নামকরণ ও বিজ্ঞাপনের মডেল রবীন্দ্রনাথ -মুন্সি আবু সাইফ

অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তাঁর প্রতিভার হিরন্ময় স্পর্শে বাংলা সাহিত্যের প্রতিটি অঙ্গন সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্য ভাস্বর হয়ে উঠেছিলো। শুধু সাহিত্য নয়, বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামকরণের ক্ষেত্রে রবীন্দনাথ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

ভারতের কেন্দ্রীয় বেতার সম্প্রচার মাধ্যমের নাম ‘আকাশ বাণী’। এ আকাশ বাণী নামকরণটি করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ব্রিটিশ ভারতের বিরুদ্ধে অহিংস আন্দোলনের কথা আমরা সবাই জানি। এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মহনলাল করম চাঁদ গান্ধি। মহনলাল করম চাঁদ গান্ধিকে ‘মহাত্মা গান্ধি’ নামে আখ্যায়িত করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। আবার রবীন্দ্রনাথকে ‘কবিগুরু’ উপাধিটি দিয়েছিলেন মহাত্মা গান্ধি।

ফাউন্টেন পেন শব্দের বাংলা ‘ঝরণা (ঝরনা) কলম’ এই নামটি রবীন্দ্রনাথ নিজেই রেখেছিলেন। নোবেল প্রাইজের টাকা দিয়ে বীরভূমের বোলপুরে রবীন্দ্রনাথ যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তার নাম দিয়েছিলেন ‘শান্তি নিকেতন’। শান্তি নিকেতনের অদূরে রবীন্দ্রনাথ হতদরিদ্র মানুষের জন্য যে হস্তশিল্প প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ করেন রবীন্দ্রনাথ তার নাম দেন ‘শ্রীনিকেতন’।

ভারতীয় উপমহাদেশের বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক ছিলেন সত্যজিৎ রায়। সত্যজিৎ রায় ছিলেন বিখ্যাত শিশু সাহিত্যিক সুকুমার রায়ের পুত্র। সত্যজিৎ রায় একমাত্র উপমহাদেশবাসী যিনি চলচ্চিত্রের নোবেল খ্যাত ‘অস্কার’ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন। ‘সত্যজিৎ রায়’ এর নাম রেখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

অমর্ত্য সেন একজন ক্ষণজন্মা বাঙালি। কল্যাণমূলক অর্থনীতির বিশ্ব প্রবক্তা তিনি। এই অসাধারণ কর্মের স্বীকৃতি স্বরুপ তিনি নোবেল প্রাইজে ভূষিত হয়েছেন। নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেনের ‘অমর্ত্য’ নামটি রেখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের বিরোধীতা করে- ‘বঙ্গমাতার অঙ্গ ছেদ, মানি না, মানবো না’ -এই স্লোগানটি লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ।

রবীন্দ্রনাথ তাঁর সমসাময়িক নিম্নোক্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানির বিজ্ঞাপনের মডেল হিসেবে অংশগ্রহণ করেছিলেন- ‘ভারতী ফাউন্টেন পেন’, ‘গোদরেজ কোম্পানি’, ‘জলযোগ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার’ ‘ইন্ডিয়ান রেডিয়াম কারখানা’, ‘কুণ্ডলীন তৈল’, ‘ভারত ফটোটাইপ স্টুডিয়ো’, ‘হিন্দুস্থান কো-অপারেটিভ ইন্সিওরেন্স সোসাইটি লিমিটেড’, ‘নেপিয়ার সেন্ট ওয়ার্কস’, ‘টাটা আয়রন অ্যান্ড স্টিল কোম্পানি লিমিটেড, ‘দি ইন্ডিয়া মেশিনারি কোম্পানি লিমিটেড’, ‘লিপটন টি লিমিটেড’।

উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানগুলো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বিজ্ঞাপনের মডেল হিসেবে ব্যবহার করে প্রচুর মুনাফা অর্জন করেছিলো।

Leave a comment