ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক দৃঢ়তর হবে

বাংলাদেশ-ভারত প্রতিবেশী বন্ধুত্বপূর্ণ দুটি দেশের মধ্যে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে যেমন ঐকমত্য রয়েছে তেমনি মতপার্থক্যের বিষয়টিও অস্বীকার করা যাবে না। তবে দু দেশের গভীর সম্পর্কের মধ্যে এতোদিন কাঁটার মতো বিঁধে ছিলো স্থলসীমান্ত এবং তিস্তা চুক্তি দুটি। স্থলসীমান্ত চুক্তিটি চার দশক আগে সম্পাদিত হলেও ভারতীয় পার্লামেন্টে তা পাস না হওয়ায় এতোদিনেও বাস্তবায়িত হয়নি। ভারতের শীর্ষ নেতারা চুক্তি দুটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আন্তরিক হলেও নিয়মতান্ত্রিক জটিলতায় আটকে থেকেছে চুক্তি বাস্তবায়ন। ফলে দু দেশের সম্পর্ক গভীর হওয়া সত্ত্বেও কোথাও যেন একটা দূরত্ব থেকেই গেছে। আশার কথা হলো, সম্প্রতি বহুল আলোচিত স্থলসীমান্ত চুক্তি সংশোধনী বিল আকারে সে দেশের রাজ্যসভা অনুমোদন করেছে। এ অনুমোদনের মধ্যদিয়ে স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নিয়মতান্ত্রিক জটিলতার অবসান ঘটলো বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ভারতের এ সিদ্ধান্তের ফলে স্থলসীমান্ত চুক্তি ও এর আওতায় সই হওয়া প্রটোকল বাস্তবায়িত হবে বলে আশা করা যেতে পারে।

অনস্বীকার্য যে, প্রায় চার হাজার কিলোমিটার স্থল সীমান্তসহ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অনেক অমীমাংসিত বিষয় রয়েছে। আর এ বিষয়গুলোর মধ্যে দু দেশের সবচেয়ে স্পর্শকাতর বিষয় হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে স্থলসীমান্ত ও তিস্তা চুক্তি। সত্য যে, সীমান্তে চোরাচালান, ছিটমহলের বাসিন্দাদের মানবেতর জীবনযাপন উভয় দেশের সম্পর্কের জন্য বিব্রতকর, যা অনেকবারই সংবাদ বিশ্লেষণে উঠে এসেছে। দেশি ও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরাও বার বার স্থলসীমান্ত চুক্তি ও প্রটোকল চুক্তি বাস্তবায়নের ওপর তাগিদ দিয়ে এসেছেন। বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণে উভয় দেশের অস্বস্তিকর অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য যৌক্তিক পরিকল্পনা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার কথাও উঠে এসেছে। অবশেষে ভারত সে পথেই হেঁটেছে। এখন ভারত এ চুক্তি বাস্তবায়নে এগিয়ে এলে ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক দৃঢ়তর হবে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সবচেয়ে বড় সহায়তাকারী এবং প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারতের কাছে বাংলাদেশের মানুষের দাবির জায়গাটি স্বচ্ছ এবং বেশি। যে কারণে উভয় দেশের অমীমাংসিত বিষয় মীমাংসা করতে ভারতকেই উদ্যোগী হতে হবে আগে; যা দু দেশের সম্পর্ক একটি নতুন পর্যায়ে উন্নীত করবে। ভারত ও বাংলাদেশ পরস্পর যে মৈত্রীর বন্ধনে আবদ্ধ তা আরো দৃঢ় হবে। কিন্তু অতীতে আমরা লক্ষ্য করেছি ভারত সবসময় তাদের অভিভাবকত্বসুলভ আচরণ করে এসেছে। কিন্তু সম্পর্ক তো এমনই হওয়া সঙ্গত যেখানে পরস্পরের স্বার্থই প্রাধান্য পায়। এতে প্রতিবেশী দু দেশের সম্পর্কের শীতলতা দূরীভূত হয়। রাজ্যসভায় বিলটি অনুমোদনের মধ্যদিয়ে ভারত এ ক্ষেত্রে তাদের আগ্রহটাকেই পুনর্ব্যক্ত করেছে বলে মনে হয়। এখন যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পাদন করে চুক্তি বাস্তবায়নের দিকেই এগিয়ে যেতে হবে।

রাজ্যসভায় অনুমোদন করা এ সংশোধনীর আওতা থেকে আসামকে বাদ রাখা হচ্ছে বলে গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়। ফলে বিল পাসের পর পশ্চিমবঙ্গ, মেঘালয় ও ত্রিপুরার সীমান্তে রদবদল ঘটলেও আসামে তা ঘটবে না। অপদখলীয় জমির মধ্যে মেঘালয়, ত্রিপুরা ও পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তে ২০০০ একর ভূমি পাবে বাংলাদেশ। পশ্চিমবঙ্গ-মেঘালয়-ত্রিপুরার সীমান্ত যেমন নতুন করে চিহ্নিত করা হবে, তেমনি ভারতের ভেতর বাংলাদেশের ৫১ এবং বাংলাদেশের ভেতর ভারতের ১১১টি ছিটমহল বিনিময় হবে। আসামকে রাজনৈতিক কারণে বাদ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও জানা যায়। স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে অনেক জল ঘোলা হয়েছে গত ৬৮ বছরে। উভয় দেশের শীর্ষ পর্যায়ে এ সময়ের মধ্যে অনেক দ্বিপক্ষীয় বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে। শেষ পর্যন্ত চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে সংবিধান সংশোধনীর প্রয়োজন দেখা দেয়। অবশেষে বাংলাদেশ-ভারতের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির প্রচেষ্টায় সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের নতুন ইতিহাস রচিত হতে চলেছে, এমনটি আশা করা যেতেই পারে। রাজ্যসভার অনুমোদন পাওয়া বিলটি বাস্তবায়নের জন্য এখন শুধু লোকসভায় পাস করিয়ে নিতে হবে। আমরা মনে করি, ভারত এটি দ্রুততার সাথে পাস করিয়ে এ চুক্তি বাস্তবায়নের ভেতর দিয়ে দু দেশের মধ্যে বিদ্যমান অস্বস্তি ও অবিশ্বাসের দোলাচল দূর করতে সক্ষম হবে।

Leave a comment