স্টাফ রিপোর্টার: পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ তিনটি ওয়ানডেতে জয়ের খুব কাছ থেকে ফিরতে হয়েছিলো বাংলাদেশকে। এবার শেষটা আর বেদনার হয়নি। তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিমের শতকে ১৬ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে জিতেছে তারা। পাকিস্তানকে ৭৯ রানে হারিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে শেষবার পাকিস্তানকে হারিয়েছিলো বাংলাদেশ।
গতকাল শুক্রবার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৬ উইকেটে ৩২৯ রান করে বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে এটাই তাদের সর্বোচ্চ রান। আগের সর্বোচ্চও ছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে, গত বছর এশিয়া কাপে করা ৩ উইকেটে ৩২৬ রান। জবাবে ৪৫ ওভার ২ বলে ২৫০ রানে অলআউট হয়ে যায় পাকিস্তান। একাদশ ওভারে আঘাত হানেন আরাফাত সানি। এ বাঁহাতি স্পিনারের বলে স্লগ সুইপ করে ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে নাসিরের দারুণ ক্যাচে পরিণত হন সরফরাজ আহমেদ।
আরাফাতের পরের ওভারে রান আউট হয়ে যান মোহাম্মদ হাফিজ। আজহার আলী মিডঅনে বল পাঠিয়ে এক রান নিতে দৌড় শুরু করেন। সাড়া দিতে একটু দেরি করেন বলের দিকে তাকিয়ে থাকা হাফিজ। দেরিতে দৌড়ানোর মাসুল তিনি দেন সৌম্য সরকারের চমৎকার থ্রোয়ে রান আউট হয়ে। ২৮তম ওভারে আজহার আলীকে মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসবন্দি করে পাকিস্তানের প্রতিরোধ ভাঙেন তাসকিন আহমেদ। তার আগের বলটি আজহারের ব্যাটের কানায় লেগে মুশফিকের পাশ দিয়ে চার হয়ে যায়। পরের বলটি উইকেটরক্ষকের পাশ দিয়ে আবার সীমানায় পাঠাতে চেয়েছিলেন কিন্তু এবার মুশফিকের গ্লাভসে জমা পড়েন আজহার। অর্ধশতকে পৌঁছুনো হারিস সোহলকেও ফেরান তাসকিন। তার বলে পুল করতে গিয়ে টাইমিংয়ে গড়বড় করে মিডঅনে মাহমুদউল্লাহর ক্যাচে পরিণত হন হারিস।
৪০তম ওভারে ফাওয়াদ আলম ও সাদ নাসিমকে ফেরান আরাফাত। ফুলটস বলে মিডঅফে সৌম্য সরকারের হাতে ধরা পড়েন ফাওয়াদ। পরে সাদ নাসিমকে বোল্ড করে পাকিস্তানের বিপদ আরো বাড়ান আরাফাত। ৪৪তম ওভারে ওয়াহাব রিয়াজকে বোল্ড করেন তাসকিন। এর আগে তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিমের শতকে পাকিস্তানের বিপক্ষে নিজেদের সর্বোচ্চ সংগ্রহ গড়ে বাংলাদেশ। তাই প্রথম ওয়ানডেতে জয়ের জন্য ৩৩০ রানের বিশাল লক্ষ্য পেয়েছে অতিথিরা। গতকাল শুক্রবার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৬ উইকেটে ৩২৯ রান করে বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে এটাই তাদের সর্বোচ্চ রান। আগের সর্বোচ্চ ৩ উইকেটে ৩২৬ রানও ছিলো পাকিস্তানের বিপক্ষে, গত বছর এশিয়া কাপে।
তামিমের সাথে ইনিংস উদ্বোধন করেন সৌম্য সরকার। শুরুতে রাহাত আলির বলে রান নিয়ে দলকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন তামিম ও সৌম্য। ষষ্ঠ ওভার শেষে রাহাতকে বোলিং থেকে সরিয়ে নেওয়ার পর স্বাগতিকদের রানের গতিতে ভাটা পড়ে। ইনিংসের প্রথম দিকে জুনায়েদ খান, ওয়াহাব রিয়াজ ও সাইদ আজমলের বলে রান নিতে লড়াই করতে হচ্ছিলো বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের। ৬ ওভার শেষে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৩১ রান সংগ্রহ করার পর পরের ৭ ওভার ২ বলে যোগ করে মাত্র ১৭ রান। রানের গতি কমে যাওয়ায় অস্বস্তিতে পড়েন দু উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান। দ্রুত সিঙ্গেলস নিয়ে চাপ থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করেন এ দু জন। সেই চেষ্টা করতে গিয়েই সৌম্যের রান আউটে ভাঙে ৪৮ রানের জুটি। শুরুতে সহজ রান দেয়া রাহাত দ্বিতীয় স্পেলে হিসেবি বোলিং করে বাংলাদেশের ওপর চাপ আরও বাড়ান। ১৮ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান ছিলো ১ উইকেটে ৫৯ রান। চার বিশেষজ্ঞ বোলার নিয়ে খেলা পাকিস্তানকে ১০ ওভার করাতে হয় অভিষিক্ত সাদ নাসিম, হারিস সোহেল ও অধিনায়ক আজহার আলীকে দিয়ে। তাদের ১০ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৭৯ রান সংগ্রহ করে নিজেদের ওপর থেকে চাপটা সরিয়ে নেয় স্বাগতিকরা। উইকেটে ততোক্ষণে খুব ভালোভাবে মানিয়ে নেন তামিম ও মুশফিক। এরপর অতিথি দলের বিশেষজ্ঞ বোলাররা ফিরলেও আর রানের গতি বেধে রাখতে পারেননি। ব্যাটিং পাওয়ারপ্লের ৫ ওভারে (৩৬ থেকে ৪০) ৫৫ রান যোগ করে বাংলাদেশ।
২০তম ওভারের শেষ বলে রাহাতের বলে মাহমুদউল্লাহ বোল্ড হলে তামিমের সাথে জুটি গড়েন মুশফিক। তৃতীয় উইকেটে ২১ ওভার ৪ বলে ১৭৮ রানের দারুণ এক জুটি উপহার দেন এ দু জন। ২৪তম ওভারে হারিস সোহেলের বলে এক রান নিয়ে অর্ধশতকে পৌঁছান তামিম। ৭৫ বলে অর্ধশতকে পৌঁছুনো এ বাঁহাতি ব্যাটসম্যান নিজের রান তিন অঙ্কে নিয়ে যান ১১২ বলে। অর্ধশতকে পৌঁছুনোর পর আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন তামিম। ২৮তম ওভারে হারিসের বলে মিড উইকেট দিয়ে ম্যাচের প্রথম ছক্কাটি হাঁকান তিনি। পরের বলটিও একই জায়গা দিয়ে আবার উড়িয়ে সীমানা ছাড়া করেন তিনি। এটি ছিলো আরও বিশাল, গ্যালারিতে উল্লসিত ভক্তদের মাঝে গিয়ে পড়ে সেই বল। পরের ওভারে আজহারে বলে জীবন পান মুশফিক। সে সময় ৩৫ রানে ব্যাট করছিলেন তিনি। এর আগে সাদ নাসিমকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যান সে সময় ৪৭ রানে ব্যাট করা তামিম। ৩৫তম ওভারে আজমলের বলে চার হাঁকিয়ে অর্ধশতকে পৌঁছান মুশফিক। সেই ওভারেই তিন বলের দুবার সীমানার বাইরে বল পাঠিয়ে নিজের পঞ্চম শতকে পৌঁছান তামিম। ২০১৩ সালের পর ওয়ানডেতে এই প্রথম শতক পেলেন তিনি। ওয়াহাবের বলে মোহাম্মদ রিজওয়ানের ক্যাচে পরিণত হওয়ার আগে ১৩২ রানের দৃঢ়তাভরা ইনিংস খেলেন তামিম। তার ১৩৫ বলের ইনিংসটি ১৫টি চার ও ৩টি ছক্কা সমৃদ্ধ। তামিম ফিরে গেলেও অবিচল ছিলেন মুশফিক। চতুর্থ উইকেটে সাকিব আল হাসানের সাথে মাত্র ৩৪ বলে ৫০ রানের জুটি উপহার দেন তিনি। এ জুটি গড়ার পথে নিজের ৬৯ বলে তৃতীয় শতকে পৌঁছান মুশফিক। তামিমের মতো আজমলের বলে দুটি চার হাঁকিয়ে নিজের রান তিন অঙ্কে নিয়ে যান তিনি।
মাত্র ৭৭ বলে খেলা মুশফিকের ১০৬ রানের ঝড়ো ইনিংসটি ১৩টি চার ও ২টি ছক্কায় সাজানো। এই প্রথম কোনো একই ওয়ানডেতে শতক পেলেন বাংলাদেশের দুই ব্যাটম্যান। ওয়াহাবের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হয়ে মুশফিক ফিরে গেলেও বাংলাদেশের ইনিংসে তার কোনো প্রভাব পড়তে দেননি সাকিব ও সাব্বির রহমান। পঞ্চম উইকেটে ১৪ বলে ৩০ রানের জুটি গড়েন এই দুজন। শেষ ওভারে সাকিব ও সাব্বিরকে ফেরানো ওয়াহাব পাকিস্তানের সেরা বোলার। ৫৯ রানে ৪ উইকেট নেন এ বাঁহাতি পেসার।