ট্রাকের সাথে মাহেন্দ্র’র ধাক্কা : নিভে গেলো এক প্রতিভা

ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর-কালীগঞ্জ সড়কের গুলশান মোড়ে দুর্ঘটনা

 

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর-কালীগঞ্জে সড়কে দুর্ঘটনায় আমিনুর রহমান (২৫) নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন। গতকাল শনিবার সকাল ১১টার দিকে উপজেলার শিবনগরে কালীগঞ্জ-কোটচাঁদপুর সড়কের গুলশান মোড় এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

এ দুর্ঘটনায় আব্দুস সাত্তার (৫৫), মিনি খাতুন (৪০), ইকবাল হোসেন (২৮) ও রিতু পারভিন (২০) নামের চার ব্যক্তি আহত হয়েছেন। তাদের চিকিৎসার জন্য যশোর সদর হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। নিহত আমিনুরের বাবার নাম জয়নাল আবেদিন। যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি এলাকার বাগডাঙ্গা গ্রামে তার বাড়ি। আমিনুরের আত্মীয় ফিরোজ মাহমুদ জানান, যাত্রীবাহী একটি মাহেন্দ্রতে করে তারা বাগডাঙ্গা গ্রাম থেকে কালীগঞ্জ উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে যাচ্ছিলাম। মাহেন্দ্রটি গুলশান মোড়ে শ্যালোইঞ্জিনচালিত একটি নসিমনকে জায়গা ছেড়ে দিতে গেলে চালক নিয়ন্ত্রণ হারান। মাহেন্দ্রটি সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রাকের সাথে সজোরে ধাক্কা খায়। এতে আমিনুরসহ পাঁচ যাত্রী আহত হন। তাদের উদ্ধার করে কালীগঞ্জ হাসপাতালে নেয়া হয়। আমিনুর গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পাস করেন।

কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, আহত ব্যক্তিদের কালীগঞ্জ হাসপাতালে নেয়া হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আমিনুর রহমান মারা যান। আহত বাকি চারজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যশোর পাঠানো হয়েছে। আমিনুরের এক বন্ধু বলেন, সকাল ১০টা ৪০ মিনিটের দিকে আমিনুর আমাকে ফোন করে। দুজনে ৩৬তম বিসিএস প্রিলিমিনারির আবেদনের বিষয়ে কথা বলছিলাম। ও বলছিলো গাড়িতে আছি। এক জায়গায় যাচ্ছি। ৩০ হাজার পেরুলে বিসিএসের আবেদন করবো। এর মধ্যেই ধুপ করে একটা শব্দ পেলাম। হঠাৎ ফোনটা কেটে গেলো। চেষ্টা করেও আর ফোন যায়নি। ভেবেছিলাম নেটওয়ার্ক সমস্যা। এরপর বেলা সাড়ে ১১টার সময় আরেক বন্ধু ফোনে জানাল, আমিনুর মারা গেছে। আর তখন আমিও বুঝলাম, ধুপ শব্দের মানে কি! গতকাল শনিবার নিহত আমিনুর রহমানের সম্পর্কে এভাবেই বলছিলেন তার বন্ধু জ্যোতি সরকার। আমিনুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগ থেকে ২০১৪ সালে স্নাতকোত্তর শেষ করেন। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর উভয় পরীক্ষার ফলাফলেই কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন আমিনুর। আট ভাই-বোনের মধ্যে আমিনুর ছিলেন সবার ছোট। সন্তানের এমন মৃত্যুর খবরে মা সখিনা বেগমও পাগলপ্রায়।

আমিনুরের আরেক বন্ধু মুজাহিদ বলেন, আমরা সব সময় এক সাথেই থাকতাম। ও সব কিছুকে খুবই সহজ করে নিতে পারতো। মাস্টার্স শেষ করার পর চাকরি হয়নি। আমরা কতো দুশ্চিন্তা করি কিন্তু ও কখনো দুশ্চিন্তা করতো না। ৩৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারিতে টিকেছে। সামনে লিখিত পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। ইচ্ছে ছিলো বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে টিকে সহকারী পুলিশ সুপার হবে।
আমিনুরের আরেক বন্ধু আবদুল্লাহ আল কাওসার বলেন, বিভাগীয় বনভোজনে যখন সেন্টমার্টিনে গিয়েছিলাম। রাতে হুমায়ুন আহমেদের সমুদ্র বিলাসে ছিলাম। রাতে সবাই মিলে ডাব পেড়ে খেয়েছিলাম। সমাবর্তনে কথা মজা করেছিলাম। দু দিন আগে যখন বাড়িতে যায়, তখনো কতো মজা করেছিলাম। কিন্তু সবই এখন কেবলই স্মৃতি।

Leave a comment