স্টাফ রিপোর্টার: এক দিন বিরতির পর আবারও গণসংযোগ করলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। শুক্রবার উত্তরে মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের জন্য ভোট চাইলেন তিনি। যমুনা ফিউচার পার্কের পাশে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার প্রবেশপথের মুখে অনুষ্ঠিত এক পথসভায় ভোট কেন্দ্রে সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ক্যান্টনমেন্টে বসে ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় না। সেনাবাহিনী মোতায়েন করলে জনগণ ভোট কেন্দ্রে নির্বিঘ্নে যেতে পারবেন। আমাদের সেনাবাহিনী অন্য দেশের নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সহযোগিতা করে, বিদেশে শান্তি ও নিরাপত্তায় কাজ করে, তাহলে দেশে পারবে না কেন? তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, ভোটকেন্দ্রে ভিন্ন কিছু করার চেষ্টা করলে জনগণ তার জবাব দেবে।
তিনি অভিযোগ করেন, পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের সময়েও সরকার সেনাবাহিনীকে আসতে দেয়নি। সেই কারণে ৫৭ জন চৌকস সেনা কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। এ সরকার একটি খুনি, জালেম সরকার। তিনি বলেন, একজন পথচারী আমাকে বলেছেন, নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করলে ভোটাররা নির্ভয়ে ভোট দিতে পারতেন। আমরাও তা বিশ্বাস করি। সেনা মোতায়েনের দাবি ছিলো জনগণের। কিন্তু বর্তমান নির্বাচন কমিশন এ সরকারের একটি আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। তারা সেনাবাহিনীকে সেনানিবাসে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, ক্যান্টনমেন্টে বসে থাকলে সেনারা ভোটারদের নিরাপত্তা দিতে পারবে না।
খালেদা জিয়া বলেন, আমরা পরিবর্তন চাই। সন্ত্রাসমুক্ত ঢাকা চাই। আওয়ামী লীগ জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। নির্বাচনী প্রচারে যাওয়ার কারণে পরপর ৩ দিন আমাদের গাড়িবহরে হামলা করেছে। আমার প্রাণনাশের চেষ্টা করেছে। তারা ভেবেছিলো গুলি করে আমার পথরোধ করবে। জনগণ আমাদের সাথে আছে, আমরা সামনে এগিয়ে যাবো।
গতকাল শুক্রবার বিকেল ৪টা ৩৫ মিনিটে কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনির মধ্যদিয়ে তার গুলশানের বাসা থেকে গণসংযোগে বের হন। গুলশান অফিসের সামনে থেকে ছাত্রদলের কয়েকশ নেতাকর্মী তার বহরে যোগ দেন। খালেদা জিয়া নতুন বাজার, প্রগতির সরণি, যুমনা ফিউচার সড়ক, বাড্ডা সড়ক, গুলশান লিংক সড়ক, গুলশান এক ও দু নম্বর সড়ক, বনানী এলাকায় প্রচারণা চালান। তার গাড়ির সামনে কয়েকশ ছাত্রদলের নেতাকর্মী কর্ডন করে ধীরগতিতে চলে গাড়িবহর। শতাধিক মোটরসাইকেলও ছিলো এ বহরে। বহর থেকে হ্যান্ডমাইকে বলা হয়- মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও মির্জা আব্বাসকে ভোট দিন, খালেদা জিয়ার সালাম নিন। এ সময় নেতাকর্মীরা রাস্তার দু ধারে লিফলেট বিতরণ করেন। রাত ৮টা ৫০ মিনিটে তিনি গুলশানের বাসায় ফিরে যান। ১৮ এপ্রিল থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজধানীতে দু সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় মির্জা আব্বাস ও উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের পক্ষে প্রচারণা চালান। এ সময় তিন দফা হামলার মুখে পড়ে তার গাড়িবহর। বুধবার বাংলামোটরে তার গাড়িতে হামলা চালানো হয়। এসব হামলায় তার বহরের বেশ কয়েকটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আহত হন বেশ কয়েকজন নিরাপত্তাকর্মী। গাড়ি সংকটের কারণে বৃহস্পতিবার গণসংযোগে বের হননি খালেদা জিয়া।
ভোট গ্রহণের দিন কেন্দ্রে অন্য কিছু করলে জনগণ সমুচিত জবাব দেবে এমন হুঁশিয়ারি দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, আজ ঢাকার মানুষ পরিবর্তন চান। ভোটারদের বলছি, ঢাকা শহরের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে চাইলে, চাঁদাবাজি বন্ধ করতে চাইলে, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানি চাইলে- আপনারা ২৮ এপ্রিল সঠিক জায়গায় ভোট দিন। দয়া করে সবাই সকাল সকাল ভোট কেন্দ্রে গিয়ে নিজের ভোট দেবেন। আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, ভোট কেন্দ্রে ক্ষমতাসীনরা অন্য কিছু করলে আপনারা এর জবাব দেবেন। জনগণ ক্ষমতাসীনদের আর ভোট দেবে না বলেও দাবি করেন তিনি। ঢাকা উত্তরের মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালকে বাস মার্কায়, ঢাকা দক্ষিণে মির্জা আব্বাসকে মগ মার্কায় এবং চট্টগ্রামে মনজুর আলমকে কমলালেবু মার্কায় ভোট দেয়ার জন্য তিনি ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানান।
সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে দেশের বর্তমান চিত্র তুলে ধরে খালেদা জিয়া বলেন, বর্তমান সরকার জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। আজ মানুষের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। যখন-তখন গুম, খুন হচ্ছে। খালে-বিলে মানুষের লাশ ভেসে উঠছে। শুধু তাই নয়, নারীরাও এ সরকারের আমলে নিরাপদ নন। পহেলা বোশেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আওয়ামী লীগের গুণ্ডাদের হাতে নারী নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে।
খালেদা জিয়াও মাঝে মধ্যে রাস্তার পাশের লোকজনকে ডেকে গাড়িতে বসা অবস্থায় লিফলেট দেন। এসব সড়কের দু পাশের পোশাক কারখানার ভবনগুলো থেকে নারী শ্রমিকরা হাত তুলে খালেদা জিয়াকে অভিনন্দন জানাতে দেখা যায়। বনানী মাঠের উল্টো দিকের ইউএই মার্কেট এলাকায় নির্বাচনী প্রচার চালান তিনি। এ সময় স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন, আমরা ভালো নেই। এ কথা শুনে খালেদা জিয়া বলেন, পরিবর্তন হলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।
খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে ঢাকা মহানগর বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, নগর বিএনপি সদস্য সচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, বিএনপি নেত্রী শিরিন সুলতানা, রেহানা আক্তার রানু, হেলেন জেরিন খান, শাম্মী আক্তার, শামা ওবায়েদ, সৈয়দা আসিফা আশরাফি পাপিয়া, আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, রাজিব আহসান, আকরামুল হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।