স্টাফ রিপোর্টার: শিক্ষামন্ত্রীর বাসায় গোপন বৈঠকে ক্ষোভ ঝাড়লেন সচিব। বোর্ডের কয়েক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তুললেন তিনি। গতকাল শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে মন্ত্রীর হেয়ার রোডের বাসায় এ বৈঠকে বসে। ভর্তির পদ্ধতি নিয়ে যে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে তা পর্যালোচনার জন্যই মন্ত্রীর বাসায় অনির্ধারিত এ বৈঠকের আয়োজন করা হয়। বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ২ ঘণ্টাব্যাপি বৈঠকে ভর্তি প্রক্রিয়ায় জনভোগান্তির ঘটনায় মন্ত্রী তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন। আলোচনার একপর্যায়ে শিক্ষা সচিব ক্ষোভের সাথে ঘটনার দায় চাপান বোর্ডের কয়েক কর্মকর্তার ওপর।
তিনি বলেন, বোর্ডের কর্মকর্তাদের অসহযোগিতামূলক মনোভাবের জন্যই একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। এ দায় তারা এড়াতে পারেন না। এ সময় সচিবকে সমর্থন জানিয়ে বক্তব্য দেন মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মহাপরিচালক। বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ গতকাল শনিবার রাতে বলেন, ভর্তির বিষয়ে পর্যালোচনা করতে আমরা বসেছিলাম। মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা এসেছিলেন। আমি এ বিষয়ে তাদের মতামত নিয়েছি। এ নিয়ে যা বলার কাল (আজ) বলবো। তবে এখন এটুকুই বলতে পারি যে, বিদ্যমান পরিস্থিতির জন্য ছাত্রছাত্রীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। এ বিষয়ে সব ধরনের সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেয়া হবে।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একটি সূত্র জানায়, শিক্ষা সচিব এ বিষয়ে তার কিছু অসন্তুষ্টির কথা বলেছেন। বোর্ডের কয়েকজন কর্মকর্তার ত্রুটির কথা বলেছেন। কিন্তু আমি তো বলতে পারি না তিনি আমার সামনে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন? আমি এ বিষয়ে কিছু বলবো না।
বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান এ প্রতিবেদককে বলেন, আপনাকে ফিড দেয়ার মতো লোক আছে। তাদের কাছ থেকে শুনেই লিখে দিন। আমাকে ফোন দেয়ার প্রয়োজন নেই।
বৈঠকে মন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অনেকেই মোবাইলফোনে নিজেদের দুর্ভোগ এবং তাদের সাথে খারাপ আচরণের বিষয়ে তার কাছে অভিযোগ করেছেন। ফল ও ভর্তি নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে মানুষের মধ্যে অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে বিভ্রান্তি কাটছে না- এটা অস্বীকারের কোনো সুযোগ নেই। প্রথমবার হিসেবে এ পদ্ধতি প্রবর্তনে কিছুটা ভুল-ভ্রান্তি হতেই পারে। কিন্তু তা স্বীকার করে নিতে দোষ নেই। একজন অন্যজনের ওপর দোষ চাপিয়ে লাভ নেই। এতে কোনো উপকার হবে না। বরং এটা স্বীকার করে নিয়ে মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে কাজ করতে হবে। এ সময় তিনি ভর্তির সার্বিক কার্যক্রমে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের সহায়তা ও তাদের সাথে ভালো ব্যবহারের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। বৈঠকে এবারের ভর্তিতে কোনো ধরনের জরিমানা না নেয়া এবং রমজানের ছুটির মধ্যে ভর্তি কাজ শেষ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এছাড়া ভর্তি নিয়ে জনভোগান্তি ও সার্বিক বিশৃঙ্খলার বিষয় নিয়ে আজ মুখ খুলবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ উপলক্ষে সকাল ১০টায় সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। বাসভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্মসচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক, ঢাকার তিন বোর্ডের চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন।
বোর্ডের কর্মকর্তাদের অসহযোগিতা সম্পর্কে মন্ত্রীর কাছে নালিশের বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু বক্কর ছিদ্দিকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ রকম কথা হয়েছে। তবে আমি বলেছি, সবাই নিজ নিজ দায়িত্ব যথাযথ পালন করেছেন। ঢাকা বোর্ডে কলেজ সংখ্যা ১ হাজার ১৩০টি। আর বরিশাল বোর্ডে ৪শ সিলেটে ২০০, যশোরে ৫০০। এ বাস্তবায়তায় এ বোর্ডে কাজের চাপ বেশি, হয়তো প্রত্যাশিত গতিতে হয়নি। এর মানে এই নয় যে, কেউ কাজ করেননি।
সভা সূত্র জানায়, শিক্ষা সচিব বোর্ডের কয়েকজন কর্মকর্তার অসহযোগিতার বিষয় অবতারণা করলে মাউশি মহাপরিচালকও তা সমর্থন করেন। এ সময় মহাপরিচালক উপ-পরিদর্শক ও উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পর্যায়ের ৪-৫ জন কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করেন ও তাদের বিষয়ে বিভিন্ন অপকর্মে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আনেন। মন্ত্রী তখন জবাবে বলেছেন, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যাবে। কেউই কোনো পদে স্থায়ীভাবে নিয়োগ পাননি। কিন্তু এ মুহূর্তে বড় সমস্যা শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের ভোগান্তির বিষয়। এটি সমাধানে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) এএস মাহমুদ বলেন, ভর্তির সার্বিক কার্যক্রম পর্যালোচনার জন্য সভাটি ডাকা হয়েছিলো। আজ রোববার সংবাদ সম্মেলনে গোটা বিষয় অবহিত করা হবে।
ডিসিদের জরুরি নির্দেশ: এদিকে ভর্তিকৃত ছাত্রছাত্রীদের তথ্য শনিবার রাত ১২টার মধ্যে অনলাইনে দাখিলের জন্য সব কলেজকে নির্দেশনা ইতঃপূর্বে দেয়া হয়েছে। এরপরও কোনো কলেজ যাতে এ কাজের বাইরে না থাকে, সেটি মনিটরিঙের জন্য সব জেলা প্রশাসককে অনুরোধ করেছে আন্তঃশিক্ষা সমন্বয় কমিটি। এ কমিটির আহ্বায়ক ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু বক্কর ছিদ্দিক জানান, যদি কোনো কলেজ নিশ্চায়ন না করে তাহলে ভর্তি কাজ হোঁচট খাবে। দ্বিতীয় মেধা তালিকা প্রকাশের সময় পিছিয়ে যাবে। এজন্যই সব কলেজের পাশাপাশি ডিসিদেরও এ বিষয়ে মনিটরিংয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
ঘোষিত প্রক্রিয়া অনুযায়ী এবার মোট চার ধাপে কলেজ শিক্ষার্থীদের ভর্তি করা হচ্ছে। এর মধ্যে প্রথম ধাপে প্রথম মেধা তালিকা থেকে শিক্ষার্থীদের ভর্তির কাজ বৃহস্পতিবার শেষ হয়। দ্বিতীয় মেধা তালিকা প্রকাশ করা হবে ৬ জুলাই। ওই তালিকায় মাইগ্রেশন (কলেজ পরিবর্তন) করতে ইচ্ছুক এবং যারা কোনো কলেজে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়নি, তারা স্থান পাবে। দ্বিতীয় মেধা তালিকা প্রকাশের আগে কলেজগুলো তাদের ভর্তি করা শিক্ষার্থীর তালিকা অনলাইনে দাখিল করবে। সেখান থেকে শূন্য আসন বের করে দ্বিতীয় মেধা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তৃতীয় তালিকা প্রকাশ করা হবে ১১ জুলাই।