স্টাফ রিপোর্টার: ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের জন্য ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হয়েছে। প্রথমদিনই রাজধানীর কমলাপুর স্টেশনে টিকেট কাউন্টারগুলোতে ছিলো টিকিটপ্রত্যাশীদের উপচে পড়া ভিড়। কানায় কানায় পূর্ণ হয়েছে কমলাপুর রেলস্টেশন। সবাই দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন টিকেটের অপেক্ষায়। এদের মধ্যে কেউ এসেছেন বুধবার সন্ধ্যা রাতেই এবং কেউবা সেহরি খেয়ে। কিন্তু লাইনে থাকা সবার উদ্বেগ একটাই কাঙ্ক্ষিত টিকেট পাবো তো! এদিকে দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষার পর অনেকে কাঙ্ক্ষিত টিকেট হাতে পেয়ে আবার উচ্ছ্বসিত হয়েছেন। চোখে-মুখে ছিলো হাসির বন্যা। লাইনে দাঁড়ানো যাত্রীরা রেলওয়ে কর্মকর্তাদের অদক্ষতার কারণে ধীরগতিতে টিকেট দেয়ার অভিযোগও করেছেন। ঈদের সময় মহাসড়কে যানজট, দুর্ঘটনা ও নানা দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে ট্রেনের টিকেটের প্রতিই নগরবাসীর ঝোঁক বেশি থাকে। এবারও একই দৃশ্য দেখা গেছে। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, গতকাল সকাল নয়টায় টিকেট বিক্রি শুরু হয়। কিন্তু ভোর থেকে কমলাপুর স্টেশনের টিকিট কাউন্টারের সামনে লাইন ধরে বসে পড়েন অনেকে। সকাল নয়টায় টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার আগেই প্রতিটি কাউন্টারের সামনে অপেক্ষমাণ লোকদের সারি আঁকাবাঁকা হয়ে স্টেশনের প্লাটফরম ছাড়িয়ে যায়।
গতকাল বিক্রি হয়েছে ১৩ জুলাইয়ের টিকেট। আজ শুক্রবার বিক্রি হবে ১৪ জুলাইয়ের টিকেট। ধারাবাহিকভাবে ১১ জুলাই ১৫ তারিখের, ১২ জুলাই ১৬ তারিখের এবং ১৩ জুলাই বিক্রি হবে ১৭ তারিখের টিকেট। প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত টিকিট বিক্রি চলবে। একজন সর্বোচ্চ চারটি টিকেট কিনতে পারবেন।
টিকেট দিতে ধীরগতি: লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অনেক যাত্রী অভিযোগ করেন, কাউন্টার থেকে ধীরগতিতে টিকেট দেয়া হচ্ছে। যাত্রীরা বলেন, লাইনে দাঁড়ানোর পর স্টেশন থেকে একটি চাহিদাপত্র দেয়া হচ্ছে। তথ্য লিখে টিকেট কাটার সময় যাত্রীরা তা কাউন্টারে জমা দিচ্ছেন। এরপরও টিকেট দিতে অনেক দেরি হচ্ছে। কম্পিউটার অপারেটররা অদক্ষ। এক আঙুল দিয়ে কি-বোর্ড প্রেস করছেন। রুপালি যাবেন দিনাজপুর। দুপুর ১২টায় নারী কাউন্টার থেকে ৪২০ টাকা দিয়ে ১৩ জুলাইয়ের টিকেট কেটেছেন। টিকিট হাতে পেয়ে তিনি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। ঈদে সবার সাথে ঈদ পালন করার মজাটাই আলাদা বলে মন্তব্য করেন রুপালি। রাজশাহী যাবেন আমিনুল ইসলাম। দুপুর পৌনে ১টায় লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি বলেন, রাজশাহীর সিল্কসিটি অথবা ধূমকেতুতে ১৩ জুলাইয়ের এসি কেবিনের টিকিট চেয়ে তিনি পাননি। তবে কর্তৃপক্ষ বলেছে, কেবিন ও এসি প্রথম শ্রেণির টিকিট সীমিত হওয়ায় কিছুটা সমস্যা হতে পারে। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিটের সময় তার কক্ষে বলেন, এখন পর্যন্ত যাত্রীদের কাছ থেকে কোনো অভিযোগ পাইনি। ধীরগতির অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, সার্ভার চালু করার পরপর একটু ধীরগতি থাকে। তখন টিকেট দিতে একটু দেরি হয়। পরে ঠিক হয়ে যায়।
ঈদ উপলক্ষে ঢাকা থেকে দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর), ঢাকা-পার্বতীপুর, চট্টগ্রাম-চাঁদপুর, ঢাকা-খুলনা এবং ঈদের দিন ভৈরব শোলাকিয়া ও ময়মনসিংহ শোলাকিয়ায় ট্রেনের বিশেষ সার্ভিস চালু হবে। এছাড়া রেলে নতুন বগিও সংযোজন করা হবে। রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক সকালে কমলাপুর স্টেশন পরিদর্শন করে বলেছেন, যাত্রীদের নিরাপদে এবং নিরাপত্তা দিয়ে বাড়ি যাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। মন্ত্রী জানান, কালোবাজারি ঠেকাতে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঢাকা, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, বিমানবন্দর, জয়দেবপুর, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, সিলেট, রাজশাহী, খুলনাসহ সব বড় স্টেশনে জিআরপি, আরএনবি ও স্থানীয় পুলিশ বিজিবি এবং ৱ্যাবের সহযোগিতায় টিকেট কালোবাজারি প্রতিরোধে সার্বক্ষণিক পাহারার ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া জেলা প্রশাসকদের সহায়তায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। ৱ্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ কমলাপুর রেলস্টেশন পরিদর্শনে এসে বলেন, প্রতিটি বাস ও ট্রেন স্টেশনে ৱ্যাবের ক্যাম্প বসানো হয়েছে। যাত্রীদের নিরাপদ যাত্রা ও নিরাপত্তার জন্য ৱ্যাব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে।
ঈদ উপলক্ষে রেলওয়েতে সাধারণত যাওয়ার অগ্রিম টিকেট বিক্রি হয় শুধু ঢাকার কমলাপুর, চট্টগ্রাম ও সিলেট স্টেশনে। ফিরতি টিকিট এ তিন স্টেশন ছাড়াও রাজশাহী, দিনাজপুর, রংপুর, সৈয়দপুর, খুলনাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে বিক্রি হবে। ঢাকা থেকে প্রতিদিন প্রায় ১৮ থেকে ২০ হাজার অগ্রিম টিকিট বিক্রি হবে বলে রেল কর্তৃপক্ষ আশা করছে। ঈদের পর ফেরার জন্য ২০ জুলাইয়ের আগাম টিকেট পাওয়া যাবে ১৬ জুলাই, ২১ জুলাইয়ের টিকিট পাওয়া যাবে ১৭ জুলাই, ২২-২৩ জুলাইয়ের আগাম টিকিট পাওয়া যাবে ১৯ জুলাই, ২৪ জুলাইয়ের আগাম টিকিট পাওয়া যাবে ২০ জুলাই। এছাড়া ঈদের পরে রাজশাহী, খুলনা, রংপুর, দিনাজপুর, লালমনিরহাট স্টেশন থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় টিকেট বিক্রি হবে।
ঈদ উপলক্ষে পাহাড়তলী ওয়ার্কশপ থেকে ৮৬টি ও সৈয়দপুর ওয়ার্কশপ থেকে ৮৩টি মোট ১৬৯টি (১০৯টি মিটারগেজ ও ৬০টি ব্রডগেজ) যাত্রীবাহী কোচ সপ আউট-টার্ন হবে। কারখানায় মেরামত করে অতিরিক্ত ২৫টি ইঞ্জিন সরবরাহ করা হবে মূল বহরে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. মোজাম্মেল হক বলেন, ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যের আন্তঃনগর, মেইল ও লোকাল ট্রেনের আসনসংখ্যা প্রায় ৩৮ হাজার। এর সাথে যুক্ত হচ্ছে বিশেষ ট্রেন। সব মিলিয়ে ঢাকা থেকে প্রায় ৫০ হাজার যাত্রী প্রতিদিন ট্রেনে চড়ে বাড়ি যেতে পারবেন। ঈদ উপলক্ষে ঢাকা থেকে প্রতিদিন আন্তঃনগর ট্রেনসমূহের বিভিন্ন কোটায় বরাদ্দকৃত আসনের বিবরণে বলা হয়েছে মোট আসন ১৪ হাজার ৫১২টি। এর মধ্যে শতকরা ২৫ ভাগ টিকিট খুদে বার্তায় বা ই-টিকেটিং পদ্ধতিতে পাওয়া যাবে। এ সংখ্যা ৩ হাজার ২৭৯টি। এছাড়া ভিআইপি কোটায় ৫ শতাংশ অর্থাৎ ৭৩৩টি, রেলওয়ের স্টাফ ৫ শতাংশে ৭৩৩টি, সংরক্ষিত ৭৩২টি এবং উন্মুক্ত মোট ৯ হাজার ৩৫টি আসন রয়েছে। একইভাবে চট্টগ্রাম থেকে আন্তঃনগর, মেইল ও লোকাল ট্রেনের আসনসংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। কিন্তু ঈদ উপলক্ষে ১২ থেকে ১৩ হাজার যাত্রী ট্রেনে চড়ে গন্তব্যে যেতে পারবেন। সূত্র জানায়, সবকটি ট্রেন মিলিয়ে তাপানুকূল (এসি) আসন ও বার্থ (শুয়ে যাওয়া ব্যবস্থা) আছে মাত্র এক হাজার ৮০২টি।
সূত্রে জানায়, স্বাভাবিকভাবে প্রতিদিন বাংলাদেশ রেলওয়েতে প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার যাত্রী পরিবহন করা হয়ে থাকে। কিন্তু ঈদ উপলক্ষে প্রতিদিন প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার যাত্রী পরিবহনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।