দুর্যোগ মোকাবেলায় আমরা কতোটা প্রস্তুত?

 

মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় ১টা ৫ মিনিটে আবারো ৭.৩ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে নেপালে। এর ফলে বাংলাদেশ-ভারতও কেঁপে উঠেছে। ভূমিকম্পের উপস্থিতি ছিলো নেপালের কোদারি থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে এবং ভূপৃষ্ঠের ১৫ কিলোমিটার গভীরে। ওই এলাকা থেকে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু ৭৬ কিলোমিটার দূরে। তবে ২৫ এপ্রিল ভূমিকম্পের মাত্র ছিলো ৭.৮ মাত্রার এবং আগের যে কোনো সময়ের চাইতে বেশি। এর ফলে নেপালে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় ঘটেছে। ওই ভূমিকম্পে ৮ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে। ওই ভূমিকম্পে বাংলাদেশেও দেয়াল চাপা পড়ে এবং হুড়োহুড়ি করে নামার সময় অন্তত চারজনের মৃত্যু হয়। গতকালের ভূমিকম্পে সারাদেশের মানুষ আবারো আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে। ভয়ে অনেকেই রাস্তায় নেমে আসে। দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশে শক্তিশালী ভূমিকম্প এবং সুনামির আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এর লক্ষণ হিসেবে প্রায়ই দেশের কোথাও না কোথাও মৃদু ও মাঝারি মাত্রায় ভূমিকম্প হচ্ছে। প্রশ্ন হলো ভূমিকম্প মোকাবেলায় বাংলাদেশ কি প্রস্তুত? আমরা কি প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় সক্ষমতা অর্জন করতে পেরেছি? ভূমিকম্প পরবর্তী বিপর্যয় মোকাবেলায় আমাদের প্রস্তুতি থাকতে হবে। পাশাপাশি এর আগে দেশের যেসব ভবনে ফাটল ধরেছে এবং যেসব ভবন ঝুঁকিপূর্ণ তা দ্রুত চিহ্নিত করাও জরুরি। অপরিকল্পিত নগরায়নের ব্যাপারেও সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। রাজধানীর বেগুনবাড়িতে ভবনধসে মানুষ মারা গেল, পুরোনো ঢাকার নিমতলীতে আগুনে পুড়ে মারা গেল বহু মানুষ। কিছুদিন আগে রামপুরায় টিনশেড বাড়ি ধসে মারা গেল ১২ জন। তাদের স্বজনরা এখনো শোক কাটিয়ে উঠতে পারেনি। আর এখন যদি রাজধানীতে ভূমিকম্প সংঘটিত হয়, তাহলে পরিস্থিতি কেমন হবে তা কি ভাবা যায়। হাইতি ও চিলিতে ভূমিকম্প হয়েছে। হাইতির ভূমিকম্পে কমপক্ষে দু লাখ মানুষ মারা গেছে। এ মানবিক বিপর্যয় সত্যিই নজিরবিহীন। ৭ মাত্রার ভূমিকম্পেই এ অবস্থা হয়েছে।

অন্যদিকে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হওয়া সত্ত্বেও নিউজিল্যান্ডে একজন মানুষও প্রাণ হারায়নি। কারণ তাদের ভবন নির্মাণশৈলী এতোটাই মজবুত ছিলো যে, ভূমিকম্পে তাসের কিংবা কাঁচের ঘরের মতো সবকিছু ধসে পড়েনি। দুর্নীতি ও অসততা কোনো কাজে ঢুকে পড়লে তার ফল ভালো হয় না। ক্ষেত্রবিশেষে মহাদুর্যোগ ও অভিশাপ ডেকে আনে। আমরা এসবকে প্রশ্রয় দিয়েছি বলেই আজ আমাদের এ করুণদশা। আমরা মহা আতঙ্ক নিয়ে রাজধানীতে বসবাস করছি, আর মৃত্যুর প্রহর গুনছি।

আমাদের অক্ষমতা, ভীরুতা, সীমাবদ্ধতা এবং দুর্বল ও লোভী মানসিকতাই আজ এ জায়গায় নিয়ে এসেছে। আমরা আজ মৃত্যুর প্রহর গুনছি, কিন্তু মৃত্যু ঠেকাতে পারছি না। আর এ মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী, তাদের টিকেটিও স্পর্শ করতে পারছি না। অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে রাজধানী ঢাকা ভূমিকম্প ঝুঁকিতে রয়েছে সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে পুরোনো ঢাকা। নতুন ঢাকার আধুনিক ভবনগুলোর অবস্থা নাজুক। জলাশয়ের ওপর নির্মিত হয়েছে- আদাবর, বনশ্রী, আফতাবনগর, বসুন্ধরা, উত্তরাসহ কয়েকটি এলাকা। নির্বিচারে পাহাড় কাটা, বিল্ডিং কোড না মেনে বহুতল ভবন নির্মাণ ও বিভিন্নভাবে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্টের ফলে ভূমিকম্প ঝুঁকিতে রয়েছে কক্সবাজারও। মিয়ানমারের পাশের পাহাড়ি এলাকা ও সীতাকুণ্ডু টেকনাফ ফল্ট লাইন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় কক্সবাজারে ভূমিকম্পের প্রবণতা অনেক বেশি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এর ফলে কেবল অর্থনৈতিক ক্ষতিই হবে না বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয় ঘটবে। নগরবাসীকে বাঁচাতে হলে এখনই ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য এখন থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নিতে হবে।

Leave a comment