খুন খারাবির রাজনীতি আর চলবে না
স্টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি-জামায়াতকে ধ্বংস-খুন ও সন্ত্রাসের রাজনীতির ধারক-বাহক হিসেবে আখ্যায়িত করে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, যারা দেশের মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করে, দেশের সম্পদ ধ্বংস করে- তাদের সমর্থন দিবেন না। দেশের উন্নয়ন, প্রগতি ও সমৃদ্ধির জন্য আওয়ামী লীগের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হোন। বিএনপি-জামায়াতের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে খুন, নাশকতা ও ধ্বংসের রাজনীতি আর চলবে না। দেশ ধ্বংসের চেষ্টার সাথে জড়িতরাও বিচারের হাত থেকে রেহাই পাবে না, তাদের কোন ক্ষমা নেই।
গতকাল শনিবার বিকেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ মাঠে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠনের পর এই প্রথম চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে জেলা শহরটিতে সর্বস্তরের মানুষের ঢল নামে। চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোর হাজার হাজার মানুষ এতে যোগ দেন। দুপুর আড়াইটায় জনসভা শুরুর কথা থাকলেও সকাল থেকেই দূর-দূরান্ত হতে মানুষ জনসভায় আসতে শুরু করেন। জনসভাস্থল ছাপিয়ে আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকা জনারণ্যে পরিণত হয়। সংলগ্ন সড়ক ও আশপাশের ভবনের ছাদে বসেও অনেকে মাইকে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শোনেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত মানেই দুর্নীতি, ধ্বংস, সন্ত্রাস, খুন-খারাবি। তারা ক্ষমতায় থাকলেই হত্যা, সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও বাংলা ভাইয়ের সৃষ্টি হয়। আর আওয়ামী লীগ মানেই উন্নয়ন, সমৃদ্ধি ও প্রগতি। তাই আগামীতেও ‘নৌকা’ মার্কায় সমর্থন দিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি। খুনিরা কোন ভোট পেতে পারে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোটের সময় সারাদেশে বিদ্যুতের জন্য হাহাকার ছিলো। আমরা ক্ষমতায় এসে বিদ্যুত্ কেন্দ্র করে দেই। ২০১৩ সালে বিএনপি সেই বিদ্যুত কেন্দ্র আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিলো। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশ যখন এগিয়ে যায়, তখন ধ্বংস করার জন্য তারা উঠেপড়ে লাগে। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে সবার সহযোগিতা কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী।
ভারতের পার্লামেন্টে দু দেশের স্থল সীমান্ত চূক্তির বিল পাস হওয়াকে বর্তমান সরকারের বড় ধরনের কূটনৈতিক সাফল্য উল্লেখ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দীর্ঘ ৪০ বছর পর ভারতের পার্লামেন্টে বিলটি পাস হয়েছে। শুধু এই চুক্তিই নয়, ঐতিহাসিক গঙ্গার পানি চুক্তির মাধ্যমে আমরা ভারত থেকে পানির হিস্যাও আদায় করেছি। ভারত ছাড়াও মিয়ানমারের কাছ থেকে আমরা বিশাল সমুদ্রসীমা অর্জন করেছি। অথচ বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে এসব কিছুই করতে পারেনি।
ব্রিটিশ পার্লামেন্ট নির্বাচনে শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আপনাদের কাছে দোয়া চাই। আপনারা দোয়া করবেন। শুধু দেশে নয়, বিদেশেও আমরা সাফল্য দেখাচ্ছি। আন্দোলনের নামে বিএনপি জোটের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হরতাল-অবরোধে খালেদা জিয়ার কোনও ক্ষতি হয়নি, ক্ষতি হয়েছে সাধারণ মানুষের। যারা ধ্বংসের রাজনীতির সাথে জড়িত তাদেরকে ধরিয়ে দিন। ছিটমহলবাসীর উন্নয়নে সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ছিটমহলবাসীরা এখন নাগরিকত্বসহ সব ধরনের সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাবে। বিদ্যুত্সহ যা যা লাগে তার সবই দেয়া হবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকার উন্নয়নে তার সরকারের ভবিষ্যত পরিকল্পনা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে একটি উন্নতমানের বাস টার্মিনাল, নবনির্মিত শেখ হাসিনা সেতুর সাথে শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলী সেতুর সংযোগ সড়ক, পর্যটন কেন্দ্র, শিশুপার্ক, উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ও প্রতিটি উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণ ছাড়াও আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ভূমিহীনদের আবাসন ও তাদের মধ্যে খাস জমি বিতরণের পদক্ষেপ নেয়া হবে। এছাড়া সোলার সিস্টেমের মাধ্যমে বিদ্যুত সংযোগ প্রদান ও প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নতুন ভবন নির্মাণের প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ প্রশাসক আলহাজ্ব মঈনুদ্দীন মণ্ডলের সভাপতিত্বে জনসভায় আরো বক্তব্য রাখেন রাজশাহীর সাবেক মেয়র এইচএম কামরুজ্জামান লিটন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস এমপি প্রমুখ। এ সময় মঞ্চে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর উপষ্টো ড. তৌফিক-ই-এলাহী, মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার, সাবেক প্রতিমন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এনামুল হক প্রমুখ।
মহানন্দা সেতুর উদ্বোধন: এর আগে বেলা পৌনে ১১টায় ঢাকার তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারযোগে প্রধানমন্ত্রী চাঁপাইনবাবগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হন। বেলা সোয়া ১২টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জর মেজবাহুল হক নতুন স্টেডিয়ামে নির্মিত হেলিপ্যাডে নেমে সার্কিট হাউজে উপস্থিত হলে তাকে গার্ড অব অনার দেয়া হয়। বেলা ১টায় শহরের মহানন্দা নদীর ওপর নির্মিত ‘শেখ হাসিনা সেতু’র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তিনি। এরপর এই অঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের সেতুটি ঘুরে দেখেন তিনি।
মহানন্দা সেতু উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ৪৪ বছরের দুঃখ-দুদর্শার বর্ণনা করতে গিয়ে এ অঞ্চলের বাসিন্দা আইএমইডি’র পরিচালক তাসকেরা খাতুন বলেন, ৯টি ইউনিয়নের ৫ লাখ মানুষকে জেলা সদরে আসতে এতদিন কী দুর্দশা পোহাতে হয়েছে তা বলার নয়। প্রধানমন্ত্রী আমাদের স্বপ্নের এই সেতু উদ্বোধন করে জেলা শহরের সাথে সেতু বন্ধনে আবদ্ধ করলেন। এ অঞ্চলের মানুষের কাছে সত্যিই আজ ‘ঈদের আনন্দের’ দিন। শুধু তাসকেরা খাতুনই নন, এ অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষের মুখেই ছিলো স্বস্তি-প্রশান্তির হাসি।
বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটে জনসভাস্থলে পৌঁছেই ‘ডিজিটাল পদ্ধতিতে’ প্রধানমন্ত্রী জেলা সদরে স্থাপিত যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (যুব ভবন), বাংলাদেশ কৃষি পরমাণু গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) উপকেন্দ্র, জাতীয় অন্ধ কল্যাণ সমিতির নবনির্মিত চক্ষু হাসপাতাল ভবন, বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর কলেজের চারতলা ভিতবিশিষ্ট দ্বিতল (দ্বিতীয়) একাডেমিক ভবন এবং গোমস্তাপুরে নবনির্মিত ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন উদ্বোধন করেন। একই সাথে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালের ১০০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যা উন্নীতকরণ, কানসাট-রোহনপুর-ভোলাহাট সড়ক উন্নয়ন, পদ্মা নদীর ভাঙন রোধে আলাতুলী এলাকা রক্ষা প্রকল্প এবং আমনুরা-চাঁপাইনবাবগঞ্জ ১০০ মেগাওয়াট পাওয়ার স্টেশন নির্মাণ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তিনি। জনসভা শেষে সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারযোগে ঢাকায় ফেরেন।