বিদেশ থেকে পাঠানো টাকা দামুড়হুদায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং ইন্টারন্যাশনাল প্রতারকচক্রের!
বখতিয়ার হোসেন বকুল: দামুড়হুদায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং করে বিদেশ থেকে পাঠানো ৩ লাখ ১৯ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। টাকা হাতিয়ে নেয়া ব্যক্তি শরিফুজ্জামান হোগলডাঙ্গার মাদরাসা শিক্ষক। তিনি গোপালগঞ্জ জেলা সদরের চন্দ্রদিঘুলিয়া গ্রামের মনিরুজ্জামানের ছেলে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। শরিফুজ্জামান মাস তিনেক আগে হোগলডাঙ্গায় আসেন। জামিয়া ইসলামিয়া দারুস সুন্নাহ নূরানী মাদরাসায় সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাকে গ্রেফতার করতে না পারলেও প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া ৩ লাখ ১৯ হাজার টাকা উপজেলার হোগলডাঙ্গা গ্রামের ইউনুছের কাছ থেকে ফেরত নিয়েছেন।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার নতিপোতা ইউনিয়নের হোগলডাঙ্গা গ্রামের মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে ইউনুছ আলী প্রায় বছর পনের আগে কৃষি ব্যাংক দামুড়হুদা শাখায় একটি সঞ্চয়ী হিসাব খোলেন। যার নং- ২১০৯। বছর পনের আগে ব্যাংক হিসাব খুললেও প্রায় বছর দশেক ধরে ওই অ্যাকাউন্টে আর কোনো লেনদেন হয়নি। গ্রামবাসীর প্রচেষ্টায় ২০১২ সালে ওই গ্রামে প্রতিষ্ঠা করা হয় হোগলডাঙ্গা জামিয়া ইসলামিয়া দারুস সুন্নাহ নূরানি মাদরাসা। ওই মাদরাসায় সহকারী শিক্ষক হিসেবে গত তিন মাস আগে অস্থায়ীভাবে যোগ দেন গোপালগঞ্জ জেলা সদরের চন্দ্রদিঘুলিয়া গ্রামের মনিরুজ্জামানের ছেলে শরিফুজ্জামান ওরফে সুবজ (৪৫)। তিনি সখ্যতা গড়ে তোলে ওই গ্রামের সহজসরল কৃষক ইউনুছের সাথে। দিন বিশেক আগে শরিফুজ্জামান ইউনুছকে জানায়, তার ছোট ভাই সৌদি আরব থেকে কিছু টাকা পাঠাবে। আমার তো এখানে কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই। তোমার কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে? জবাবে সহজসরল কৃষক ইউনুছ বলেন, আমার একটা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে তবে প্রায় ১০ বছর ধরে কোনো লেনদেন নেই। পরদিন ইউনুছের কাছ থেকেই তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর জেনে নেয়। অনলাইন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং করে এবং রেমিট্যান্সের মাধ্যমে দামুড়হুদা বাজার পাড়ার সৌদি প্রবাসী জহুরুলের স্ত্রী হামিদা খাতুনের নামে সৌদি আরব থেকে কৃষি ব্যাংক দামুড়হুদা শাখায় ঐ১৫০৫২৪৩৩০০১৬০৬ নং থেকে পাঠানো দু লাখ টাকা, সুলমা বেগমের নামে সুনামগঞ্জ বাংলা বাজার শাখায় গ১৫০৫২৪৩৩০০০৩৯৩ নং থেকে পাঠানো ১ লাখ ২০ হাজার টাকা, ঝর্ণা বেগমের নামে কুমিল্লার ব্রাক্ষণপাড়া শাখায় ঐ১৫০৬২৪৩৩০০১৬৩৫ থেকে পাঠানো দু লাখ এবং হারুন মিয়ার নামে পিরোজপুর জেলার শাপলিজা বাজার শাখায় গ১৫০৬২৪৩৩০০০৪০০ এ ৪টি অ্যাকাউন্টে পাঠানো মোট ৬ লাখ ৮৪ হাজার টাকা ইউনুছের ওই অ্যাকাউন্টে জমা করেন। দিন পনের আগে সে ইউনুছকে বলে তোমার অ্যাকাউন্টে টাকা এসেছে। তুমি ব্যাংকে গিয়ে খোঁজ নিয়ে এসো। শরিফুজ্জামানের কথামতো সহজসরল ইউনুছ গত ৬ জুন দামুড়হুদা কৃষি ব্যাংকে আসে এবং তার অ্যাকাউন্টে টাকা এসেছে কি-না খোঁজ নেয়। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানায় টাকা এসেছে। পরদিন অর্থাৎ ৭ জুন শরিফুজ্জামান ইউনুছকে সাথে নিয়ে ব্যাংকে আসে এবং ৩ লাখ ১৯ হাজার টাকা তুলে নেয়। ইউনুছকে সাথে করে চুয়াডাঙ্গা ইসলামী ব্যাংকে এসে দিনাজপুরের নতুনবাজার বিরামপুর শাখায় কম্পিউটার মিডিয়া সেন্টার নামে খেলা ২০৪৭ নং কারেন্ট অ্যাকাউন্টে ওই টাকা পাঠিয়ে দেয়। এর একদিন পর অর্থাৎ ৯ জুন সে হোগলডাঙ্গা গ্রামের তিন যুবককে বিদেশ পাঠানো নাম করে প্রায় ৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে এলাকা ত্যাগ করে। এদিকে গত ৮ জুন দামুড়হুদা বাজারপাড়ার হামিদা দামুড়হুদা কৃষি ব্যাংকে আসে এবং তার স্বামী টাকা পাঠিয়েছে কি-না জানতে চাইলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলে টাকা আসেনি। পরদিন তার স্বামীর পাঠানো একটি এসএমমএস নং নিয়ে আবারো ব্যাংকে ছুটে আসে হামিদা এবং ওই গোপন নং টি ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে দেখায়। ওই নম্বর দেখে বিস্মিত হন শাখা ব্যবস্থাপক। বুঝতে পারেন অ্যাকাউন্ট নং হ্যাকিং করে একজনের টাকা অন্য অ্যাকাউন্টে জমা করে তা কৌশলে তুলে নেয়া হয়েছে। নড়েচড়ে বসে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করান। ব্যাংকে ছুটে আসেন উচ্চ পর্যায়ের একটি তদন্ত টিম। তদন্ত করে দেখা যায় সৌদি আরব থেকে পাঠানো ওই ৪টি অ্যাকাউন্টের ৬ রাখ ৮৪ হাজার টাকা ইউনুছের অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে।
ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে ওই অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেন এবং ইউনুছকে ব্যাংকে ডেকে পাঠান। বিষয়টি ইউনুছকে খুলে বলেন এবং তার অ্যাকাউন্ট থেকে উত্তোলনকৃত ৩ লাখ ১৯ হাজার টাকা ফেরত দেয়ার জন্য বলেন। না দিলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান ব্যাংক ম্যানেজার। ইউনুছ নিরুপায় হয়ে জমি বন্দক রেখে ধার দেনা করে ওই ৩ লাখ ১৯ হাজার টাকা গত ১৪ জুন ব্যাংকে ফেরত দেন এবং গত ১৭ জুন এ সংক্রান্তে দামুড়হুদা মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন। এ বিষয়ে কৃষি ব্যাংক দামুড়হুদা শাখা ব্যবস্থাপক হাবিবুর রহমান বলেন, ইমেলের মাধ্যমে বিদেশ থেকে পাঠানো গত ১ জুন প্রথম দফায় ২টি অ্যাকাউন্ট থেকে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা এবং ৪ জুন ২য় দফায় আরো ২টি অ্যাকাউন্ট থেকে ৩ লাখ ৬৪ হাজার টাকা মোট ৬ লাখ ৮৪ হাজার রেমিট্যান্সের টাকা অ্যাকাউন্টের ডাটা টেম্পারিংয়ের মাধ্যমে হ্যাকিং করে ওই অ্যাকাউন্টে জমা করে প্রতারকচক্র। আমরা বিষয়টি জানার সাথে সাথে ওই অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিই। তবে ইউনুছ একজন সহজসরল কৃষক মানুষ তাই তার বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ব্যাংকের ঘর মালিক দামুড়হুদা বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আ. রহিম জানান, ইউনুছের কাছে মালয়েশিয়া থেকে একজন ফোন করে এ বিষয়ে জানতে চাচ্ছিলো। এ থেকে ধারণা করা যায় সৌদি আরব, মালয়েশিয়া ও পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন আইএস’র লোকজন এ কাজ করেছে। তিনি আরো বলেন, ব্যাংক ম্যানেজার একজন খুবই সৎ মানুষ। আমি এরকম ভালো মানুষ খুই কম দেখেছি।
এ বিষয়ে দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি কামরুজ্জামান বলেন, এ ধরনের শ শ প্রতারকচক্র দেশের প্রতন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে আছে। এদের সর্ম্পকে সজাগ থাকতে হবে। তিনি আরো বলেন, একজন অচেনা লোক গ্রামে এসে মাদরাসায় চাকরি শুরু করলো অথচ ওই মাদরাসায় তার বায়োডাট, ছবি কোনো কিছুই নেই এ কেমন কথা। ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের সংশোধন হতে হবে। না হলে এভাবেই লাখ লাখ হাতিয়ে নেবে ওই প্রতারকচক্র।