প্রকৃত রহস্য উন্মোচন করা জরুরি

গুম, হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা গভীর উদ্বেগ ও এমন সংকট সৃষ্টি করছে, যার ফলে জন্ম নিচ্ছে একটি আশঙ্কাজনক অধ্যায়। অথচ এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এরকম চিত্র একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র তথা বাংলাদেশের মতো শান্তিপ্রিয় দেশের সাথে সাংঘর্ষিক। এটা বলাই বাহুল্য যে, বিভিন্ন ঘটনার মধ্যে বিএনপির যুগ্মমহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাটি ছিলো দেশের অন্যতম একটি আলোচিত বিষয়। দীর্ঘদিন পর তার খোঁজ পাওয়া গেছে বলে যখন গণমাধ্যমে জানা যাচ্ছে, তখন বিষয়টি স্বস্তির হলেও, এ কথা বলা দরকার যে, এভাবে একটি দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দলের নেতার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টিকে সহজভাবে দেখার কারণ নেই। কেননা এরকম ঘটনাগুলো সার্বিক অর্থে নিরাপত্তা ব্যবস্থাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে।

তথ্যমতে জানা যায়, বিএনপির নিখোঁজ হওয়া যুগ্মমহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ ভারতের মেঘালয় থেকে ফোন দিয়েছেন বলে দাবি করেন তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদ। আর এর মাধ্যমে দীর্ঘ ৬৩ দিন পর তার সন্ধান পাওয়া যায়। গুলশানের নিজের বাসায় গত মঙ্গলবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে সালাহউদ্দিনের স্ত্রী বলেছেন, দুপুরের আগে মেঘালয় ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড নিউরো-সায়েন্স হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ তাকে ফোন দিয়ে জানায়, সালাহউদ্দিন আহমেদ সেখানে চিকিৎসাধীন আছেন এবং তিনি কথা বলতে চান। এ সময় বেশ কিছুক্ষণ তিনি সালাহউদ্দিন আহমেদের সাথে কথাও বলেন। প্রসঙ্গত আমরা উল্লেখ করতে চাই, গত ১০ মার্চ রাতে উত্তরার একটি বাসা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে বিএনপির যুগ্মমহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদকে তুলে নিয়ে যায় বলে তার পরিবার ও বিএনপি অভিযোগ করে আসছে। যদিও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সে অভিযোগ বরাবরই নাকচ করে দিয়েছে। তবে দীর্ঘদিন পর সালাহউদ্দিন আহমেদের খোঁজ পাওয়া গেলেও সীমান্ত পাড়ি দিয়ে তিনি কিভাবে মেঘালয়ে গিয়ে পৌঁছুলেন এটি এখন আলোচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারতের পুলিশ বলছে, সালাহউদ্দিন আহমেদকে শিলং শহরের বাসিন্দারা উদভ্রান্তের মতো ঘুরতে দেখার পর তারা বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করেন। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রথমে তাকে সেখানকার পোলো গ্রাউন্ড গলফ লিঙ্ক এলাকায় দেখা যায়। পরে তার মানসিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে তাকে একটি সরকারি মানসিক হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

এ ঘটনার প্রকৃত রহস্য উন্মোচন করা জরুরি। কেননা পরিবার ও বিএনপির অভিযোগ পুলিশ পরিচয়ে তাকে তুলে নেয়া হয়েছিলো। আর পুলিশ তা নাকচ করে দিয়েছিলো। ফলে এখন তাকে মেঘালয়ে কিভাবে পাওয়া গেলো এ বিষয়টিকে আমলে নিয়ে এর সাথে কোনো চক্র জড়িত কি না তা-ও খতিয়ে দেখতে হবে। ২০১২ সালে বিএনপির আরেক নেতা ইলিয়াস আলীকেও তার বাড়ির কাছে রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে তুলে নেয়ার ঘটনা ঘটেছিলো। এরপর থেকে ইলিয়াস আলীর আর সন্ধান পাওয়া যায়নি। এছাড়া ঢাকার ওয়ার্ড কমিশনার চৌধুরী আলমকে একই কায়দায় তুলে নেয়া হয়েছিলো তার বাড়ি থেকে। অথচ এসব ঘটনায় রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরের প্রতি বিষোদগার করেছে। ফলে এতে প্রকৃত অপরাধীরা আড়ালেই থেকে যাবে এমন ধারণা হওয়াও অযৌক্তিক নয়।

আমরা বলতে চাই, কয়েক বছর ধরেই অপরাধের একটি নতুন কৌশল হিসেবে দেখা দিয়েছে নিখোঁজ বা গুম হওয়ার বিষয়টি; আর তাতে রাজনৈতিক নেতাকর্মীরাই বেশি গুম হচ্ছেন। সঙ্গত কারণেই এ প্রবণতা যেমন রাষ্ট্রের স্বাভাবিক শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য নেতিবাচক, তেমনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপরও চাপ সৃষ্টি করছে। তাই সার্বিক বিবেচনায় গুম সংস্কৃতিকে প্রশ্রয় দিলে তা কালক্রমে আরো ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে এমন আশঙ্কাকে এড়িয়ে যাওয়া যায় না। আমরা চাই যে কোনো মূল্যে গুম সংস্কৃতির মূলোৎপাটন করে, প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে; যা মানুষের নিরাপত্তার প্রশ্নেই জরুরি।

 

 

Leave a comment