কক্সবাজার ও বান্দরবানে পাহাড়ি ঢল-ধস ও গাছ চাপায় ১০ জন নিহত
মাথাভাঙ্গা ডেস্ক: কক্সবাজার ও বান্দরবানে পাহাড়ি ঢল-ধস ও গাছ চাপায় ১০ জন নিহত ও সাত জন আহত হয়েছেন। নিখোঁজ রয়েছে দু জন। সারাদেশের সাথে বান্দরবানের সড়ক যোগাযোগ এখনো বিচ্ছিন্ন। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ।
এদিকে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর, ঝিনাইদহসহ সারাদেশেই গত কয়েকদিন ধরে কখনো গুঁড়িগুঁড়ি, কখনো ঝিরিঝিরি, কখনো বা রিমঝিম বৃষ্টি ঝরছে। চুয়াডাঙ্গায় গতকাল ২৭ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে জানা গেলেও আবহাওয়া অধিদফতরের ওয়েবসাইটে অবশ্য মাত্র তিন মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।
জানা গেছ, বৃহস্পতিবার রাতে ও শুক্রবার দিনে কক্সবাজারের রামুতে পাহাড়ি ঢলে ভেসে গিয়ে পাঁচজন, সেন্টমার্টিনে ঝড়ে নারকেল গাছ চাপা পড়ে দু জন ও কক্সবাজার শহরে পাহাড় ধসে একজন নিহত হয়। পাহাড়ি ঢলের পানিতে জেলার রামু, চকরিয়া, সদর, পেকুয়াসহ আট উপজেলার ৪০ ইউনিয়নের দেড় শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়েছেন অন্তত তিন লাখ মানুষ। রামু উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা হিল্লোল বিশ্বাস জানিয়েছেন, উপজেলার কচ্ছপিয়া, উখিয়ার ঘোনা, কাউয়াখোপ ও জোয়ারিয়া নালা এলাকায় ঢলের পানিতে ভেসে গিয়ে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এরা হলেন- খদিজা বেগম (৩৫), হালিমা বেগম (২৭), মোহাম্মদ রিদুয়ান (৬), জুনু মিয়া (৬০)। এছাড়া শুক্রবার সকালে রামু উপজেলার কাউয়াখোপ এলাকায় মাটির দেয়াল ধসে আমির হোসেন (৪০) নামে একজন মারা যান।
এদিকে কক্সবাজার শহরে পাহাড় ধসে মো. আবছার নামে তিন বছরের এক শিশু নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে সাত জন। প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে প্রবল ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টিপাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকালে বয়ে যাওয়া ঝড়ো হাওয়ায় অসংখ্য গাছপালা উপড়ে গেছে ও ঘরবাড়ি ধসে পড়েছে। ঝড়ে নারকেল গাছচাপা পড়ে মারা গেছেন এক মা ও শিশু। এরা হলেন- সেন্টমার্টিনের কোনারপাড়ার নূর মোহাম্মদের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম (২৫) ও তাদের শিশুপুত্র মোহাম্মদ জিশান (৪)। অপরদিকে বান্দরবানে জেলার বনরুপাড়ায় পাহাড় ধসে শিশু দুভাই-বোনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় শিশুদের বাবা-মাসহ আরও তিনজন আহত হয়েছেন। জেলা সদরের বনরুপাড়ায় শুক্রবার ভোরে পাহাড় ধসের এ ঘটনা ঘটে।
পিরোজপুর জেলায় অবিরাম বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে সদর উপজেলার হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। জেলার মঠবাড়িয়া, জিয়ানগর, ভাণ্ডারিয়ায় বেড়িবাঁধের বিভিন্ন স্থানে ভেঙে যাওয়ায় প্রায় ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। কলাপাড়া সংবাদদাতা জানান, পটুয়াখালীর কলাপাড়ার রাবনাবাদ নদের অস্বাভাবিক
এদিকে চুয়াডাঙ্গায় টানা ৪ দিনের বৃষ্টিতে জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে। ফলে নিত্যপণ্যের মূল্য বেড়েছে আরেক ধাপ। বিশেষ করে অল্প আয়ের মানুষ পড়েছে বেকায়দায়। তাদের জন-পাট বিক্রি হচ্ছে না। এ অবস্থায় জবুথবু হয়ে পড়েছে অনেকেই। অনেক ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। একটি কালভার্ট ভেঙে পানিতে কয়েকটি পুকুর ও গর্ত ডুবে অনেকের মাছ ভেসে গেছে। নিচু এলাকার অনেক মরসুমি ফসল তলিয়ে গেছে। গ্রামাঞ্চলের কাঁচা রাস্তা বৃষ্টির তোড়ে ধসে গেছে। গাছগাছালিরও ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টির কারণে রোজার মাসেও ব্যবসা-বাণিজ্যে নেমে এসেছে স্থবিরতা। চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসসূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গায় বুধবারে ৩৩, বৃহস্পতিবারে ৮৬ ও গতকাল শুক্রবার ভোর ৬টা পর্যন্ত ৬২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় আরো ২৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেলেও আবহাওয়া অধিদফতর অবশ্য তিন মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে তাদের ওয়েবসাইটে উল্লেখ করেছে।
আন্দুলবাড়িয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, জীবননগরের আন্দুলবাড়িয়া-সরোজগঞ্জ সড়কের আন্দুলবাড়িয়া মণ্ডলপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ পুকুরের সামনে জলবদ্ধতায় জনদুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। জনগুরুত্বপূর্ণ ব্যস্ততম সড়কের ওপর পানি জমে থাকায় প্রায় ২০টি গ্রামের মানুষের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। কয়েকদিনের অবিরাম বর্ষণে পানি নিষ্কাশনের ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সৃষ্ট জলবদ্ধতার কারণে সড়ক পথে ভারী যানবহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। প্রতিদিন আলমসাধু, নসিমন, করিমন, পাউয়ারটিলার, লাটাহাম্বর, মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল ও মিশুক যাত্রীরা ঝুঁকিপূণভাবে কোমর পানি পাড়ি দিয়ে পোকামারীপাড়া, বাজদিয়া, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার সড়াবাড়িয়া, খাসপাড়া, গবরগাড়া, সুযোতপুর, গহেরপুর, তেঘড়ি, খাড়াগোদা, কালুপোল, কিরনগাছি, বহালগাছি, সরোজগজ্ঞ, দশমাইল, ডাকবাংলা, হলিধানী, নগরবাথান, ঝিনেইদহ ও চুয়াডাঙ্গাসহ বিভিন্ন গন্তব্য স্থলের উদ্দেশে যাতায়াত করছে।। জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কের ওপর সৃষ্ট জলাবদ্ধতার কারণে জন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ায় স্থানীয় বাজারের ব্যবসা বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে। এছাড়াও সন্তোষপুর-সাফদারপুর সড়কের জীবননগরের দ্বিতীয় বৃহত্তর আন্দুলবাড়িয়া বাজার এলাকায় পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় সড়কের ওপর পানি জমে থাকায় মারণফাঁদ সৃষ্টি হয়েছে। আটকে পড়ছে চলাচলকারী যানবহন। দেখা দিয়েছে জনদুর্ভোগ। প্রতিনিয়ত ঘটছে দুঘটনা। অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা র্নিমাণ ও বাজার এলাকায় ৩টি কালভার্টের মুখ প্রভাবশালীরা বন্ধ করে দেয়ায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করেছে এলাকার সচেতনমহল। পানিবন্দি দশা থেকে মুক্তি চায় আন্দুলবাড়িয়ার সচেতনমহল। চায় পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও সড়ক সংস্কার।
আলমডাঙ্গা ব্যুরো জানিয়েছে, লাগাতার বৃষ্টিপাতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে আলমডাঙ্গার মানুষ। আষাঢ়ের প্রারম্ভে বেশ কয়েকদিন অবিরাম বৃষ্টিপাতে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। গতকাল সারাদিন সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। আকাশ জুড়ে কালো মেঘের ঘনঘটা। জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে উপজেলার বিভিন্ন মাঠ। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের আমন ধানের ফসলি মাঠ ইতোমধ্যেই থই থই পানির নিচে। গরু-ছাগলসহ গবাদি পশুর খাদ্য সঙ্কটে কৃষককে নাজেহাল হতে হচ্ছে। অনেক গ্রামে পানবরজে পানি উঠে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করেছে। জলাবদ্ধতায় নিমজ্জিত সবজি ক্ষেতগুলো। উপজেলার ডামোশ, পাঁচলিয়া, রামদিয়া, কায়েতপাড়া, খাসকররা ইউনিয়নের প্রায় সমস্ত গ্রামের মাছচাষি পুকুর মালিকরা বড়ই দুশ্চিন্তা আর আতঙ্কে রয়েছেন। এমন বিরামহীন একটানা বৃষ্টি উপেক্ষা করে নিরুপায় হয়ে কাজের সন্ধানে হাট-বাজারে বের হওয়া মানুষগুলোকে পড়তে হচ্ছে চরম দুর্ভোগে। অবিরাম বৃষ্টিপাতে আলমডাঙ্গা পৌরসভা শহরে সম্পূর্ণ ও সুব্যবস্থাপনাসম্পন্ন ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় অনেক সড়কে ও এলাকায় পানি জমে গেছে।
দু দিনের টানা বর্ষণে কুষ্টিয়ায় জনজীবন অচল হয়ে পড়েছে। বৃষ্টিতে শহরের অধিকাংশ দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অনেক বেলা পর্যন্ত বন্ধ থাকছে এবং যানবাহন চলাচল একেবারেই কম। গত মঙ্গলবার রাত থেকে শুরু হয়ে গতকাল শুক্রবার দিনভর একটানা ভারী এবং কখনো হলকা ধরনের বৃষ্টিপাত হয়েছে। হঠাৎ বৃষ্টিতে মানুষের দৈনন্দিন কাজ-কর্মে চরম দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। টানা বর্ষণে কুষ্টিয়া শহরের বেশ কিছু জায়গায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। আবহাওয়া দপ্তরসূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় কুষ্টিয়ায় ২৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঝিনাইদহে তিন দিনের টানা বর্ষণে ঝিনাইদহ পৌরসভার নিচু এলাকা জলমগ্ন হয়েছে। এতে জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। দরিদ্র মানুষের টিনের ঘরে পানি ঢুকেছে। অনেক স্থানে রাস্তার ওপর হাঁটু পানি জমে আছে। শহরে সুষ্ঠু পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার অভাবে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ঝিনাইদহ পৌরসভার মেয়র সাইদুল করিম মিন্টু জানান, পৌরসভার নিচু এলাকায় জমে থাকা পানি নিষ্কাশনের কাজ চলছে। আর বৃষ্টি না হলে আগামীকালের মধ্যে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন সম্ভব হবে।
রাজশাহী অফিস জানায়, ছয় ঘন্টার বর্ষণে রাজশাহীর গোদাগাড়ী পৌর শহর রক্ষা বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে ভোর পর্যন্ত টানা বর্ষণে গোদাগাড়ি পৌর শহরের ভগবন্তপুর-হাটপাড়া এলাকায় প্রায় ১০০ মিটার এলাকাজুড়ে বাঁধ তিন থেকে চার ফুট পর্যন্ত পদ্মা নদীতে নেমে যায়। এছাড়া বাঁধের বহু ব্লক সরে গেছে।
আবহওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, লঘুচাপের কেন্দ্র হয়ে অতঃপর উত্তর-পূর্ব দিকে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত। মরসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে অতি প্রবল অবস্থায় রয়েছে। রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম এবং সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ী দমকা-ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে এবং রংপুর ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণ হতে পারে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত এবং উত্তরাঞ্চলে সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।