদেহ নেয়া হয় তার পৈত্রিক গ্রাম খলিশাকুণ্ডিতে। সেখানে হাজারো মানুষের অংশগ্রহণে দ্বিতীয় জানাজা নামাজ শেষে সন্ধ্যায় দাফন সম্পন্ন হয়। ঘটনার পর থেকে শোকে মুহ্যমান পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি শোকের ছায়া ছড়িয়ে পড়ে এলাকার মানুষের মাঝে।
কনস্টেবল আলা উদ্দীন হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি গতকালও ছিলো মানুষের মুখে মুখে। ঘটনাস্থল এলাকা সাহেবনগর, কাজিপুর ও হাড়াভাঙ্গা এলাকায় উৎসুক মানুষেরও ঢল নামে। পুলিশের কয়েকটি দল গতকাল সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। যদি মাইক্রোবাসটি আটকের মধ্যদিয়ে ঘটনার সাথে জড়িতদের সম্পর্কে খুব কাছাকাছি অবস্থান করছে পুলিশ। তবে এলাকার মানুষের মাঝে নানা প্রশ্ন ও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। ফেনসিডিলের উৎস ও এর সাথে এলাকার কোনো শ্রেণির মানুষের সম্পৃক্তরা রয়েছে তা-ই ছিলো আলোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দু। ঘটনার পর থেকে এলাকার কয়েকজন শীর্ষ মাদকব্যবসায়ী ও মাদক পাচারকারীদের নাম বারবার উচ্চারিত হচ্ছে নানান সন্দেহ নিয়ে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সাথে এলাকার মাদকব্যবসায়ীদের সম্পৃক্ত থাকতে পারে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। অবশ্য ঘটনার পর থেকে কাজিপুর, হাড়াভাঙ্গা ও বামন্দী এলাকার শীর্ষ মাদকব্যবসায়ীরা গাঢাকা দিয়েছে বলে এলাকার কয়েকটি সূত্রে জানা গেছে। এদের দু-একজনকে আটক করে জিজ্ঞাবাসাদ করলেই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলবে বলে মনে করছেন এলাকার উৎসুক মানুষের একটি বড় অংশ। মাদক নিয়ন্ত্রণে নিহত আলা উদ্দীনের ভূমিকা মানুষের মাঝে চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে বলেও জানান এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। পুলিশ বিভাগের মতোই এলাকার মানুষের মাঝে শোক বিরাজ করছে। অনেকেই আলা উদ্দীনকে বীর হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকরাম হোসেন জানান, মাইক্রোবাস উদ্ধারের মধ্যদিয়ে হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য, হত্যকারী ও তাদের নেটওয়ার্ক সম্পর্কে পুলিশের কাছে অনেক কিছুই পরিষ্কার হয়ে গেছে। স্বল্প সময়ের মধ্যে হত্যাকারীদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে। হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে গাংনী থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার রাত পৌনে আটটার দিকে গাংনী উপজেলার সাহেবনগর নামক স্থানে সঙ্গীয় পুলিশ সদস্যদের সাথে একটি মাইক্রোবাস থামায় কনস্টেবল আলা উদ্দীন। এ সময় মাইক্রোবাসের যাত্রীবেশী দুর্বৃত্তরা তাকে মাইক্রোবাসের মধ্যে তুলে নিয়ে আঘাত করে কিছু দূরে ফেলে সটকে পড়ে। রক্তাক্ত জখম অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত দশটার দিকে আলা উদ্দীনের মৃত্যু হয়। আলা উদ্দীনকে তুলে নেয়ার পর সম্ভাব্য বিপদের আশঙ্কায় মাইক্রোবাস থেকে দু বস্তা ফেনসিডিল সড়কের পাশে ফেলে দেয় মাইক্রোবাসের যাত্রীবেশী মাদকব্যবসায়ীরা।