প্রবাসে আগ্রহীদের দক্ষতা বৃদ্ধিসহ তাদের পথ নিরাপদ করতে হবে

 

জনসংখ্যা বিস্ফোরণের দেশে জনশক্তিই যখন অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি, তখনও এ শক্তির প্রতি আমরা আন্তরিক নই। এ কারণেই আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে শুধু শ্রমের মূল্যই হারাচ্ছি না, মর্যাদাও হচ্ছে ধুলুণ্ঠিত। প্রবাসে শ্রম বিক্রির জন্য পথে বেরিয়ে শুধু প্রতারিতই হচ্ছে না, অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে, হচ্ছে লাশ।

ভূমধ্যসাগরে ট্রলার ডুবিতে হতাহতদের মধ্যে বাংলাদেশের হতভাগাদের সংখ্যা যেমন দিনদিন বাড়ছে, তেমনই থাইল্যান্ড-মালয়েশিয়ার সীমান্তে অপহরকচক্রের ডেরায় পড়ে ধুঁকে ধুঁকে মারা যাওয়া এবং মৃতপ্রায় উদ্ধার হওয়াদের মধ্যেও পাওয়া যাচ্ছে বাংলাদেশিদের মুখ। মিয়ানমার সাগরে ভেসে কতোজনকে যে জলজ প্রাণীর খাবার হতে হয়েছে তারও ইয়ত্তা নেই। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গারও কয়েকজন রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আদম পাচারকারীদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। প্রতিকার?

সারাদেশেই আদমপাচারকারী চক্রের সদস্যরা ছিটিয়ে ছড়িয়ে রয়েছে। বিদেশে ভালো চাকরির কথা বলে শুধু টাকাই হাতিয়ে নিচ্ছে না, বিদেশে পাঠানোর নামে কৌশলে পাচার করছে অপহরকচক্রের ডেরায়। সেখানে আটকে মুক্তিপণের নামে কাড়ি কাড়ি টাকা আদায় করেও মুক্তি দেয়া দুরস্ত, হত্যা করে মাটিতে পুঁতে রাখছে। গতকালও দৈনিক মাথাভাঙ্গাসহ দেশের অধিকাংশ সংবাদপত্রেই সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, কেন সচেতনতা ছড়ানো হচ্ছে না, কেন পাচারকারীদের বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না?

জনসংখ্যা অবশ্যই বোঝা নয় যদি জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তর করা যায়। বিদেশে শ্রম বিক্রি করে প্রেরিত বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে আমরা এখন গর্ব করি। রেমিটেন্স বৃদ্ধির বিষয়টি ফলাও করে স্বনির্ভরতার জানান দেয়ার চেষ্টা করি, করছি। অথচ বিদেশে শ্রমবাজার চাহিদা মতো সৃষ্টি হচ্ছে না। সরকারিভাবে যা কিছু করা হচ্ছে তাতে হুমড়ি খেয়ে পড়লেও প্রবাসে শ্রম বিক্রিতে আগ্রহীদের অধিকাংশই যে বাদ পড়ছে তা বলাই বাহুল্য। তা ছাড়া দেশে কর্মসংস্থানের সঙ্কট তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। এ অবস্থায় যারা ভাগ্যের চাকা ঘোরানোর আশায় প্রতারকের কবলে পড়ছে তাদের অবজ্ঞা না করে প্রতারকদের বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা নেয়াই কি শ্রয় নয়?

দেশে কর্মসংস্থান গড়ে তোলার বিষয়ে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া দরকার। দরকার দক্ষতা বৃদ্ধি। প্রবাসে দক্ষ জনশক্তির মূল্য বেশি। দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সরকারিভাবে প্রবাসে শ্রম বিক্রির নিরাপদ ব্যবস্থা করতে হবে। এতে শুধু দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা আরো চাঙ্গাই হবে না, আন্তর্জাতিক বাজারে দেশের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল হবে। যেনতেন উপায়ে প্রবাসে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করতে গিয়ে অকালে প্রাণহানিসহ কৃতদাস হওয়ার শঙ্কা যে পদে পদে সে সম্পর্কে জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি প্রয়োজন।