গম মানুষের খাওয়ার উপযোগী কিনা জানানোর নির্দেশ হাইকোর্টের

স্টাফ রিপোর্টার: ব্রাজিল থেকে ৪০০ কোটি টাকার আমদানি করা গম আদৌ মানুষের খাওয়ার উপযোগী কি-না, সরকারের কাছে তা জানতে চেয়েছে আদালত। খাদ্য সচিব ও খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে এ বিষয়ে আদালতে জানাতে হবে। একটি রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি করে বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের বেঞ্চ মঙ্গলবার এ আদেশ দেয়। বিষয়টি আগামী ৫ জুলাই আবার আদালতের কার্যতালিকায় আসবে। ওই গম আমদানি নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে পাভেল মিয়া নামের এক আইনজীবী রোববার এই রিট আবেদন করেন। আদালতে তার আইনজীবী হিসেবে ছিলেন ব্যারিস্টার সানজীদ সিদ্দিকী। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস। সম্প্রতি একটি দৈনিকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্রাজিল থেকে আমদানি করা ৪০০ কোটি টাকার দু লাখ টন ‘নষ্ট ও পচা গম’ নিয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য অধিদপ্তর ‘লুকোচুরি করছে। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেয়ার পরও তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি। পুলিশ, বিজিবি, আনসার, জেলখানা, ডিলার ও আটা কল ছাড়াও টিআর (টেস্ট রিলিফ) ও কাবিখাসহ (কাজের বিনিময়ে খাদ্য) বিভিন্ন কর্মসূচিতে ওই গম বিতরণ করা হচ্ছে বলেও ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। পচা গম আমদানির অভিযোগ ওঠার পর খাদ্যমন্ত্রীর পদত্যাগেরও দাবি ওঠে।

তবে ওই গম পচা নয় দাবি করে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম সংসদে বলেছেন, এ গম সম্পূর্ণ খাবার উপযোগী। খাদ্য অধিদপ্তর ও সায়েন্স ল্যাবরেটরির (বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ) পরীক্ষায় এটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। গমের মান নিয়ে আমি স্যাটিসফায়েড। তবুও খাদ্যমন্ত্রীর সাফাই। এদিকে, ব্রাজিল থেকে আমদানিকৃত প্রায় দু লাখ মেট্রিক টন গমের গুণগত মান নিয়ে এক পরীক্ষার রিপোর্ট বলছে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে গমের মান সরকার নির্ধারিত গ্রহণযোগ্যতার মানের সাথে সামঞ্জস্য নেই। সরকারি গবেষণা সংস্থা বিসিএসআইআর বলছে, ১৪টি খাদ্যগুদামের গম পরীক্ষা করে তারা দেখেছে নমুনার প্রায় অর্ধেক গমেই ভাঙা দানার পরিমাণ অনেক বেশি। তবে এগুলো খাওয়ার উপযোগী কি-না সেই পরীক্ষা করার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ না থাকায় তারা সেটা করতে পারেনি।

এদিকে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলছেন, এ পরীক্ষার ফল বলে দিচ্ছে আমদানিকৃত গম নিম্নমানের নয়। বাংলাদেশে গমের চাহিদা মেটাতে এ গম ব্রাজিল থেকে আমদানি করা হলে এর মান নিয়ে গণমাধ্যমে গত কয়েকদিন ধরে বিস্তর লেখালেখি হচ্ছে। দু দিন আগে গমের মান পরীক্ষার জন্য সরকারি গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশে বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদে পাঠানো হয়। তবে এখন এই গম খাওয়ার উপযোগী কি না, সেই পরীক্ষা করেনি গবেষণা সংস্থাটি।
খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, গমের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলা ভিত্তিহীন। কারণ অধিদপ্তরের ল্যাব ছাড়াও সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা হয়েছে। ফলে অভিযোগ যা করা হচ্ছে তা ভিত্তিহীন এবং এর কোনো যুক্তি নেই। ৪০০ কোটি টাকা খরচে আমদানি করা এই গম আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, কাজের বিনিময়ে খাদ্যসহ সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচিতে বিতরণ করা হয়। গম খাওয়ার উপযোগী কি না সেই পরীক্ষা কেন করা হলো না, এমন প্রশ্নে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, সব গুদাম থেকে গম নিয়ে যে কেউ চাইলে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। এই গম দুর্গন্ধযুক্ত নয় বা খাওয়ার অনুপযোগী নয় বলেও তিনি দাবি করেন। এদিকে খাদ্য অধিদপ্তরের সরবরাহ করা গমের আটা অত্যন্ত নিম্নমানের। পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা অক্লান্ত পরিশ্রম করার পর এসব নিম্নমানের গম ও আটা খাচ্ছে। এতে তাদের মনোবল দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গত রোববার দেয়া সর্বশেষ চিঠিতে এ কথা বলা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে একই অভিযোগে কয়েক দফা চিঠি দেয়া হয়েছে। পুলিশের চিঠি পাওয়ার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি খাদ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে।

খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ২১ জুন খাদ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন, ব্রাজিল থেকে আনা গম সরকারের আমদানি শর্তের প্রান্তসীমায় ছিলো। আর নিম্নমান হওয়ায় খাদ্য বিভাগ থেকে মে মাসে গমের একটি জাহাজ ফেরত পাঠানো হয়েছিলো। তবে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম গত রোববার পুলিশের অভিযোগ নাকচ করে দেন। তিনি বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে এমন কোনো চিঠি আমরা পাইনি।

Leave a comment