জাপানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হ্রাস পেলেও আমাদের দেশে তা চক্রবৃদ্ধিহারেই বেড়ে চলেছে। ফলে শহর সম্প্রসারিত হচ্ছে। গ্রামের পরিধি বেড়ে পাশের গ্রামগুলোর সাথে একসা হয়ে যাচ্ছে। আবাদী জমি গ্রাস করেই গড়ে উঠছে বসতি। উজাড় হচ্ছে বন। চাহিদা বাড়ছে বিদ্যুতসহ সব কিছুর।
শহর, উপশহর, শহরতলী ও গ্রামের সম্প্রসারিত অংশে গড়ে ওঠা বসতিগুলোকে বাসযোগ্য করতে আধুনিক বিজ্ঞান যুগে বিদ্যুতের বিকল্প নেই। প্রথমে দূর থেকে যেনতেন করেই বিদ্যুত সংযোগ নেয়ার রেওয়াজও দীর্ঘদিনের। পরবর্তীতে বৈদ্যুতিক খুঁটি ও তার সম্প্রসারণের মাধ্যমে দুর্বল সংযোগ মজবুত করা হয়। সে লক্ষ্যে প্রতি বছর না হলেও কয়েক বছর পর পরই বিদ্যুত, বৈদ্যুতিন তার সম্প্রসারণ করতে দেখা যায়। বিদায়ী বছরেও চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকায় সম্প্রসারণের কাজ হয়েছে। অথচ হাটকালুগঞ্জসহ বহু এলাকায় বিপদজনকভাবে বিদ্যুত সংযোগ নেয়া হলেও সেদিকে খুঁটি-তার সম্প্রসারণের মধ্যদিয়ে প্রত্যাশা মাফিক ঝুঁকিমুক্ত করা হয়নি। আর সে কারণেই প্রতিবেশীদের সাথে ঝুঁকিপূর্ণ বৈদ্যুতিক তার নিয়ে বাগবিতণ্ডা লেগেই রয়েছে। মারামারিও হচ্ছে। গত রোববার হাটকালুগঞ্জের একটি পরিবার হরিজন সম্প্রদায়ের একটি বাড়ি ভাঙচুর করেছে। প্রতিবেশীদের সাথে সংঘর্ষে উভয়পক্ষের নারীসহ ৮ জন আহত হয়েছে। বৈদ্যুতিক তার টিনের ঘরের ওপর এবং বাগানের গাছের মধ্য থেকে সরিয়ে না নিলে বিরোধ যে মিটবে না, তা সংঘর্ষের ধরন দেখেই অনেকটা স্পষ্ট।
চুয়াডাঙ্গা হাটকালুগঞ্জের একটি পরিবারের অভিযোগ, তাদের বাড়ি সংলগ্ন বাগানের ভেতর দিয়ে বৈদ্যুতিক তার যেনতেন করে টানা হয়েছে। গাছের আম পাড়তে গিয়ে বিপদ না হয় হলো না, ঝড়-বৃষ্টির সময় তার ছিঁড়ে বিপদ হওয়ার আশঙ্কা তো আর অমূলক নয়! এ কারণেই বৈদ্যুতিক তার সরিয়ে নিতে বলায় বিদ্যুত সংযোগ নেয়া পরিবারের সদস্যরা হামলা চালিয়েছে। প্রতিবেশী হরিজন সম্প্রদায়ের পরিবারের সদস্যদেরও অভিন্ন অভিযোগ। তাদের অভিযোগ- ‘টিনের ঘর। টিনের দেয়াল। ওপর দিয়ে বিদ্যুতের তার টানা প্রতিবেশীর। সামান্য বাতাসেই ওই তার ছিঁড়ে টিনের চালের ওপর পড়ার উপক্রম হয়। কখন তা ছিঁড়ে টিনের ঘরে পড়লে পরিবারশুদ্ধই তো মরতে হবে। সে কারণেই তার সরাতে বলেছি যেই, সেই বাড়িতে হামলা। ঘর, দেয়াল কুপিয়ে ক্ষতবিক্ষত করেছে। হাতিয়ে নিয়ে গেছে ঘরে রাখা টাকা।’ এসব বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় মামলা হয়েছে। গতকাল পুলিশের পদস্থ এক কর্মকর্তা সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন। ইতোমধ্যে হামলা মামলার দুজন আসামিকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে একজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
বাসস্থান মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার। কোনো কারণে কারো বাসস্থান ঝুঁকিপূর্ণ হোক তা কাম্য নয়। বিদ্যুত সংযোগ ঝুঁকিমুক্ত করা বাঞ্ছনীয়। বৈদ্যুতিক তার সরিয়ে নিতে বলায় যারা হামলা চালিয়েছে তাদের উপযুক্ত শাস্তি কাম্য। একই সাথে দরকার বিদ্যুত বিতরণের সুব্যবস্থা সম্প্রসারণ।