মাদক পাচারকারীরা যেনো মরিয়া হয়ে উঠেছে। শুধু চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহেই নয়, সারাদেশেই হরেক পদের মাদকের যেন ছড়াছড়ি। মাদকপাচারকারীচক্রের রাঘববোয়ালেরা দরিদ্র নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোরদের কাজে লাগিয়ে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মাদক ছড়িয়ে দিচ্ছে। হাতের কাছে পাওয়ায় এবং সহজলভ্য হওয়ায় উঠতি বয়সীসহ পেশাজীবীদের অনেকেই মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। দিন দিন মাদকের কালো থাবা যেভাবে সমাজে সম্প্রসারিত হচ্ছে, ভয়াবহ রূপধারণ করছে তা রোধ করতে না পারলে জাতির ভবিষ্যত যে মুখ থুবড়ে পড়বে তা নতুন করে বলাই বাহুল্য।
যা নেশাগ্রস্ত করে সেটাই মাদক। এর মধ্যে ড্রাগভুক্ত নেশাদ্রব্যগুলো অধিক ভয়ঙ্কর। অবাক হলেও সত্য যে, এ শ্রেণির মাদকের সিংহভাগই প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে পাচার হয়ে আসে। আমাদের দেশের তিন দিক জুড়েই রয়েছে ভারত সীমান্ত। কিছু অংশে রয়েছে মিয়ানমারের সীমান্ত। ভারতে প্রস্তুতকৃত কাশির সিরাপ ফেনসিডিল দীর্ঘদিন ধরে এক শ্রেণির পাচারকারীরা অবৈধভাবে পাচার করে আনে। মাঝে মাঝে এদের বড় চালান ধরা পড়লেও মাদকচক্রের রাঘববোয়ালদের টিকি ছোঁয়া যায় না। অবশ্য পাচারকারীদের সহযোগী হিসেবে কাজ করা সমাজের নিম্নবিত্ত পরিবারের নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোরেরা মাঝে মাঝে ধরা পড়ে। এদের কারো কারো বিরুদ্ধে মামলার পাহাড়ও জমে। সাজাও হয়। মাদক পাচার বন্ধ হয় না। মিয়ানমার সীমান্ত দিয়েও ইয়াবা নামের মারণনেশা দেদারছে পাচার করে আনার খবর মাঝে মাঝেই পত্রপত্রিকার পাতায় উঠে আসে। ইয়াবাও এখন ছড়িয়ে পড়েছে দেশের প্রায় সকল প্রান্তে। মারণনেশা হেরোইন-আফিম? কোকেন চৌরসেরও অধিক কম নয়। আর মদ গাঁজা? মদ দেশেও উৎপাদন হয়। যে মদ যে শ্রেণির জন্য বিক্রির বিধি বিধান তথা বাধ্যবাধকতা রয়েছে তাও মানা হয় না অধিকাংশ ক্ষেত্রেই। তাড়ি হাঁড়িয়া? তারও ছড়াছড়ি গ্রামবাংলার মাঠে-প্রান্তরে। অবাক হলেও সত্য যে, মাদকচক্রের দাপটের কাছে সমাজের প্রতিবাদী মানুষগুলোও ক্রমশ অসহায় পড়ছে।
মাদক যখন সহজলভ্য হয়, হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় তখন সঙ্গদোষ, বেকারত্বসহ নানাভাবেই মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে উঠতি বয়সীরা। পেশাজীবীদের অনেকেই জড়িয়ে পড়ে। মাদকাসক্ত অধিকাংশই ফিরতে না পেরে অধঃপতন অনিবার্য হয়ে পড়ে। তার উজ্জ্বল ভবিষ্যতই শুধু নয়, পরিবারটিও ধ্বংস করে ছাড়ে মাদসাক্ত। তার কুপ্রভাব পড়ে সমাজে। মাদক বহু সংসার তছনছ করেছে, করছে। ফলে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, পুলিশ ও সীমান্তরক্ষীসহ আইন প্রয়োগকারী সকল সংস্থারই মাদকবিরোধী অনমনীয় লাগাতার অভিযান চালানো দরকার। সচেতনতা সৃষ্টিসহ সামাজিক আন্দোলনও অপরিহার্য।