শৈলকুপার তিনটি ইউনিয়নের ৫ শতাধিক পুকুরের পানিতে পঁচন : ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ : মারা যাচ্ছে লাখ লাখ টাকার মাছ

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: গ্রামের পর গ্রাম পুকুরের পানি পচে যাচ্ছে, ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। মারা যাচ্ছে পুকুরে থাকা ছোট-বড় মাছ। সাধারণ মানুষ ওই পানিতে নামতেও পারছেন না। এ অবস্থা ঝিনাইদহ শৈলকুপা উপজেলার ৫ শতাধিক পুকুরের। গত ৬ এপ্রিলের প্রচণ্ড ঝড়ে গাছের পাতাসহ নানা আবর্জনা পড়ে উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের সিংহভাগ পুকুরের পানিই পচে নষ্ট হয়ে গেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়ে বলেছেন, প্রতিকারের উপায় খুঁজে পাচ্ছি না আমরা।

গ্রামবাসী বলছেন, ওই দিনের ঝড়ে বাড়িঘর ভাঙচুর, ফসলের ক্ষতির পাশাপাশি এখন শুরু হয়েছে এলাকার পুকুর ডোবার পানি নষ্ট হওয়া। আর এ পানি নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে মারা যাচ্ছে পুকুরের থাকা হাজার হাজার টাকার মাছ। কীভাবে এর প্রতিকার তা তারা বুঝে উঠতে পারছেন না। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতি চিহ্নিত করা হলেও পানি দূষণের বিষয়টি নজরে আনা হচ্ছে না।

গত ৬ এপ্রিল ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রচণ্ড ঝড় বয়ে যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় ৬ নম্বর সারুটিয়া ইউনিয়নে। সরকারি হিসাব মতে তিনটি ইউনিয়নে ৪ হাজার ৯১টি পরিবারের ঘববাড়ি আর ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে ২৯১টি পরিবার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। আর সাড়ে ৬ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। ভেঙে পড়েছে অসংখ্য গাছপালা। এখন ক্ষতির তালিকায় যুক্ত হচ্ছে ওই এলাকার পুকুরের জলাশয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, শৈলকুপা উপজেলার হাকিমপুর, সারুটিয়া ও কাচেঁরকোল ইউনিয়নের বেশির ভাগ পুকুরের পানি কালো রঙের হয়ে গেছে। পানিতে গন্ধ ছড়াচ্ছে। গ্রামবাসী বলেছে, পানি বিষাক্ত হয়ে গেছে। পুকুরে থাকা সব মাছ মারা যাচ্ছে। ওই এলাকার মৌকুড়ি গ্রামের রেজাউল করিম জানান, তার বাড়ির সাথেই একটি পুকুর রয়েছে। যে পুকুরের পানি তাদের পরিবারের নানা প্রয়োজনে কাজে লাগে। বিশেষ করে পরিবারের লোকজন এ পুকুরে গোসল করে। ঝড়ের পর গাছের ডাল ভেঙে আর পাতা উড়ে পড়ে পুকুরে। প্রথম তারা বিষয়টি বুঝতে পারেনি। এখন দেখছেন পুকুরের পানির রঙ পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। সেই সাথে পানিতে দুগর্ন্ধ ছড়াচ্ছে। এছাড়া পুকুরে থাকা মাছ মারা যাচ্ছে। তিনি জানান, তার পুকুরের ৬ থেকে ৭ হাজার টাকার মাছ মারা গেছে।

ব্রহ্মপুর গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক জানান, তার তিন বিঘা জলাকারের একটি পুকুর সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। গাছের পাতা আর ময়লা আবর্জনায় পানি পচে নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি জানান, মঙ্গলবার হঠাৎ করে পুকুরের মাছ লাফাতে শুরু করে। এক পর্যায়ে মাছগুলো মারা যায়। তিনি আরো জানান, বিষয়টি কিভাবে তারা মোকাবেলা করবেন তা বুঝে উঠতে পারছেন না। তিনি আরো জানান, এ পানিতে বাচ্চারা নামলে তাদের শরীরে চুলকানি দেখা দিচ্ছে।

সারুটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মাহামুদুল হাসান মানুন জানান, তার নিজের এক একর জলাশয়ের দুটি পুকুরের একই অবস্থা হওয়ায় তিনি শ্যালোমেশিনের সাহায্যে পানি ফেলে দিয়েছেন। আর পুকুরে থাকা সব মাছ বিক্রি করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, এ ক্ষতি সামাল দেয়া এলাকার মানুষের জন্য কষ্টকর হয়ে পড়ছে।

এ ব্যাপারে শৈলকুপা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম জানান, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ৭৭৭টি ছোট বড় পুকুর রয়েছে। যেগুলোতে মাছচাষ হয়। ঝড়ের কারণে পুকুরের পানি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এ বিষয়টি তিনি অবগত নন। তবে পানিতে পাতা পড়লে তা পচে পানির অক্সিজেন সঙ্কট হতে পারে। এতে পানির রঙ পরিবর্তন হয়ে যাবে। সেই সাথে পানিতে থাকা মাছ মারা যাবে। এক্ষেত্রে শতক প্রতি ২৫০ গ্রাম চুন দিলে কিছুটা ভালো হবে। আর শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সন্দীপ কুমার সরকার জানান, এলাকার মানুষ বিষয়টি তাদের অবহিত করেনি। অবহিত করলে খোঁজ নিয়ে দেখবেন।