আশুলিয়ায় আতঙ্ক : ডাকাতি নাকি অন্য কিছু তা খতিয়ে দেখতে পুলিশ ব্যস্ত

স্টাফ রিপোর্টার: সাভারের আশুলিয়ায় দিন-দুপুরে ব্যাংকে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনায় এলাকা জুড়ে বিরাজ করছে চরম ক্ষোভ ও আতঙ্ক। ঘটনার প্রতিবাদে এলাকার দোকানপাট বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যাংকটি এখন বন্ধ রয়েছে। ব্যাংকটির চারপাশে অবস্থান করছেন পুলিশ ও ৱ্যাব সদস্যরা।

গণপিটুনিতে আহত হয়ে গ্রেফতার হওয়া দু ডাকাত সদস্য পুলিশ পাহারায় হাসপাতালে চিকিত্সাধীন। আটক করা যায়নি জড়িত অন্য ডাকাতদের। ব্যাংকের শাখায় স্থাপিত সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিও ফুটেজ পাওয়া যাচ্ছে না। ডাকাতি ও নিহত হওয়ার ঘটনায় থানায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ গ্রেফতার হওয়া এক ডাকাতের গাজীপুরের চন্দ্রা এলাকার ভাড়া বাসা থেকে জিহাদি বই, লিফলেট ও রশিদ উদ্ধার করেছে। গতকাল সকাল থেকেই ডাকাতি হওয়া বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিমিটেডের কাঠগড়া বাজার শাখার ঘটনাস্থলে ভিড় করেন শ শ নারী-পুরুষ।

এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ব্যাংক কর্মকর্তাসহ আটজনের ময়নাতদন্ত শেষ হয়েছে। এদের মধ্যে সাতজনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। গণপিটুনিতে নিহত ডাকাত সদস্যের পরিচয় পাওয়া যায়নি।

স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, অন্যান্য ডাকাতির ঘটনার চেয়ে এ ঘটনাটি ব্যতিক্রম। আটককৃত ডাকাত বোরহান উদ্দিনের বাসা থেকে জিহাদি বই উদ্ধার হওয়ায় বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। দু-এক দিনের মধ্যেই মূল বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে। মন্ত্রী বলেন, নিহত ও আহতদের কি ধরনের ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে তা সরকার ভাবছে।

আশুলিয়ার কাঠগড়ায় ব্যাংক ডাকাতিতে জড়িতদের গ্রেফতারে সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। ডাকাত সন্দেহে আটক দু ব্যক্তির কাছ থেকে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। ডাকাতদলের সদস্য বোরহানের গাজীপুরের ভাড়া বাসা থেকে বিপুলসংখ্যক জিহাদি বই ও লিফলেট উদ্ধার করা হয়েছে। তাই এ ঘটনায় কোনো জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা আছে কি-না তা খতিয়ে দেখবে বলে পুলিশ জানিয়েছে। আটক বোরহান শিবিরকর্মী বলে দাবি করেছে পুলিশ। এদিকে গ্রেনেড ফাটিয়ে ভয়ঙ্কর এ ডাকাতির পরদিন বুধবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, ওই এলাকায় থমথমে ভাব বিরাজ করছে। নিহতদের স্বজনের আহাজারিতে পরিবেশ ভারি হয়ে আছে। থানায় অজ্ঞাত শতাধিক ব্যক্তিকে আসামি করে মামলার পর গ্রেফতার আতংকও দেখা দিয়েছে।

ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান বলেন, ডাকাত দল শুধু লুণ্ঠনের জন্য ব্যাংকে হামলা করেনি, তাদের উদ্দেশ্য ছিলো এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করা। ওই এলাকার মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। অনেকে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। ডাকাতি ও খুনের ঘটনায় আশুলিয়া থানায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় ব্যাংকের ৫ কর্মকর্তাকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। একই সাথে সন্দেহজনক আচরণের কারণে ব্যাংকের এক সিকিউরিটি গার্ডকে আটক করেছে পুলিশ। এছাড়া বুধবার স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ডাকাতদের হামলায় নিহত শাখার কর্মী ও গ্রাহকদের পরিবারকে এক লাখ টাকা করে আর্থিক অনুদান দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এদিকে নিহত সাতজনের লাশ বুধবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। গণপিটুনিতে নিহত ডাকাত সদস্যের পরিচয় মেলেনি। তার লাশ মর্গে রাখা হয়েছে।

Leave a comment