সেহরি ও ইফতার লাইনে বসেই : টাকা দিয়ে টোকাই বসিয়ে নামাজ আদায়

স্টাফ রিপোর্টার: ট্রেনের অগ্রিম টিকেটের জন্য কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে দিন-রাত কাটাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। কাউন্টারের সামনে সারি সারি লাইন। এ লাইন প্লাটফর্ম ছেড়ে কখনও বা পৌঁছায় রাস্তায়। লাইনে বসেই ইফতার ও সেহরি করতে দেখা গেছে অনেককেই।

লাইনের পাশে দাঁড়িয়ে কেউ কেউ নামাজ আদায় করেছেন। মসজিদে যারাই গিয়েছেন, ৫০ কিংবা ১০০ টাকার বিনিময়ে স্টেশনে থাকা টোকাই কিংবা ভবঘুরেদের লাইনে দাঁড় করিয়ে গেছেন। কেউ কেউ আবার নিজে লাইনে না দাঁড়িয়ে টাকা দিয়ে লোক দাঁড় করিয়েছেন। তারপরেও অনেকের ভাগ্যে টিকিট জুটেনি। গত বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত প্রায় ২৪ ঘণ্টা লাইনে থেকে টিকেট না পেয়ে অনেককে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। কেউ আবার দুঃখ-কষ্ট ভুলে পরের দিনের (শনিবার) টিকেটের জন্য নতুন করে লাইনে দাঁড়িয়েছেন।

শুক্রবার ছিলো ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রির দ্বিতীয় দিন। প্রথম দিনের তুলনায় এ দিন যাত্রীদের ভিড় ছিলো চোখে পড়ার মতো। টিকেট বিক্রির প্রথম দিনের মতো দ্বিতীয় দিনও বিশেষ করে সুবর্ণ, তূর্ণা, সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকেট বেলা সাড়ে ১১টার দিকেই শেষ হয়ে যায়। তাতে লাইনে দাঁড়ানো অনেকেই এসব ট্রেনের টিকেট কাটতে পারেননি। এ বিষয়ে রেলওয়েসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ভাষ্য, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ২০টি কাউন্টার থেকে ঈদ উপলক্ষে আন্তঃনগরসহ ঈদ স্পেশাল ট্রেনের মাত্র ১৯ হাজার টিকেট দেয়া হচ্ছে। যার মধ্যে ভিআইপি, স্টাফ, মোবাইল ও ই-টিকেটে ৩৫ শতাংশ টিকেট ছাড়া হচ্ছে। বাকি ৬৫ শতাংশ টিকেট উম্মুক্ত কোটায় কাউন্টার থেকে ছাড়া হচ্ছে। সেই হিসাবে ৯ হাজার ৩৫ টিকিটের বিপরীতে স্টেশনে জড়ো হচ্ছেন প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার লোক।

সীমিত টিকেট যথাযথ নিয়মে কাউন্টার থেকে বিক্রি হচ্ছে জানিয়ে রেলপথমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক এমপি শুক্রবার বিকেলে জানিয়েছেন, অতিরিক্ত যাত্রীবহনে এবারও ১৭২টি যাত্রীবাহী বগি সংযোগ ও ৭ জোড়া স্পেশাল ট্রেন চালানো হবে। গত ঈদের চেয়ে এবারের ঈদে আরও বেশি যাত্রী চলাচল করতে পারবে। তিনি বলেন, সীমিত টিকেটের বাইরে কোনো অবস্থাতেই যাত্রীদের টিকেট দেয়া সম্ভব নয়। তবে ঈদ উপলক্ষে চলাচলকারী সব কয়টি ট্রেনে যাত্রীদের সুবিধার্থে ২০ শতাংশ টিকেট সিটবিহীন দেয়া হবে। টিকেট বিক্রয়ে এবার কোনো অনিয়ম হচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, অগ্রিম টিকেট কাটা যাত্রীদের নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ট্রেন ও স্টেশনে রেলওয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ছাড়াও পুলিশ, ৱ্যাব ও বিজিবি সদস্য সতর্কাবস্থায় থাকবে।

নিউ মার্কেট এলাকা থেকে আসা ফারজানা আক্তার বললেন, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে টিকেট কাটতে আসা নারীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। ২০টি কাউন্টারের মধ্যে শুধু ১টি কাউন্টার থেকে নারী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য টিকেট দেয়া হচ্ছে। এটা শুধু বৈষম্যই নয়, নারীদের অধিকার বঞ্চিত করা হচ্ছে। উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, নারী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য যে কাউন্টারটি খোলা হয়েছে সেই কাউন্টার থেকে সুর্বণা ও তূর্ণা এক্সপ্রেস ট্রেনের কোনো টিকেট দেয়া হচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়েই ৪নং কাউন্টারের সামনে পুরুষদের সাথে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কিন্তু নিরাপত্তার অভাবে ৪০০ টাকায় ভাড়া করে দুজন টোকাইকে দাঁড় করিয়েছেন। আর তারা লাইনের অদূরে ওয়াল ঘেঁষে বসে আছেন। গতকাল শুক্রবার পৌনে ১০টার দিকে তারা সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনের ৬টি এসি চেয়ার সিট পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

শুক্রবার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কেউ অগ্রিম টিকেট কাটতে পেরেছেন আবার কেউ পারেননি। জহিরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি চট্টগ্রাম যাওয়ার জন্য সুর্বণা এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকেট নিতে সারিতে দাঁড়িয়েছিলেন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। সারিতে বসেই ইফতার শেষে সেহরি খেয়ে রোজা রেখেছেন। কিন্তু পরদিন অর্থাৎ শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে যখন কাউন্টার পর্যন্ত যান, তখন জানতে পারেন টিকেট শেষ। সেগুনবাগিচা এলাকা থেকে আসা রোকশানা আক্তার ও পারভীন আক্তার জানান, ভোরে এসে নারী কাউন্টারের লাইনে দাঁড়িয়েও রাজশাহীগামী আন্তঃনগর ট্রেনের টিকেট কাটতে পারেননি।

ঢাকা রেলওয়ে বিভাগীয় কর্মকর্তা আরিফুজ্জামান বলেন, টিকেট না পাওয়া যাত্রীরা ক্ষোভে নানা অভিযোগ করছেন। কাউন্টারে যতক্ষণ টিকেট থাকবে ততক্ষণই টিকেট দেয়া হবে। আগামীকাল (আজ) ১৫ জুলাইয়ের অগ্রিম টিকেট বিক্রি হবে।’

Leave a comment