গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর গাংনী খাদ্যগুদাম কর্তৃপক্ষ গম বিক্রি করতে আসা চাষিদের কাছ থেকে উৎকোচ আদায় করছে মর্মে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা এর সাথে জড়িত নয় বলে লিখিত বিবৃত্তিতে জানিয়েছেন কয়েকজন। প্রাথমিক তদন্তে গুদামের কয়েকজনের সম্পৃক্ততার সত্যতা মিলেছে বলে জানান গাংনী থানার ওসি।
আওয়ামী লীগ নেতা শফি, আব্দুল হান্নান, আনারুল ইসলাম বাবু ও জহুরুল ইসলাম শুক্রবার বিকেলে লিখিত এক বিবৃত্তিতে জানান, শফি ও ইদ্রিস আলী খাদ্যগুদাম থেকে চাষিদের কাছ থেকে কোনো টাকা গ্রহণ করেননি। চাষিরা যাতে নিবিঘ্নে গম বিক্রি করতে পারে সেজন্য দলীয় সিদ্ধান্তে তারা গুদাম এলাকায় স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে উৎকোচ আদায়ের অভিযোগ সঠিক নয়। যারা অভিযোগ দায়ের করেছে তারা চাষি নয় এবং তারা গুদামে গম বিক্রি করেনি। ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতেই শফিসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে। গুদাম থেকে যদি টাকা কর্তন করা হয়ে থাকে তাহলে এর সাথে জড়িত খাদ্যগুদামের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তারাই বলতে পারবে কী কারণে উৎকোচ গ্রহণ করা হয়েছে। ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার লক্ষ্যে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হয়েছে।
এদিকে বুধবার চাষিদের কাছ থেকে উৎকোচ নেয়ার ঘটনায় বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ভুক্তভোগী কয়েকজন সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে এ বিষয়ে স্টাটাস দিয়েছেন। গাংনী খাদ্য গুদামের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রশাসনের বিভিন্ন ব্যক্তিকে ভাগ দেয়ার অজুহাতে টাকা কর্তন করেছে বলেও অভিযোগ করেছেন অনেকেই। উৎকোচ আদায়ের বিষয়টি চাপা দিতে গুদাম কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার থেকে ব্যাংক চেকের মাধ্যমে গম কেনার টাকা পরিশোধ করছে। তবে এর মধ্যদিয়েও উৎকোচ আদায় বন্ধ হচ্ছে না। চাষিদের কাছ থেকে ক্রয়কৃত গম ওজন করার আগে পরে গুদামের কয়েকজন ব্যক্তি কিছু নগদ টাকা আদায় করছেন। টাকা না দিলে গম কেনা হবে না বলেও হুমকি দেয়া হচ্ছে। এমন অভিযোগ করে নিবিঘ্নে গম বিক্রির নিশ্চয়তার জন্য সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
তবে অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা দাবি করে গাংনী খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি এলএসডি) জানান, উৎকোচ নেয়া হচ্ছে না। তবে তার অগোচরে গুদামের কেউ যদি টাকা গ্রহণ করে থাকে তাহলে সে বিষয়ে তার কাছে অভিযোগ দিতে হবে। তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলেন তিনি।
ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে উৎকোচ আদায়ের অভিযোগের সত্যতা মিলেছে বলে জানান, গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকরাম হোসেন। তিনি জানান, খাদ্য গুদামে গম বিক্রির পর গত বুধবার চাষিদেরকে নগদে গমের টাকা পরিশোধ করা হয়। ওই সুযোগে গুদামের কয়েকজন ব্যক্তি জোরপূর্বক চাষিদের কাছ থেকে বস্তা প্রতি (প্রতি বস্তায় ৫০ কেজি) কিছু টাকা করে কর্তন করে রাখে। প্রশাসনের বিভিন্ন পদের ব্যক্তিকে ওই টাকা ভাগ দিতে হবে বলেও চাষিদের জানায় তারা। তদন্ত শেষে গুদামের অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি। এলাকার প্রান্তিক চাষিরা সরকারি গুদামে যাতে নায্য মূলে গম বিক্রি করতে পারে সে লক্ষ্যে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, অনেকেই চাষি সেজে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে গম কিনে গুদামে বিক্রির জন্য নিয়ে আসছেন। তাই কৃষিকার্ড দেখে নয়, সরেজমিন যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত চাষিদের কাছ থেকে গম কেনা হবে। ভূয়া চাষি শনাক্ত হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি করেন গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।