টানা জয়ে সিরিজ বাংলাদেশের : হোয়াইটওয়াশের অপেক্ষা

স্টাফ রিপোর্টার: অসাধারণ ব্যাটিং। অবিস্মরণীয় জয়। এক জয়ে দুই অর্জন। ১৬ বছরের অধরা জয়ের পর সিরিজও জয়। অনন্য এক বাংলাদেশকে দেখলো ক্রিকেটবিশ্ব। দু খেলায় দু জয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জিতে নিলো বাংলাদেশ। লক্ষ্য এবার হোয়াইটওয়াশ। বুধবার তৃতীয় খেলায় মুখোমুখি হবে দুই দল। গতকাল ড্যান কেক ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশ জয় তুলে নেয় দাপট দেখিয়েই। টসে জিতে পাকিস্তান সংগ্রহ করে ৬ উইকেটে ২৩৯ রান। ২৪০ রানের লক্ষ্য বাংলাদেশ টপকে যায় সাত উইকেট আর ৭১ বল (১১.৫ ওভার) হাতে রেখেই। মিরপুরের শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে পুরো খেলায় একবারের জন্যও পাকিস্তান বাংলাদেশকে পেছনে ফেলতে পারেনি। বরং ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ শুরু থেকেই অনেক এগিয়ে ছিল পাকিস্তানের চেয়ে। আবারও তামিম ইকবাল আর মুশফিকুর রহিমের ব্যাটিংয়ে মুগ্ধ লাখো ক্রিকেটপ্রেমী। টানা দু খেলায় শতরান করে সমালোচকদের সব মুখ ম্লান করে দেন তামিম ইকবাল। তামিম সেঞ্চুরি পুরো করলেও মুশফিক ৭০ বলে ৬৫ রান করে ফিরে যান যখন তখন জয়ের জন্য বাকি ছিলো মাত্র ২২ রান। অনেকক্ষণ দাঁতে দাঁত চেপে থাকা তামিম শেষ পর্যন্ত তার শতক পূর্ণ করেন চার মেরেই। এটি তার ষষ্ঠ শতরান। ৫০ রানের মধ্যে ১২টি চার আর পরের ৫০-এ চারটি চার। ৩১ বলে ৫০ আর ১০০ রান ১০৮ বলে। শেষ পর্যন্ত ১১৬ বলে ১১৬ রানে অপরাজিত থাকেন তামিম। এ খেলায় আর তার ম্যাচসেরার পুরস্কারটি কেউ নিতে পারেননি। আগের খেলায় তার চেয়ে কম রান করেও ম্যাচ সেরা হন মুশফিক।

বাংলাদেশের সাবলীল ব্যাটিং দেখে প্রধানমন্ত্রীও যেন অধীর হয়ে পড়েন। ছুটে যান স্টেডিয়ামে, খেলা উপভোগ করেন শেষ পর্যন্ত। এ সময় বাংলাদেশ ক্রিকেটবোর্ড প্রধান নাজমুল হাসান তাকে অভ্যর্থনা দেন। তার আগে নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে যান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদপ্রার্থী আনিসুল হক। ২৪০ রানের লক্ষ্যটা খুব বড় মনে হয়নি কারও কাছে। প্রথম খেলার ধরনেই এ আত্মবিশ্বাসটা জন্মায় সবার মধ্যে। অন্য সময় হলে এ লক্ষ্যটাই বাংলাদেশের জন্য অনেক কঠিন বিবেচিত হতো। তারপরও সাবধানীরা ছিলেন দুরু দুরু বুকে। শুরুটা করেছিলেন সৌম্য সরকার। প্রথম দুই ওভারে ৫ রান করে ১০ রান যোগ হওয়ার পর শুরু হয় ঝড়। জুনাইদ খানের দ্বিতীয় ওভারে প্রথম তিন বল সীমানার বাইরে পাঠিয়ে সৌম্য সরকার জাগিয়ে তোলেন বাংলাদেশকে। অবশ্য অপ্রয়োজনীয় আক্রমণাত্মক হয়ে পঞ্চম বলে উইকেট দিয়ে ফিরে আসেন অতি আত্মবিশ্বাসী সৌম্য। তার ১১ বলে ১৭ রানের মধ্যে চারটিই চার। মাহুমুদুল্লাহ রিয়াদও নেমেই চার দিয়ে শুরু করলেও কেমন যেন চুপসে থাকেন। তবে তামিমের মারমুখি ব্যাটিংয়ে রানের চাকা গতিশীল থাকে। ৬ ওভারে ৫০ পূর্ণ হওয়ার পর ১০ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৮৩ রান। ওয়াহাবের করা দশম ওভারের শেষ তিন বলই সীমানার বাইরে পাঠান তামিম। টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে বাংলাদেশের এমন সূচনা খুব কমই দেখা যায়। তবে পরের চার ওভারে রান ওঠে কম। ওয়াহাব রিয়াজ আর আজমলকে খানিকটা সমীহ করতে থাকেন অথবা নিজেদের লাগাম টেনে নেন তামিম-রিয়াদ। ১৫তম ওভারের প্রথম বলে মাহমুদুল্লাহ যখন সাঈদ আজমলের প্রথম শিকার হন তখন বাংলাদেশের সংগ্রহ ১০০। এর আগেই তামিম ইকবাল তার ফিফটি পুরো করেন ৩১ বলে। এর মধ্যে ৪৮ রানই আসে বাউন্ডারি থেকে। অনেক কম বলে ফিফটির রেকর্ড থাকলেও ৫০ রানে ১২ বাউন্ডারির ঘটনা বিরলই। ১৪৩তম ওয়ানডেতে এটিই তার দ্রুততম ফিফটি। ৪১ বলে ৫০, ৮১ বলে ১০০ হয় স্বাগতিকদের। ২৮ বলে ১৭ রান করেন তিনি। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের এ সফল ব্যাটসম্যান চার নম্বর থেকে তিন নম্বরে উঠে যেন খাপছাড়া দেখাচ্ছেন। এরপর তামিম ইকবাল আর মুশফিকুর রহিম যেন আগের খেলারই রিপ্লে দেখাতে থাকেন। কোনো বলই তাদের কাবু করতে পারছিলো না। ৩০তম ওভার শেষ হওয়ার একবল যখন বাকি তখনই গোলমাল দেখা দেয় স্টেডিয়ামের ফ্লাডলাইটে। এ সময় আলোর স্বল্পতায় খেলা বন্ধ থাকে ১৫ মিনিটের বেশি। বাংলাদেশের সংগ্রহ তখন ২ উইকেটে ১৮৩। জয় একেবারে হাতের মুঠোয়। প্রথম ওয়ানডেতে ১৭৮ রানের রেকর্ডজুটি গড়া এ দুজন তাদের ধারাবাহিকতার অপূর্ব দৃষ্টান্ত দেখান। এদিন তারা গড়েন ১১৮ রানের জুটি।

এর আগে টস জিতে পাকিস্তান ব্যাটিং বেছে নেয় প্রথম খেলার কথা স্মরণ করে। শুক্রবার বাংলাদেশ টস জিতে ব্যাট করে তুলে নেয় ৩২৯ রান। দিনরাতের খেলা বলে ভেবেছিলো আগে ব্যাটিং করে তারা মজাটা বুঝাবে। কিন্তু আজহার আলীর সতীর্থরা বাংলাদেশের স্পিনারদের সামনে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেননি। ৭ ওভার পর্যন্ত উইকেট অক্ষত রেখে ৩৬ রান তোলার পর ধস নামে পাকিস্তানের ইনিংসে। অষ্টম ওভারে রুবেল হোসেনের প্রথম বলে সরফরাজ বিদায় নিলে শুরু হয় পতন। এরপর রান সংখ্যা দ্বিগুণ হতেই আউট হয় আরও চারজন। ৭৭ রানে পঞ্চম উইকেট পতনের পর পাকিস্তানের সংগ্রহ খুব বড় হবে বলে মনে হয়নি। কিন্তু ষষ্ঠ উইকেটে হারিস সোহেল ও সাদ নাসিম আরও ৭৭ রান তুলে দলের ইজ্জত বাঁচানোর প্রাথমিক কাজটা সারেন। হারিস রানে বিদায় নিলেও নাসিম থাকেন দৃঢ়। সপ্তম উইকেটে নাসিম ও ওয়াহাব রিয়াজ ৮৫ রানের হার না মানা জুটি গড়ে স্কোর সম্মানজনক পর্যায়ে নিয়ে যান। নাসিম তার দ্বিতীয় খেলায় প্রথম ফিফটি তুলে ৭৭ রানে অপরাজিত থাকেন ৯৬ বল খেলে। তবে অলরাউন্ডার হয়ে ওঠার প্রত্যয় ঘোষণা দেয়া ওয়াহাব রিয়াজ তার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটি করেন ৪০ বলে। বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সাকিব আল হাসান দুটি আর রুবেল, আরাফাত সানি, মাশরাফি ও নাসির হোসেন একটি করে উইকেট নেন। তবে বাংলাদেশের স্পিনাররাই পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানদের সমীহ আদায় করেন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর: পাকিস্তান: ৫০ ওভারে ২৩৯/৬ (আজহার ৩৬, সরফরাজ ৭, হাফিজ ০, হারিস ৪৪, ফাওয়াদ ০, রিজওয়ান ১৩, নাসিম ৭৭*, ওয়াহাব ৫১*; সাকিব ২/৫১, নাসির ১/১৭, রুবেল ২/২৭, আরাফাত ১/৪১, মাশরাফি ১/৫২)। বাংলাদেশ: ৩৮.১ ওভারে ২৪০/৩ (তামিম ১১৬*, সৌম্য ১৭, মাহমুদউল্লাহ ১৭, মুশফিক ৬৫, সাকিব ৭*; আজমল ১/৪৯, রাহাত ১/৫৭, জুনায়েদ ১/৬১)। ম্যাচ সেরা: তামিম ইকবাল।