পল্লি ও স্থানীয় উন্নয়নের রূপকার বা স্বপ্নপুরুষ প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম সিদ্দিক কুষ্টিয়া জনপদেরই সন্তান। তার হাতে গড়ে ওঠা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) নামের প্রতিষ্ঠানটি শুধু পল্লির রাস্তাঘাটই উন্নয়ন করেনি, জবাবদিহিতামূলক অন্যতম প্রতিষ্ঠান হিসেবে এক সময় স্বীকৃতি পায়। কালক্রমে তার ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়েছে। উন্নয়ন ধারায় শুধু ছন্দপতনই হয়নি, অভিযোগ উঠেছে জবাবদিহিতা নিয়েও। তদারকি আর জবাবদিহিতায় ঘাটতির আড়ালে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পরিলক্ষিত হয় ভাগাভাগি।
নির্দিষ্ট সময়ে কাজ সম্পন্ন করাই শুধু এলজিইডির বৈশিষ্ট্য নয়, কাজের মানও নির্ণয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হতো। সম্পন্ন হয় সেদিকেও নজর রাখা হতো। উন্নয়নের রূপকার কামরুল ইসলাম সিদ্দিকের স্বপ্নের এ প্রতিষ্ঠান এলজিইডি সম্পর্কে এখন যেসব অভিযোগ উত্থাপন হচ্ছে তা হতাশার। দুর্নীতির রাহুগ্রস্ততায় আটকে উবে গেছে জবাবদিহিতার স্বচ্ছতাও। প্রকল্প কাজ শেষ হওয়ার সময়সীমা কাগজপত্রে থাকলেও বাস্তবে তার বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন তুলে পত্রপত্রিকায় সংবাদও প্রকাশিত হচ্ছে। উন্নয়ন কাজ থেকে শুরু করে পদোন্নতি, বদলি সব ক্ষেত্রেই ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ। অভিযোগের পর অভিযোগেও শীর্ষ পদস্থ কর্মকর্তাদের যেনো কুম্ভঘুম ভাঙছেই না। কোন প্রকল্পের কাজ কতোটুকু এগিয়েছে বা কোথায় আটকে আছে সে খবরটুকুও রাখেন না প্রধান প্রকৌশলীসহ কর্তাব্যক্তিরা। প্রকল্প প্রধানরাও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করার প্রয়োজনবোধ করেন না। প্রকল্পকে লুটপাটের আখড়ায় পরিণত করা কর্তাব্যক্তিদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।
এলজিইডি সম্পর্কে টিআইবি পরিচালিত তিন বছরের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টেন্ডারে কাজ পাওয়া থেকে বাস্তবায়ন পর্যন্ত এ অধিদফতরের প্রকৌশলীদের কমপক্ষে ৩০ শতাংশ ঘুষ দিতে হয়। বছরে গড়ে অন্তত ৬৫০ কোটি টাকার দুর্নীতি হয় বলেও টিআইবির অভিমত। দেশের গ্রামীণ অবকাঠামো ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে এক সময় যে প্রতিষ্ঠানটি মুখ্য ভূমিকা পালন করে বদলে দেয় গ্রামবাংলার রাস্তাঘাট তথা যোগাযোগ ব্যবস্থা, সেই প্রতিষ্ঠানটির এ দশা অবশ্যই অপ্রত্যাশিত। সুনাম পুনরুদ্ধার অপরিহার্য।