গ্রামবাংলায় ডাকাতদলের উৎপাত বেড়েছে

গ্রামবাংলায় ডাকাতদলের উৎপাত বেড়েছে। বেড়েছে ডাকাতি প্রতিরোধের সাহসও। পুলিশি তৎপরতা বাড়লে ডাকাতির সংখ্যা শুধু হ্রাসই পাবে না, অপরাধ প্রবণতা প্রতিরোধে গ্রামবাসীও হবে উজ্জীবিত। ফলে ডাকাতদল হারাবে আশ্রয়, অপরাধ করে ওরা পালানোর পথ পাবে না। সে কারণেই দরকার পুলিশের আস্থা অর্জনের মাধ্যমে জনতার সহযোগিতা নেয়া।

চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের হানুরবাড়াদী গ্রামে এক ভূষিমাল ব্যবসায়ীর বাড়ি ডাকাতদল হানা দেয়। গৃহকর্তা ও তার গৃহিণীকে জিম্মি করে ডাকাতির সময় ছেলে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। বোমা উপেক্ষা করে প্রতিবেশীর সহযোগিতায় একজনকে হাতেনাতে ধরতেও সক্ষম হন তারা। ধরাপড়া ব্যক্তিকে পুলিশে দেয়া হয়েছে। ৭ সদস্য মিলে তারা ডাকাতি করতে যাওয়ার কথা জনতার সামনে যেমন স্বীকার করেছে, তেমনই দুজন সদস্যের নামও বলেছে। ঠিকানা বিভ্রান্তকর দিলেও তদন্তে তাদের সঠিক ঠিকানা বেরিয়ে এসেছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। অথচ ধরা পড়েনি। উদ্ধার হয়নি ডাকাতি হওয়া টাকা।

চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার পল্লি খাসকররার একটি বাড়িতে কয়েকজনের একদল ডাকাত হানা দেয়। গৃহকর্তাকে জিম্মি করে শ্যালোইঞ্জিনচালিত দুটি আলমসাধুতে মেরে রাখা তালার চাবি চায় ডাকাতদল। পিতাকে জিম্মিদশা থেকে মুক্ত করতেই শুধু নয়, ডাকাতদলকে প্রতিহত করতে গিয়ে দু ছেলে ধারালো অস্ত্রের কোপে রক্তাক্ত জখম হয়েছে। প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় ডাকাতদলের পিছু ধাওয়া করে হাতের নাগালে পেলেও শেষ পর্যন্ত আটকে রাখা যায়নি। ডাকাতদল যে খেলনা পিস্তল আর ধারালো অস্ত্র নিয়ে জিম্মি করতে চেয়েছিলো তা বোঝার পর সাহসী হয়ে ওঠেন পিতা-পুত্রসহ ৪ জন।

এদিকে জীবননগর উপজেলা শহরের কাজীপাড়ায় সশস্ত্র একদল ডাকাত হানা দিয়ে সোনার গয়নাগাটি ও নগদ টাকা ডাকাতি করে পালিয়েছে। মোটরসাইকেলও ডাকাতদল ডাকাতি করে নিয়ে গেছে। ডাকাতির শিকার পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, ডাকাতদল বাড়ির গ্রিল কেটে ভেতরে প্রবেশ করে। এরপর পরিবারের সদস্যদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ডাকাতি-লুটপাট শুরু করে। ঘটনার খবর পেয়ে গতকাল জেলা পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তা সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ডাকাতদল ধরা পড়েনি। উদ্ধার হয়নি ডাকাতি করা মালামালের একটিও।

চুয়াডাঙ্গা জেলার তিন প্রান্তে পৃথক তিনটি ডাকাতির ঘটনা কয়েকদিনের ব্যবধানে সংঘটিত হয়েছে। এ ক’দিনে আর কোথাও যে ঘটেনি তাও নিশ্চিত করে বলা কঠিন। কেননা, বহু খবরই পত্রিকার পাতায় উঠে আসে না। ডাকাতির শিকার হয়েও অনেকে পুলিশে নালিশ করে না। পুলিশকে জানানোর তাগিদে ঘাটতির যথেষ্ট কারণও আছে। সম্প্রতি লক্ষ্য করা যায়, নালিশের পর অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিড়ম্বনা যতোটা, পুলিশের অতোটা তৎপরতা পরিলক্ষিত হয় না। হলে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বড় বড় ডাকাতির ঘটনায় হাতেগোনা কিছু সন্দেহভাজনকে ধরে আইনে সোপর্দ করা ছাড়া মালামাল উদ্ধারের তেমন উদাহরণ নেই।

পূর্বের তুলনায় গ্রামবাংলায় অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ঝনঝনানি কমেছে। সে কারণেই সাধারণ মানুষের সাহস বেড়েছে। এরপরও নিরস্ত্র মানুষ কতোটাই আর সাহস দেখাতে পারে? পাশেই সহযোগিতার হাত নিয়ে পুলিশ আছে জানলে সম্মিলিত প্রতিরোধের গতি বাড়ে বটে। আর যাই হোক, চুয়াডাঙ্গা জেলায় তো আর পুলিশে অপ্রতুলতা বলে দায় এড়ানো যায় না। কারণ, ৪টি উপজেলার ৩৫টি ইউনিয়নে ৩৬টি পুলিশ ফাঁড়ি। গ্রামপর্যায়ে পুলিশি টহল জোরদার হলে ডাকাতদলের গতিবিধি ডাকাতির পূর্বেই টের পাওয়ার কথা। কারণ, এ জনপদের মানুষ নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থেই পুলিশকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।

ডাকাতদল আকাশ ফুঁড়ে আসে না। সমাজেরই কেউ কেউ অপরাধী। পুলিশি তৎপরতা বৃদ্ধি হলে ওদের আশ্রয়প্রশ্রয় দিতেও কেউ সাহস পায় না। আশ্রয়প্রশ্রয় না পেলে এক এলাকার অপরাধী অন্য এলাকায় অপরাধমূলক ঘটনা ঘটাতে পারে না। সে লক্ষ্যে এলাকাবাসীর যেমন দরকার সজাগ দৃষ্টি, সহযোগিতার মানসিকতা, তেমনই দরকার পুলিশি তৎপরতা।