মেহেরপুরে লিচুর বাম্পার ফলন দাম পেয়ে বাগানমালিক ও ব্যবসায়ীরা খুশি

মহাসিন আলী: মেহেরপুর জেলায় এ বছর লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। দাম পেয়ে বাগানমালিক ও লিচু ব্যবসায়ীরা খুশি রয়েছেন। ইতোমধ্যে মেহেরপুরের বাগান থেকে লিচু ভাঙা শুরু হয়েছে এবং প্রায় প্রতিদিন ১০-১২ ট্রাক করে লিচু কুষ্টিয়া, বরিশাল, রাজধানী ঢাকা ও বন্দর নগরী চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলা যাচ্ছে।

মেহেরপুর জেলা কৃষি বিভাগের হিসেব মতে, মেহেরপুর জেলায় ৫৩৫ হেক্টর জমিতে লিচুর বাগান রয়েছে। এদের মধ্যে বড় ও বয়স্ক গাছগুলো আঁটি জাতের হলেও নতুন যে সব বাগান গড়ে উঠছে সেগুলো বোম্বাই ও মোজাফফরি জাতের। অল্প কিছু রয়েছে চাইনা থ্রি জাতের। মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ মনে করে- এবার তাদের পরামর্শে বাগান মালিকরা বাগান পরিচর্যা করেছেন ফলে লিচুর ফলন ভালো হয়েছে। বোরণ সারের অভাবে লিচু ফেটে যায়। চাষিরা পরামর্শ মত বোরণ সার ব্যবহার করায় এবছর লিচু ফেটে যায়নি। এবছর মেহেরপুরের বাগানগুলো থেকে ৬ লাখ থেকে ৮ লাখ কাউন লিচুর ফলন পাওয়া যাবে। যার বাজার মূল্য হবে প্রায় দেড়শ কোটি টাকা।

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক এসএম মোস্তাফিজুর রহমান জনান- গত বছর লিচুর ফলন বিপর্যয় হওয়ায় বাগান মালিক ও ক্রেতারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হন। গেল বছর একটানা খরা আর অনাবৃষ্টির কারণে মেহেরপুর জেলায় লিচুর ফলন বিপর্যয় ঘটে। একদিকে লিচু শুকিয়ে যায়; অপরদিকে ফেটে গাছ থেকে লিচু ঝরে পড়ে। এতে চাষি ও ব্যবসায়ীদের প্রায় ৫০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। কিন্তু এবার আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় লিচুর ফলন ভালো হয়েছে। প্রথম দিকে বৃষ্টির অভাব থাকলেও কৃষি সম্প্রসারন বিভাগের পরামর্শ মতে বাগনে পানি সেঁচ দেয়ায় এবং লিচুর গুটি বাঁধার পর বৃষ্টি হওয়ায় এবারের লিচুতে কোন রোগ-বালাই ও পোকার আক্রমনের প্রভাব পড়েনি। ফলে লিচু হয়েছে খুব সুন্দর ও মিষ্টি। যার কারণে মেহেরপুরের লিচুর চাহিদা বেড়েছে দেশের বিভিন্ন বাজারে। প্রতিদিন কুষ্টিয়া, বরিশাল ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা ভিড় করেছে মেহেরপুরের লিচুর বাজার ও লিচু বাগানগুলোতে।

এদিকে যারা ব্যবসায়ীদের কাছে অগ্রিম বাগান বিক্রি করেননি তারা প্রায় প্রতিদিন তাদের বাগানের লিচু নছিমন, করিমন ও আলগামন যোগে মেহেরপুর শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গড়ে ওঠা বাজারে নিয়ে আসছেন। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবছর লিচুর বাম্পার ফলন পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন মেহেরপুর সদর উপজেলার খন্দকারপাড়া গ্রামের বাগান মালিক কাজি রণি। তার আড়াই বিঘা জমিতে ৪২টি লিচুর গাছ আছে। তিনি ২ হাজার টাকা কাউন দরে প্রথম চালান লিচু বিক্রি করেছেন। তিনি আরো বলেন- বাম্পার ফলনের পাশাপাশি দাম পেয়ে তার ভালো লাগছে।

সাতক্ষীরা থেকে হাসান নামের এক যুবক মেহেরপুরের বিভিন্ন গ্রামে কয়েকটি লিচুর বাগান কিনেছেন। এবছর লিচুর ফলন ভালো হওয়ায় তিনি খুবই খুশি। তিনি বললেন, বাগানগুলো এক বছরের জন্য যে দামে কিনেছি; সব লিচু বিক্রি করতে পারলে প্রায় তিনগুন লাভ পাবো।

লিচুর বাজারে এসেছেন বরিশালের গৌরীনদী উপজেলার শৌনার্কার গ্রামের বাবুল হাওলাদার। তিনি বলেন, তিনি লিচুর মৌসুমে প্রায় এক মাস আগে মেহেরপুর এসেছেন। মেহেরপুরের বাজার থেকে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ কাউন করে লিচু কিনে বরিশাল পাঠান। বরিশালে মেহেরপুরের লিচুর চাহিদা আছে তাই গেল কয়েক বছর তিনি আম-লিচু উঠার আগে মেহেরপুরে আসেন। তিনি আরো বলেন- এবারের লিচুতে কোন রোগ-বালাই ও পোকার আক্রমন নাই। মেহেরপুরের বাজারে বিক্রি হচ্ছে বিষমুক্ত লিচু। চাহিদা অনুযায়ী মেহেরপুরের বাজারে পাইকারী এক হাজার ৬ শত টাকা থেকে ২ হাজার টাকা কাউন দরে লিচু বিক্রি হচ্ছে। কুষ্টিয়ার পোড়াদহ এলাকার ব্যবসায়ী কামাল জানালেন, মেহেরপুরের বাজার থেকে তিনি লিচু কিনে কুষ্টিয়া, বরিশাল, ঢাকা ও চট্টগ্রাম লিচু পাঠান। এবছরের লিচুর ব্যবসায় তিনি বেশ লাভবান হবেন।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক বাগান মালিক ও বাগান ব্যবসায়ী বলেন- চাঁদাবাজদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। নিরবে চাঁদা দিলেও খুন-জখমের ভয়ে তারা মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। অনেকে চাঁদাবাজদের হাত থেকে রক্ষা পেতে পুষ্ট হওয়ার আগেই গাছের লিচু ভেঙে বিক্রি করে দিচ্ছেন।

Leave a comment