অপহরণের আট দিন পর শর্ত ছাড়াই পতাকা বৈঠক
স্টাফ রিপোর্টার: অপহরণের আট দিন পর নায়েক আবদুর রাজ্জাককে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করেছে মিয়ানমারের বিজিপি। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে মিয়ানমারের মংডুতে দু দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে অনুষ্ঠিত পতাকা বৈঠকে তাকে হস্তান্তর করা হয়। বৈঠকে অংশ নেয়া বিজিবি টেকনাফ ব্যাটালিয়নের কর্মকর্তারা নায়েক রাজ্জাককে নিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে টেকনাফে পৌঁছেন।
দেশে ফিরে আসার প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে নায়েক আবদুর রাজ্জাক বলেন, আমি আনন্দিত। আমাকে সুস্থভাবে ফেরত আনায় বিজিবি ও দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এ প্রতিক্রিয়া জানানোর সময় নায়েক রাজ্জাকের বাম নাকের নিচে রক্তের দাগ লক্ষ্য করা গেছে। মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ-বিজিপি তার ওপর নির্যাতন চালিয়েছিল কি-না-এমন প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি তিনি। তাকে ফেরত দেয়ার বিষয়ে একেক সময় একেক ধরনের কথা বলে মিয়ানমার। একবার বলে তাকে মিয়ানমারে বিচার হবে, একবার বলে মিয়ানারে উদ্ধারদের ফেরত নিতে হবে। অবশেষে কোনো শর্ত ছাড়াই ফেরত দেয়া হয়েছে তাকে।
বিজিবি নায়েক রাজ্জাককে দেশে ফেরত আনার পর পিলখানায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি সদর দফতরে মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, মিয়ানমার উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে নায়েক আবদুর রাজ্জাককে ধরে নিয়ে গিয়েছিলো। গত ১৭ জুনের ওই ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ঘটনার সময় বিজিবির দুটি ট্রলারে টহল দেয়া হচ্ছিলো। নিয়ম অনুযায়ী একটি ট্রলারের সাথে আরেকটি ট্রলারের দূরত্ব সাধারণত দেড়শ থেকে দুইশ গজের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু ওই দিন টহলের সময় দু ট্রলারের মধ্যে ৫শ থেকে ৬শ গজ দূরত্ব ছিলো। সামনের ট্রলারটি একটি চোরাকারবারীদের ট্রলার তল্লাশি করার সময় মিয়ানমার থেকে বিজিপির একটি ট্রলার এগিয়ে আসে। ওই ট্রলার থেকে প্রথমে বিজিবির ট্রলার লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়া হয়। বিজিবিও পাল্টা জবাব দেয়। বিজিপির গুলিবর্ষণের সময় সিপাহী বিপ্লব গুলিবিদ্ধ হন। বিজিপির ট্রলারটি খুব কাছে এসে বৈঠা দিয়ে বিজিবির সদস্যদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় দু বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এক পর্যায়ে বিজিপির আরো একটি ট্রলার সেখানে উপস্থিত হয়। বিজিপির সদস্যরা নায়েক আব্দুর রাজ্জাককে ট্রলার থেকে উঠিয়ে নেয়। এ সময় তারা ট্রলারের মাঝিকেও ধরে নিয়ে যায়। তারা ভেবেছিলো, ট্রলার মাঝিও বিজিবি সদস্য। কিন্তু পরে ট্রলারের মাঝিকে তারা ছেড়ে দেয়। তাদের দু ট্রলার পালিয়ে যাওয়ার পর বিজিবির পেছনের ট্রলারটি ঘটনাস্থলে পৌঁছে। মহাপরিচালক আরো বলেন, দায়িত্ব পালনের সময় দু ট্রলারের মধ্যে দূরুত্ব কেন বেশি হলো এবং এ ব্যাপারে কোনো ত্রুটি আছে কি-না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
টেকনাফ ৪২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আবু জার আল জাহিদের নেতৃত্বে সাত সদস্যের প্রতিনিধিদল গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে দুটি স্পিডবোটে করে মংডুর উদ্দেশে রওনা হন। রাজ্জাকের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ওই প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে একজন চিকিত্সকও ছিলেন। পতাকা বৈঠকে মিয়ানমার বিজিপির ২ নম্বর ব্যাটালিয়ন প্রধান লে. কর্নেল থিন হানের নেতৃত্বে ১০ সদস্য অংশ নেন। সকাল ১১টা ২০ মিনিটে মংডুতে বিজিপির সাথে বিজিবির পতাকা বৈঠক শুরু হয়। বৈঠক চলাকালীন দুপুর ১টা ৩৫ মিনিটে বিজিপি নায়েক আব্দুর রাজ্জাককে বৈঠকে উপস্থিত করে। এরপর বিকেল ৩টা ৭ মিনিটে বৈঠক শেষে রাজ্জাককে হস্তান্তর করে। সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষে সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে নায়েক রাজ্জাককে সাথে নিয়ে টেকনাফের উদ্দেশে রওনা দেয় বিজিবি প্রতিনিধি দল।
বিজিবির টেকনাফ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. আবু জার আল জাহিদ বলেন, পতাকা বৈঠকে দু দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরো জোরদার করার দাবি জানানো হয়। বৈঠকে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যেন আর না ঘটে সে বিষয়ে বিজিবির পক্ষ থেকে বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়েছে। বৈঠক শেষে তারা নায়েক রাজ্জাককে তার এসএমজি ও গোলাবারুদসহ ফেরত দেয়।
অবশেষে রাজ্জাককে ফেরত দিলো মিয়ানমার
