কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে আওয়ামী লীগ সমর্থিত উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিএনপি সমর্থিত ১১ ইউপি চেয়ারম্যানের অনাস্থা জ্ঞাপনের বিষয়ে খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে কারণ দর্শানো নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার সুবাস চন্দ্র সাহা স্বাক্ষরিত দৌলতপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ফিরোজ আল মামুনের নিকট প্রেরিত কারণ দর্শানো নোটিশে বলা হয়েছে, সময়মতো পরিষদের সভা আহ্বান না করা, উন্নয়ন কাজে উৎকোচ গ্রহণ, স্বজনপ্রীতি, রাজস্বখাতে বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাৎ, সরকারি গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার এবং অন্যান্য অভিযোগজনিত কারণে উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) আইন ২০১১ এর ১৩ (ক) ধারার বিধান মোতাবেক কারণ দর্শানো নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। প্রাপ্ত নোটিশের বরাত দিয়ে প্রেরিত নোটিশের জবাবে উপজেলা চেয়ারম্যান ফিরোজ আল মামুন উল্লেখ করেছেন, সময়মতো পরিষদের সভা করা হয় এবং প্রতিমাসে সভা অনুষ্ঠিত হয় যেখানে সভার প্রতিটি তারিখ উল্লেখ রয়েছে।
উৎকোচ গ্রহণের বিষয়ে তিনি উল্লেখ করেছেন, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে কোনো কাজে তাকে উৎকোচ দিতে হয়নি বরং কাজ বুঝে নিয়ে বিল প্রদানে স্বাক্ষর করা হয়ে থাকে। এছাড়াও তিনি কোনো স্বজনপ্রীতিমূলক কাজ না করাসহ আপ্যায়ন খাতের টাকা দিয়ে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের অতিথি আপ্যায়ন করা হয়ে থাকে এবং সরকারি গাড়ি সরকারি কাজে ব্যবহার হয়। সরকারি গাড়ি এখানে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারের কোনো সুযোগ নেই বলে নোটিশের জবাবে উল্লেখ করেছেন। তবে বিএনপি সমর্থিত ১১জন ইউপি চেয়ারম্যান কেন তার বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছেন সে বিষয়ে তিনি উল্লেখ করেছেন, দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীমুল হক পাভেল স্বেচ্ছাচারী ও দুর্নীতিপরায়ন একজন অসৎ অফিসার। তিনি বেপরোয়াভাবে উপজেলা পরিষদসহ বিভিন্ন এলাকার সরকারি গাছ কেটে তা আত্মসাৎ করা, সরকারি গম ক্রয়ে কেজি প্রতি ৪ টাকা করে নিয়ে নিজে সরকারি গুদামে গম সরবরাহ করা, আব্দুস সোবহান ও বাদল নামে দু’জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে অন্যায়ভাবে আটক করে হাতকড়া পরিয়ে নিজ বাসভবনে দিনভর আটকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নামে ৩ লাখ টাকা আদায় করা, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস ও পয়লা বোশেখের উৎসবের নামে উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার, ইটভাটা, বালুঘাট, বিভিন্ন ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ক্লিনিকসহ বিভিন্ন স্তরে প্রায় কোটি টাকার চাঁদাবাজি করায় বর্তমান স্বাধীনতার স্বপক্ষের সরকারের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন হওয়ায় এসব অনৈতিক কাজ থেকে বিরত থাকতে বলা হলে তিনি উপজেলা চেয়ারম্যানের ওপর ক্ষুব্ধ হন। এরই প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীমুল হক গত ৪ মে তার কার্যালয়ে বিএনপি সমর্থিত ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। বৈঠকে ওই সকল চেয়ারম্যানদের নাশকতার মামলায় জড়িয়ে ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জেলে প্রেরণের হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে অনাস্থা প্রস্তাবে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করান। যা পরবর্তীতে উপজেলা চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে ওই সকল ইউপি চেয়ারম্যান স্বীকারও করেছেন। অনুরূপভাবে ১৪ মে অনাস্থা জ্ঞাপনকারী বিএনপি সমর্থিত ১১ জন ইউপি চেয়ারম্যানসহ ১৩ জন ইউপি চেয়ারম্যান উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করে উপজেলা চেয়ারম্যানের পক্ষে স্বাক্ষর করেন। এছাড়াও দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীমুল হকের বিরুদ্ধে অসামাজিক কর্মকাণ্ডেরও অভিযোগ রয়েছে বলে উপজেলা চেয়ারম্যান বিভিন্ন মহলের সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছেন। তাই এ সকল বিষয় সরেজমিনে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি উপজেলা চেয়ারম্যানসহ এলাকাবাসীর।