সড়ক দুর্ঘটনা : মৃত্যুর মিছিলে আরো ২৬ জন

স্টাফ রিপোর্টার: পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার কমপক্ষে ২৬ জন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। রাজধানীসহ গাজীপুর, টাঙ্গাইল, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও মাগুরা জেলায় এসব দুর্ঘটনা ঘটে।

রাজধানীর কল্যাণপুর এলাকায় বাসের ধাক্কায় এমএ হায়াত (২৭) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। নিহত এমএ হায়াত বগুড়া সদর উপজেলার মো. ইউসুফ উদ্দীনের ছেলে। তিনি রাজধানীর কল্যাণপুর এলাকায় থাকতেন এবং মতিঝিলে একটি আইটি ফার্মে চাকরি করতেন। জানা যায়, দুপুরে কল্যাণপুর এলাকায় একটি বাসের ধাক্কায় হায়াত গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে আনেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যায় তার মৃত্যু হয়।

ঢাকা-জয়দেবপুর-টঙ্গী রুটের ধীরাশ্রম স্টেশনের অদূরে হায়দরাবাদ এলাকায় অবস্থিত রেলক্রসিঙে ডেমু ট্রেনের ধাক্কায় একটি টেম্পুর আট যাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৭ জন একই পরিবারের। অপরজন টেম্পুচালক বলে জানা গেছে। বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। টঙ্গী রেলওয়ে ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আলাউদ্দিন জানান, ঘটনার সময় একটি যাত্রীবাহী ইজিবাইক রেললাইন ক্রস করছিলো। ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা ডেমু ট্রেনটি ইজিবাইকটিকে ধাক্কা দিলে সেটি রেললাইন থেকে ছিটকে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই ইজিবাইকে থাকা আট যাত্রী নিহত হন। ট্রেনটি দুর্ঘটনাস্থল অতিক্রম করে গন্তব্যে চলে যায়। তিনি জানান, রেলক্রসিংটি অননুমোদিত হওয়ায় কোনো সিগন্যাল বার ছিলো না। এদিকে জয়দেবপুর রেলওয়ে পুলিশ ক্যাম্পের এসআই ফিরোজ হোসেন জানান, নিহতদের মধ্যে ৪ জন পুরুষ, দুজন নারী ও দুজন শিশু রয়েছে।

ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের বাসাইলে ঢাকাগামী একটি যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে আট যাত্রী নিহত ও ২৫ জন আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে তিনটায় উপজেলার বাঐখোলা নামক স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে। মির্জাপুর গোড়াই হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবির জানান, বিকেলে ধনবাড়ি থেকে ঢাকাগামী বিনিময় পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস ঘটনাস্থলে পৌছুলে চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। এতে বাসটি মহাসড়কের পাশে খাদে পড়ে গেলে ঘটনাস্থলেই আট যাত্রীর মৃত্যু হয়। এ সময় আরো ২৫ যাত্রী আহত হয়। আহতদের মির্জাপুর কুমুদিনী ও টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে ৪ জনের অবস্থা আশঙ্কা জনক বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। টাঙ্গাইল ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট দুর্ঘটনা কবলিত বাস ও যাত্রীদের উদ্ধার তৎপরতা বিকেল সাড়ে ৪টায় শেষ করে। এ সময় বাসটির ভেতরে আটকে পড়া অপর ২ যাত্রীর লাশ পাওয়া গেছে।

সিলেটের ওসমানীনগরে যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে ঘটনাস্থলে মহিলাসহ ৩ জন নিহত ও ২৫ জন আহত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের ব্রা‏হ্মণগ্রাম এলাকায় দুর্ঘটনাটি ঘটে। নিহতরা হচ্ছেন- হবিগঞ্জের নোয়াগাঁও গ্রামের সুজানা বেগম (৩৫) এবং মিন্নি বেগম (৩০)। তবে দ্বিখণ্ডিত হয়ে নিহত হওয়া যুবকের পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে সে দুর্ঘটনাকবলিত বাসের হেলপার ছিলো। গুরুতর আহতদের সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

জানা যায়, ব্রা‏হ্মণবাড়িয়া থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী যুগান্তর পরিবহনের (ঢাকা মেট্রো-জ ১১-০৮৭৭) দ্রুতগতীর যাত্রীবাহী বাসটি ব্রা‏‏হ্মণগ্রাম এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মহাসড়কের পাশের একটি খাদে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনজন মারা যান। খবর পেয়ে তাজপুর ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌছে নারী-শিশুসহ অনন্ত ১০ জনকে গুরুতর অবস্থায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। বাকিদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়। ওসমানীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুরসালিন জানান, ঘটনাস্থলেই নারীসহ ৩ জন নিহত হয়েছেন। পুলিশ তাদের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ওসমানী হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাসচাপায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার দু যাত্রী নিহত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার গুগদ (ইসলামাবাদ) নামক স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- হবিগঞ্জের মাদবপুর উপজেলার ধর্মঘর এলাকার এনামুল হকের ছেলে ইমজামামুল হক (২২) ও ব্রাক্ষণবাড়িয়া সদর উপজেলার ঘাটুরা এলাকার দরবেশ আলী (৪০)।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী শ্যামলী পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস সরাইল উপজেলার ইসলামবাদ নামক স্থানে পৌঁছালে মাধবপুর থেকে ছেড়ে আসা ব্রাহ্মণবাড়িয়াগামী অপর একটি যাত্রীবাহী সিএনজিচালিত অটোরিকশাকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই সিএনজিচালিত অটোরিকশার দু যাত্রী মারা যান। এ ঘটনায় আরো তিনজন আহত হয়েছেন।

হাটিহাতা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. জাহাঙ্গীর আলম দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, নিহতদের মরদেহ পুলিশ ফাঁড়িতে আনার পর জেলা সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। এদিকে মাগুরা-ফরিদপুর মহাসড়কের মাগুরা সদর উপজেলার কছুন্দী এলাকায় বৃহস্পতিবার বিকেলে সড়ক দুঘটনায় দু মোটরসাইকেল অরোহী নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার সীতারামপুর গ্রামের একরাম হোসেনের ছেলে ভূষিমাল ব্যাবসায়ী শামছুর রহমান শামীম (২৯) ও একই এলাকার গাড়াখোলা গ্রামের কুরবান আলীর ছেলে গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ওবাইদুর (২৭)।

মাগুরা সদর থানা পুলিশের এটিএসআই কুমারেশ চন্দ্র জানান, ফরিদপুর থেকে মাগুরামুখি একটি অ্যাপাচি মোটরসাইকেলের সাথে বিপরীতমুখি একটি যাত্রীবাহী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এ সময় মোটরসইকেলটি রাস্তার ওপর ছিটকে পড়ে ঘটনাস্থলেই শামীম ও ওবাইদুর নামে দু আরোহী নিহত হন। দুর্ঘটনার পর চালক দ্রুত বাসটি নিয়ে পালিয়ে যান, যে কারণে ঘাতক বাসটি কোন কোম্পানির তা পুলিশ বা স্থানীয়রা শনাক্ত করতে পারেনি। ঘাতক বাস ও তার চালকের পরিচয় নিশ্চিতের পাশাপাশি মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান এটিএস আই কুমারেশ।

Leave a comment