স্বামীকে কাছে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন হাসিনা আহমেদ

স্টাফ রিপোর্টার: দু মাস ১৫ দিন পর স্বামী সালাহউদ্দিন আহমেদকে কাছে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন তার স্ত্রী ও সাবেক এমপি হাসিনা আহমেদ। গতরাত ৮টা ২০ মিনিটের দিকে শিলংয়ের সিভিল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন স্বামীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি। ১০ মিনিট পর তিনি হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসেন। সাক্ষাতের সময় হাসিনা আহমেদের ছোট বোনের স্বামী মাহবুবুল কবির ও বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনিসহ কয়েকজন স্বজন উপস্থিত ছিলেন। হাসিনা আহমেদের কান্না দেখে তারাও আপ্লুত হয়ে পড়েন। হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে হাসিনা আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, এদেশের কর্তৃপক্ষ সালাহউদ্দিন আহমেদের প্রতি যে ব্যবহার করছে আমরা তার জন্য কতৃজ্ঞতা জানাই। সালাহউদ্দিন আহমেদের শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ। তার আরও উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা আইনি লড়াই চালাবো। মঙ্গলবার আবারও স্বামীকে দেখতে আসবেন বলে জানান তিনি।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিনকে না দেখেই ফিরে যেতে হয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে বিএনপি সমর্থিত মেয়রপ্রার্থী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়ালকে। কারণ গতকালই তার শাশুড়ি মারা গেছেন। গতকাল সকালে বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক আব্দুল লতিফ জনিকে বিষয়টি জানিয়ে শিলং থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। উল্লেখ্য, গত রোববার শিলং আসেন তাবিথ আউয়াল। তার ইচ্ছে সালাহউদ্দিনের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ আসার পর তার সঙ্গে দেখা করে যাবেন। কিন্তু তার আগেই দুঃসংবাদ পেয়ে ঢাকার উদ্দেশে শিলং ছেড়েছেন।

এদিকে চোখ, হাত ও কান বেঁধে শিলংয়ের গলফ লিংকে আমাকে ফেলে যাওয়া হয়েছে। সে এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি। একমাত্র আমিই বিষয়টি অনুধাবন করতে পারছি। ফেলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমার কাছে মনে হয়েছে ১২ ঘণ্টার জার্নি ছিলো। পাশাপাশি ছিলো দু ঘণ্টা যাত্রা বিরতি। ওই সময় তাদের কিছু কথা শোনা ছাড়া পুরো সময় চোখ, হাত, কান বাঁধা ছিলো। এরপর স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় পুলিশের কাছে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করেছি। গতকাল শিলংয়ের সিভিল হাসপাতালের আন্ডার ট্রায়াল প্রিজনারে (ইউটিপি) চিকিৎসাধীন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। বাংলাদেশে ফিরে আসার ব্যাপারেও দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি। গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় সালাহউদ্দিন আহমেদকে বেশ দুর্বল দেখাচ্ছিলো। তিনি ঠিকভাবে দাঁড়াতে পারছিলেন না। হাঁটতে সমস্যা হচ্ছিলো। একজন পুলিশ সদস্যের সহায়তায় সালাহউদ্দিন হাঁটাচলা করেন। শাদা পায়জামার সাথে শাদা ফতুয়ার ওপর স্টেপ টাইপের চাদর পরা ছিলেন তিনি। সালাহউদ্দিনের সাথে কথা বলার সময় তাকে ইউটিপি সেল থেকে শিলং সিভিল হাসপাতালের মূল ভবনে সিটি স্ক্যান করতে নেয়া হয়। ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী তাকে মূল ভবনে নিয়ে বিভিন্ন টেস্ট করা হয়। সাংবাদিকদের সঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমেদের কথোপকথন হুবহু তুলে ধরা হলো- সালাহউদ্দিন ভাই কেমন আছেন? উত্তর: ভালো না। খুবই অসুস্থ। তবে এখনও জীবিত আছি। কেমন আছেন আপনারা? আপনি কি বাংলাদেশে ফিরতে চান? উত্তর: বাংলাদেশ তো আমার দেশ। কেন ফিরবো না। স্ত্রী এলে লিগ্যাল প্রসিডিউর কমপ্লিট করে ফেরার বিষয়টি ঠিক হবে। কীভাবে ভারতের শিলংয়ে এলেন? স্বেচ্ছায় পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন? উত্তর: আমার চোখ, হাত বাঁধা ছিলো। একটা লং জার্নি। মনে হয় ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা হবে। এর মধ্যে দু ঘণ্টা হয়তো স্টপেজ ছিলো। শিলং গলফ লিংকের কাছে ফেলে রেখে যাওয়ার পর ওই খানের লোকদের বললাম আমাকে পুলিশের কাছে নিয়ে যাও বা পুলিশকে খবর দাও আমার এই অবস্থা। তখন তারা পুলিশকে কল করলো। পুলিশ এসে আমাকে নিয়ে গেলো। অর্থাৎ স্বেচ্ছায় পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছি। পুলিশকে আমার হিস্ট্রি বলার পর তারা হয়তো মনে করেছিলো এটা একটা মেন্টাল পেসেন্ট। আপনি কি এখনই দেশে ফিরতে চান না? উত্তর: দেশে তো এখন রেড এলার্ট জারি করেছে ইন্টারপোল। এটা সরকারের মোটেও উচিত হয়নি। আমি তো কোনো সাজাপ্রাপ্ত দাগি আসামি নই। দেশ ছেড়ে পালিয়ে আসা কোনো আসামিও নই। এটা তারা কেন করছে আমি তো জানি না। আমি একজন রাজনীতিবিদ। গাড়িতে করে নিয়ে আসার সময় কেউ নিজেদের মধ্যে কোনো কথা বলেছিলো কি? উত্তর: আমার তো চোখ, কান বন্ধ ছিলো। তাই এসব কিছু এখন আমার মনে নেই। এখন সেসব কিছু বলতেও পারবো না। আপনি কি মনে করেন বেশি অপরাধ করেছেন? উত্তর: সেটা আমি মনে করি না।

Leave a comment