ঈদে নতুন জামা কেনা হলো না ফাহিমের

স্টাফ রিপোর্টার: ঈদের নতুন জামা কিনতে গাজীপুর থেকে মায়ের সঙ্গে ঢাকা এসেছিলো ফাহিম। কথা ছিল হাজারীবাগ নানাবাড়ি যাবে সেখান থেকে ভাইকে নিয়ে কেনাকাটা করবে। কিন্তু ধানমণ্ডির সড়ক দুর্ঘটনা কেড়ে নিলো ফাহিমের ইচ্ছা।

তকাল বুধবার দুপুরে একটি বাস থেকে নামার সময় আরেকটি বাস ফাহিমকে চাপা দেয়। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। বিকেলে ময়নাতদন্তের জন্য ফাহিমের মরদেহ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে পাঠায় পুলিশ। প্রহল্লাদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ফাহিম আহমেদ (১২) গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার ডোমনী গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম পলাশের ছেলে। দুই ভাইয়ের মধ্যে ফাহিম  ছোট। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আহাজারি করতে করতে ফাহিমের বড়ভাই পাভেল আহমেদ এ প্রতিবেদককে বলেন: ‘আমি ইস্টার্ণ প্লাজায় একটি দোকানে কাজ করি। গত মঙ্গলবার মার্কেট বন্ধের সময় মালিক আমাকে বেতনের ৪ হাজার ও বোনাসের ৪ হাজার টাকা দেয়। টাকা পাওয়ার পরই মাকে ফোন করে জানায়, ছোট ভাই ফাহিমকে নিয়ে ঢাকায় আসতে। ফাহিম ও মায়ের জন্য ওই টাকা দিয়ে কিছু কেনাকাটা করতে চেয়েছিলাম। গতকাল সকালে মা ফাহিমকে নিয়ে ২৭ নম্বরের ভিআইপি পরিবহনের একটি বাসে ওঠে। নিউমার্কেট নেমে সেখান থেকে নানাবাড়ি গিয়ে তারপর শপিংয়ে যাওয়ার কথা ছিল। তার আগেই ঘটে গেল দুর্ঘটনাটি।’

ফাহিমের মা ঝর্ণা বেগম এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘২৭ নম্বর বাসে আমরা নিউমার্কেট গিয়ে সেখান থেকে  লেগুনায় করে হাজারীবাগে যাব বলে ভেবেছিলাম। কিন্তু ধানমন্ডি চার নম্বর রোডের মাথায় আনোয়ার খান মেডিক্যাল কলেজের সামনে বাসটি নষ্ট হয়ে যায়। বাস চালক সবাইকে নেমে যেতে বলেন। আমার আগেই নামছিল ফাহিম। ঠিক গেট থেকে নিচে পা দেয়া মাত্রই আরেকটি বাস তাকে চাপা দেয়। মুহূর্তে ঢলে পড়ে ফাহিম।’ আহাজারি করতে করতে তিনি আরো বলেন, ‘কয়েকদিন আগে ওর স্কুল থেকে আমাকে ফোন করে বলেছিল ভালো করছিল না ও। তাই ওকে আমি বকা দিয়ে বলেছিলাম ঈদের পর তোর আর স্কুলে যেতে হবে না। রাগ করে ও আমাকে বলেছিল, ঈদের আগেই আমি মরে যাব। আমার জন্য তোমার আর কথা শুনতে হবে না।’

 

ধানমণ্ডি থানার ওসি নূরে আজম মিয়া বলেন, ‘ক্ষুব্ধ পথচারীরা ভিআইপি পরিবহনের বাসটি আটকে আগুন ধরিয়ে দেয়। খবর পেয়ে আমরা গিয়ে ক্ষুব্ধ জনতাকে শান্ত করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি।’ ফায়ার সার্ভিস কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের পরিদর্শক সৈয়দ মুনিরুজ্জামান বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে ধানমণ্ডিতে ভিআইপি পরিবহনের একটি বাসে আগুন দিয়েছে জনতা।’ বিক্ষোভের কারণে ওই সড়কে কিছু সময়ের জন্য যান চলাচল বিঘ্নিত হয়।

এদিকে মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়তেই শোকের ছায়া নেমে আসে হাজারীবাগ গণকটুলী এলাকায়। একে একে মামা জিতু, নানা জাহাঙ্গীর আলমসহ অন্যান্য আত্মীয় এসে হাসপাতাল মর্গের সামনে ভিড় জমাতে শুরু করেন। কান্না যেন থামছে না তাদের।