মরসুমি ফলফলারি এবং কালক্রমে বদলে যাওয়া চিত্র

 

এক সময় ফলফলারির দিকে গাছমালিকের তেমন নজর থাকতো না। গাছের ফল পড়শিদের ছেলে-মেয়েরা ইচ্ছেমতো পাড়বে, খাবে। এরকমই রেওয়াজ ছিলো। কালক্রমে বদলে গেছে সেই রেওয়াজ। এখন বছরান্তে আগেই বাগানের যাবতীয় ফল বিক্রি করে দেয়া হয়। পাহারা দেন বাগানমালিক অথবা বাগানের ফল কেনা ব্যবসায়ীরা। দৃশ্য দেখে অনেকেই দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, বদলে গেছে জামানা। এখন মহল্লার জামগাছেও দামাল শিশুরা ঝেকুড় দিতে সাহস পায় না। কুল বা বরুই গাছের দিকেও তাকানোর জো নেই। তবে এবারের বিদায়ী জ্যৈষ্ঠ তথা মধুমাসে আম নিয়ে কিছুটা হলেও ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা গেছে। ঝড়োবাতাস ওঠার সাথে সাথে বাগানমালিকদের পাশাপাশি পড়শিদেরও আম কুড়োনোর পুরোনো রেওয়াজে ফেরার চিত্র ফুটে উঠেছে। কেন? পড়শিদের প্রতি বাগানমালিকের কি দরদ বেড়ে গেলো? না। আড়ালে রয়েছে আরো অনেক কারণ।

বিগত যুগেরও বেশি সময় ধরে দেখা গেছে আম পুষ্ট হওয়ার আগেই পেড়ে রাসায়নিক পদার্থ প্রয়োগে তা পাকিয়ে বাজারজাত করা হয়েছে। এতে বাগানমালিক লাভবান হলেও ভোক্তাদের যেমন কিনতে হয়েছে চড়া দামে, তেমনই অপুষ্ট রাসায়নিকযুক্ত আম খেয়ে রোগাক্রান্তের ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হয়েছে। এবার তাতে ছেদ পড়েছে। প্রশাসনের তরফে শুরু থেকেই সজাগ দৃষ্টি রাখা হয়। অপুষ্ট আম পেড়ে রাসায়নিক পদার্থ প্রয়োগ করলেই আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণার পাশাপাশি প্রশাসনের বাড়তি তৎপরতা বাগানমালিকদের যেমন সেদিক থেকে ফেরাতে সহায়ক হয়, তেমনই প্রাকৃতিকভাবেও এবার আমের ফলন হয়েছে বেশ ভালো। দাম কম হওয়ায় বাগানমালিকদেরও সেদিকে তেমন জোরালো নজরদারি নেই। পড়শিদের কেউ কেউ যদি ঝড়ে পড়া আম কুড়িয়ে খায় খাক। এ কারণেই কয়েক যুগের বদলানো রেওয়াজে এবার কিছুটা হলেও পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে। তবে আম নিয়ে যে চক্রান্ত থেমে নেই তা নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না। আমের বাগানমালিকরা যদি ফিবছর আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন, অন্য আবাদের চেয়ে বাগানে যদি লোকসান হচ্ছে ভাবেন তা হলে বাগান থাকবে না। তার প্রভাব পড়বে পরিবেশের ওপর। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার দায়িত্ব সকলের।

শুধু আম নয়, যেকোনো মরসুমি ফলই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। ফলে যখনই রাসায়নিক পদার্থের প্রয়োগ করা হয় তখনই তা মানব শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সে কারণে রাসায়নিক পদার্থ প্রয়োগ রোধে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরসহ সারাদেশেই প্রশাসন বাড়তি নজরদারি শুরু করে। বাগানমালিকদেরও সচেতন করতে নানা কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়। এতে বাগানমালিকদের কেউ কেউ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ভোক্তাদের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি যে হ্রাস পেয়েছে তা বলাই বাহুল্য। অবশ্যই বাগানের মালিক বাগানের ফলফলারি কী করবে তার সিদ্ধান্ত নেয়ার দাবিদার। তবে পড়শিদেরও যে তার ওপর হক রয়েছে তাও মনে রাখা দরকার। যদিও বাগানমালিকদের আর্থিক ক্ষতি কাম্য নয়। এ কারণেই মরসুমি ফল সংরক্ষণের দাবি যুক্তিযুক্ত। সংরক্ষণ করতে পারলে অপচয় যেমন রোধ হবে, তেমনই উপযুক্ত প্রাপ্যও পাবেন বাগানমালিক।

Leave a comment