স্টাফ রিপোর্টার: কক্সবাজারের টেকনাফ, চকরিয়া এবং রামুতে আরো ৭ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গত ৬ দিনের টানা প্রবল বর্ষণজনিত বন্যা ও পাহাড় ধসে এসব প্রাণহানি ঘটে। এ নিয়ে কক্সবাজার জেলায় এ পর্যন্ত ১৭ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এদিকে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ সারাদেশেই শুক্রবার রাত থেকে বৃষ্টির পরিমাণ কমেছে। গতকাল শনিবার দুপুরের পর থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করলেও গতরাতে চুয়াডাঙ্গায় অল্প বৃষ্টি হয়েছে। আজ রোববার থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে বলে আবহাওয়া অধিদফতর পূর্বাভাস দিয়েছে।
গতকাল শনিবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত কক্সবাজার আবহাওয়া অফিস ১০৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। টেকনাফে গতকাল দেশের সর্বাধিক ২৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস মাত্র দু মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে বলে আবহাওয়া অধিদফতরের ওয়েব পেজে দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, শনিবার উদ্ধার করা হয়েছে টেকনাফে পাহাড় ধসে মারা যাওয়া মা ও কন্যার লাশ। টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর গ্রামে গতকাল শনিবার ভোররাতে একটি পাহাড় ধসে পড়ে এলাকার আবুল মনজুরের ঘরে। ওই ঘরে সেহরি খেয়ে মা সমুদা বেগম (৪১) ও তার মেয়ে সাহানা বেগম (১৫) ঘুমিয়েছিলো। ঘটনাস্থলেই মা ও মেয়ের মৃত্যু হয়। ঘরের অন্য সদস্যরা বাইরে থাকায় অক্ষত রয়েছেন। টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান মওলানা রফিক উদ্দিন পাহাড় ধসের এ ঘটনার কথা নিশ্চিত করেছেন। অপরদিকে চকরিয়া উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। চকরিয়ার কাকারা ইউনিয়নের শাহমুরাবাদ এলাকায় আগের দিন শুক্রবার মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ কিশোর কাউছাইন রহিমের (১৩) লাশ আজ দুপুরে উদ্ধার করা হয়েছে। ফাসিয়াখালী রিংভং খালে গতকাল শনিবার সকালে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া মালুমঘাট এলাকার জয়নাল আবেদীনের পুত্র শফিউল আলম প্রকাশ মোহাম্মদ আলীর (২৮) লাশ বিকালে উদ্ধার করা হয়। চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সাহেদুল ইসলাম লাশ উদ্ধারের এসব কথা নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে চকরিয়া থানা পুলিশ গতকাল শনিবার দুপুরে চকরিয়ার কৈয়ারবিল নামক এলাকা থেকে তিন বছরের এক শিশুর ভাসমান লাশ উদ্ধার করে। এছাড়াও গত বৃহস্পতিবার রামুর গর্জনিয়া ইউনিয়নের কাজিরবিল এলাকায় নিরাপদ আশ্রয়ে যাবার সময় ঢলের পানির তোড়ে একটি নৌকা ডুবিতে নিখোঁজ হয়ে পড়া কামরুন নাহার (২০) ও হুমাইরা (৩) নামের দুইজনের লাশ শুক্রবার রাতে উদ্ধার করা হয়েছে। রামু উপজেলা চেয়ারম্যান রিয়াজুল হক একথা নিশ্চিত করেন।
বর্ষণের পরিমাণ হ্রাস পাওয়ায় পানি কমলেও কক্সবাজার জেলার চকরিয়া, পেকুয়া, রামু, কক্সবাজার সদর ও উখিয়া উপজেলার ৪০ ইউনিয়নের কয়েক লাখ লোকের দুর্গতি অপরিবর্তিত রয়েছে। যেসব আশ্রয় কেন্দ্রে লোকজন আশ্রয় নিয়েছেন সেখান থেকে এখনো ঘরে ফিরতে পারছেন না। বন্যা কবলিত এলাকায় এখনো পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। কক্সবাজার জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বন্যা কবলিত এলাকায় ১৪১টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৬৫ হাজার লোক আশ্রয় নিয়েছে। তবে সরকারী হিসাবের বাইরেও রয়েছে। চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার শংকর রঞ্জন সাহা গতকাল শনিবার চকরিয়া, পেকুয়া ও রামুর বন্যাকবলিত এলাকা এবং আশ্রয় কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। দুর্গম এলাকার আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে খাবার দাবার নিয়ে সমস্যা থাকলেও সড়কের ধারে থাকা আশ্রয় কেন্দ্রগুলোর অবস্থা বেশ ভালো। কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ড. অনুপম সাহা জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ১১ লাখ টাকার সাহায্য বরাদ্দ করা হয়েছে। বিকেলে কক্সবাজার সদর ও রামুর কয়েকটি কমিউনিটি সেন্টারে স্থাপিত আশ্রয়কেন্দ্র সরেজমিন দেখতে গিয়ে এরকম দৃশ্য দেখা গেছে। কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট (এডিএম) মো. আবদুস সোবহান এসব কেন্দ্র পরিদর্শন করে জানান-এসব আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রভাব পড়েছে। সম্ভাব্য চেয়ারম্যান ও মেম্বার প্রার্থীগণ আশ্রয় প্রার্থীদের মাঝে দেদারছে খাবার-দাবার বণ্টন করছেন।
আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, বাংলাদেশ ও তৎসংলগড়ব এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি সক্রিয় রয়েছে। মরসুমি বায়ুর অক্ষের বধিতাংশ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর-প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, লঘুচাপের কেন্দ্রস্থল এবং উত্তরপূর্ব দিকে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে অতি প্রবল অবস্থায় রয়েছে। রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম এবং সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ী দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশের দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।