টাউয়ারে চাকরির টোপে দু ব্যক্তির নিকট থেকে টাকা হাতিয়ে তিন প্রতারক চম্পট

দামুড়হুদার জুড়ানপুরে এয়ারটেল নেটওয়ার্ক টাউয়ার তৈরির নামে দু শতক জমি ২৪ লাখ টাকায় ভুয়া চুক্তিনামা সম্পাদন
দামুড়হুদা প্রতিনিধি: দামুড়হুদার জুড়ানপুর মোড়ে মোবাইলফোন অপারেটিং কোম্পানি রবির লোক সেজে এলাকায় এয়ারটেল নেটওয়ার্ক টাউয়ার তৈরির কথা বলে ভুয়া চুক্তিনামা করা হয়েছে। ওই চুক্তিনামা দেখিয়ে টাউয়ারে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরির দেয়ার প্রতিশ্রুতিতে নিরীহ দু ব্যক্তির নিকট থেকে ৩০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগকারীরা বলেছেন, তিন প্রতারকের কথামতো তাদের জন্য তিন পদের মাংসসহ বহুপদের খাবারের ব্যবস্থা করে অপেক্ষায় থেকে দিন গড়িয়ে গেলেও তাদের আর দেখা মেলেনি।
যাদের নিকট থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে তারা হলেন- জুড়ানপুর স্কুলপাড়ার মৃত আবু বক্করের ছেলে মিনারুল ইসলাম ( ৪০) ও তার দুলাভাই একই গ্রামের মৃত ইলার উদ্দিনের ছেলে করিমন চালক শরীফ উদ্দিন (৪৫)।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার জুড়ানপুর হাই স্কুলপাড়ার বাসিন্দা মৃত আবু বক্করের ছেলে চা দোকানি মিনারুল ইসলামের কাছে দিন পনের আগে এয়ারটেল নেটওয়ার্ক সার্ভিসের লোক সেজে মোবাইলফোন অপারেটের কোম্পানি রবির গেঞ্জি পরে ৩ ব্যক্তি যায়। আলাপচারিতার এক পর্যায়ে ওই ৩ জন মিনরুলকে বলে, আমরা এখানে একটি টাউয়ার নির্মাণ করবো। দু শতক জমি লাগবে। ভালো দাম দেয়া হবে বলে টোপ দেয়। এ কথা শুনে চা দোকানি মিনারুল বলেন, আমার বাড়ির সাথেই দু শতক জমি আছে। ভালো দাম পেলে দেয়া যাবে। তখন ওই তিন ব্যক্তি বলে আমরা এ এলাকার আরো ৪-৫ জায়গার মাটি পরীক্ষার জন্য নিয়েছি। আপনার জমির মাটিও পরীক্ষা করতে হবে। মিনারুল তার জমির কিছু মাটি নিয়ে পরীক্ষা জন্য তিনজনের নিকট দেন। দেয়ার পর মিনারুলের মোবাইল নম্বর নিয়ে এলাকা ত্যাগ করে ওই ৩ প্রতারক। পরদিন মোবাইলফোনে ওই প্রতারকচক্র মিনারুলকে বলে মাটি পরীক্ষা করে দেখা গেছে আপনার জমির মাটিই টাউয়ার তৈরির উপযোগী। আমরা আপনার জমিটিই কিনবো। পরদিন ওই ৩ প্রতারক আবারও জুড়ানপুরে যায় এবং দু শতক জমি ২৪ লাখ টাকায় ক্রয় করা হবে বলে ৩শ টাকার নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে চুক্তিনামা সম্পাদন করে। চুক্তিনামায় ১ম পক্ষ হিসেবে এয়ারটেল নেটওয়ার্ক সার্ভিস-রোড নং ১৯, ব্লক-ই, এয়াটেল ভবন, বনানী ঢাকা-১২১২ এবং ২য় পক্ষ হিসেবে মিনারুলের সাক্ষর করানো হয়। এর দিন তিনেক পর তারা আবারও জুড়ানপুর যায় এবং টাউয়ারে দুজন সিকিউরিটি গার্ড লাগবে বলে মিনারুলকে জানায়। মাসে ৬ হাজার ৮শ টাকা বেতনে মিনারুল ও তার ভগ্নিপতি শরীফকে সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে নিয়োগ দেয় তিন প্রতারক। তাদের যোগদানের আগেই ১৫ হাজার টাকা করে দুজনের মোট ৩০ হাজার টাকা সিকিউরিটি দিতে হবে বলে জানায়। মিনারুল ও শরীফ জুড়ানপুর বটতলা মোড়ের লিয়নের দোকান থেকে গত বুধবার ০১৬১১-০৪০৭০৭ এ নম্বরে ৩ দফায় মোট ৩০ হাজার টাকা বিকাশ করে। টাকা বিকাশের পর ওই দিন দুপুরে চাকরিতে যোগদানসহ টাউয়ার তৈরির জন্য দু শতক জমির মূল্য ২৪ লাখ টাকা পরিশোধের কথা জানালে ওই প্রতারকচক্রের এক সদস্য মোবাইলফোনে বলে আমরা এখন জীবননগর আছি। মাটি পরীক্ষা করতে এসেছি। আগামীকাল (গতকাল) বৃহস্পতিবার তোমার ওখানে যাবো এবং তোমার বাড়িতে খাওয়া-দাওয়া করবো। এ কথা শুনে মিনারুল গত বৃহস্পতিবার সকালে ৩ পদের মাংস, দই-মিষ্টিসহ নানা আয়োজন করে তাদের জন্য। কিন্তু সকাল গড়িয়ে দুপুর, দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা হলেও আর আসেনি ওই প্রতারকচক্র। মিনারুল বলেন, আমি গত বৃহস্পতিবার সকালে যখন ফোন দিই তখনও তারা বলে আমরা আসছি। কিন্তু দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমি ১৭৩ বার কল দিয়েছি। তারা একবারও ধরেনি। এখনও ধরছে না। এ বিষয়ে বেশ কয়েকজন এলাকাবাসী জানান, দু শতক জমি ২৪ লাখ টাকায় বিক্রি করছে বিষয়টি জানাজানি হলে গ্রামের লোকজন যদি কম দামে জমি দেয়ার প্রস্তাব দেয় এ আশঙ্কা থেকে উনি বিষয়টি চেপে যান। এখন বুঝুক ঠেলা। কথায় আছে- লোভে পাপ আর পাপে মৃত্যু। এদিকে একই কায়দায় ওই প্রতারকচক্র চাকরির লোভ দেখিয়ে ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে সটকে পড়েছে বলে জানান উপজেলার লোকনাথপুর বাসস্ট্যান্ডপাড়ার আ. হান্নানের ছেলে ভুক্তভোগী আব্দুল মমিন। তিনি আরো বলেন, দিন বিশেক আগে ওই প্রতারকচক্র লোকনাথপুরে আসে টাউয়ারের জমির মাটি পরীক্ষার জন্য। আমাকে মাসে ১৮ হাজার টাকা বেতন দেবে বলে জানায়। কিন্তু তারা এখন আর ফোনই ধরছে না।

Leave a comment