ঢাকায় জামিন জালিয়াতিতে পেশকার গ্রেফতার : পালিয়েছে পিয়ন

ঢাকা অফিস: জালিয়াতির মাধ্যমে শতাধিক দুর্ধর্ষ আসামিকে জামিনে মুক্তি দেয়ার ঘটনায় ঢাকা মহানগর দ্বিতীয় অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতে কর্মচারীরা জড়িত। বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর মামলার নথি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর গতকাল রোববার সংশ্লিষ্ট দু কর্মচারীসহ অজ্ঞাত পরিচয় সহযোগীদের বিরুদ্ধে ঢাকার কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা করার পর পুলিশ ওই আদালতের পেশকার মো. মোসলেহ উদ্দিনকে গ্রেফতার করেছে। অন্য আসামি পিয়ন শেখ আবু মো. নইম গতকাল সকালে আদালতে গেলেও কিছুক্ষণের মধ্যেই পালিয়ে যায়। পুলিশ তাকে খুঁজছে।

সম্প্রতি ঢাকা মহানগর দ্বিতীয় অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন বেশ কিছু মামলার শতাধিক আসামি কারাগার থেকে মুক্তি পায়। জানা যায়, ওই আদালতের বিচারকের সই জাল করে ভুয়া জামিননামা তৈরি করে কারাগারে পাঠানোর পর মুক্তি পায় ওই সব আসামি। পরে মামলার ধার্য তারিখে আসামিদের কারাগার থেকে আদালতে হাজির না করায় বিষয়টি আদালতের নজরে আসে। এ ঘটনায় ওই আদালতের পিয়ন শেখ আবু মো. নইমকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। গতকাল এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর আদালত এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় হয়। পরে সিদ্ধান্ত হয় সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বিকেলে ঢাকা মহানগর দায়রা আদালতের প্রশাসনের পক্ষে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া জামিননামা কারাগারে পাঠিয়ে আসামিদের মুক্তির ব্যবস্থা করে অবৈধ অর্থ উপার্জনের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়।

এজাহার সূত্রে জানা যায়, ওই আদালতের পেশকার মো. মোসলেহ উদ্দিন ও পিয়ন শেখ আবু মো. নইম পরস্পর যোগসাজশে মামলার তদবিরকারকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ভুয়া জামিননামা তৈরি করেন। তারা ওই আদালতের বিচারকের সই জাল করে আসামিদের জামিনে মুক্তি দেয়ার আদেশ কারাগারে পাঠান। এ জন্য জাল-জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয় তাঁদের বিরুদ্ধে। এদের সাথে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদেরও আসামি করা হয়েছে, যারা জাল-জালিয়াতিতে এদের সহযোগিতা করেছে।

ওই আদালতের পিয়ন আবু নইম অত্যন্ত প্রভাবশালী। এক শ্রেণির আইনজীবীর সাথে যোগসাজশ করে এমন জাল-জালিয়াতির ঘটনা আগেও ঘটিয়ে পার পেয়ে গেছে সে। আদালত এলাকায় প্রচলিত আছে, নইম পারে না এমন কোনো কাজ নেই। সে এখন কোটিপতি। এ কারণে সে প্রভাবশালী। তার ভয়ে ওই আদালত সংশ্লিষ্ট কর্মচারীরা কখনো তার বিরুদ্ধে কথা বলেন না।

জালিয়াতির মাধ্যমে দুর্ধর্ষ আসামিদের জামিনে মুক্তি দেয়ার প্রক্রিয়ার সাথে এক শ্রেণির আইনজীবীও জড়িত বলে জানা গেছে। যেসব জামিননামায় বিচারকের স্বাক্ষর জাল রয়েছে ওই সব জামিননামায় আইনজীবীদের স্বাক্ষর রয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে।

ঢাকার আদালতের আইনজীবী মোহাম্মদ হেলাল চৌধুরী বলেন, আইনজীবীদের সহযোগিতা ছাড়া এসব জালিয়াতি করতে আদালতের কর্মচারীরা সাহস পাবে না। এসব তদন্ত করে যারা এ প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত তাদের গ্রেফতার করা উচিত। ফৌজদারি মামলা পরিচালনাকারী এ আইনজীবী বলেন, এ ধরনের জালিয়াতির ঘটনায় বিচারকও তার দায় এড়াতে পারেন না। শতাধিক আসামি একদিনে মুক্তি পায়নি। ধাপে ধাপে মুক্তি পেয়েছে। এটা বিচারকের নজরে আসা উচিত ছিলো।

Leave a comment