স্টাফ রিপোর্টার: পুলিশ দম্পত্তি মাহফুজুর রহমান ও স্বপ্না রহমানের বাসার কাজের মেয়ে খাদিজা আক্তার সুমি তদন্ত সংস্থাকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। সুমি স্বীকার করেছে, খুন করার দৃশ্য সে দেখেছে। বলেছে, খালুকে খুন করার পর লাশ বাথরুমের কাছে টেনে নেয়া হয়। পরে খালাম্মাকে খুন করে আপু। খালাম্মাকে খুনের সময় আপু (ঐশী রহমান) বুকের ওপরে বসে দু দিকে পা দেয়। ছুরিটা দু হাত দিয়ে ধরে কোপাতে থাকে। মুহূর্তে খালাম্মা একটু জেগে উঠলে একের পর এক কুপিয়ে মারে।
খুনের আগে ও পরে ফোনে ঐশী কথা বলেছে। অবশ্য গোয়েন্দা জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য গরমিল করছে ঐশী। বলছে, সে কথা বলেনি। কিন্তু প্রযুক্তিগত তদন্ত করে ঐশীকে কিছু প্রমাণ দেখানো হয়েছে। তখন ঐশী আবার বলেছে, সে বন্ধুর সাথে কথা বলেছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য জানায়।
গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, পুলিশ ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমানের মেয়ে ঐশীর কাছে তথ্য পেতে এখন প্রযুক্তিগত তদন্ত শুরু হয়েছে। এ তদন্তে ঐশীর মিথ্যা বলার সুযোগ থাকছে না। কোনো কিছু অস্বীকার করলে প্রমাণ তাকে দেখানো হবে। খুনের পর ঐশী কাদের সাথে কথা বলেছে, কোথায় গিয়েছে সে অবস্থানের বিষয়টি নিয়ে ঐশী রহমান নিশ্চিত তথ্য না দিলেও গোয়েন্দা জালে রয়েছে অবস্থানের তথ্য। কোন পথে ঐশী ঘর থেকে বের হয়ে বাইরে গেছে সবই নখদর্পণে গোয়েন্দাদের। ইতোমধ্যে প্রযুক্তিগত তদন্ত শুরু হয়েছে। ঐশী অবাক হচ্ছে, বিস্মিত হচ্ছে গোয়েন্দারা এতোসব জানলো কী করে?
তদন্ত সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ রিমান্ডে থাকা ঐশী রহমানকে নিয়ে গত বুধবার রাতে চামেলীবাগের চামেলী ম্যানশনে যায়। এ সময় ঐশী বাসায় প্রবেশ করে কান্নায় ভেঙে পড়ে। বর্ণনা দেয় খুনের। কোন রুম থেকে কীভাবে কোন রুমে সে এলো, কীভাবে খুন করলো- সব দেখিয়ে দেয়। এ সময় পুলিশের বিশেষ শাখার একজন উচ্চপদস্থ ও ডিবির কর্মকর্তরা উপস্থিত ছিলেন। খুনের বর্ণনা দেয়া শেষ হলে ঐশীকে গোয়েন্দা কার্যালয়ে আনা হয়।
তদন্ত সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেছেন, কাজের মেয়ে সুমি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। অবশ্য সুমিকে দফায় দফায় এককভাবে জিজ্ঞাসাবাদের পর ঐশীর মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এ সময় ঐশীর সাথে কাজের মেয়ে সুমির দেয়া তথ্যের গরমিল পাওয়া যায়। গোয়েন্দারা বলছেন, সুমির অনেক বর্ণনা যৌক্তিক ও সত্য, যা তদন্তে সহায়তা করছে। তাকে খুন করার পর বাবা- মায়ের কসম কাটিয়ে নেয় ঐশী।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর বলেন, আমরা সব তথ্য এখন পর্যালোচনা করছি। সুমি ও ঐশীর কাছে পাওয়া তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। একই সাথে যাদের নাম উঠে এসেছে সেই বন্ধুদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে। ডিবির উপকমিশনার বলেন, তাদের কী ধরনের সম্পৃক্ততা আছে তা জানা দরকার।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, বয়স পরীক্ষার জন্য দুপুরে ঐশীকে নিয়ে আসে গোয়েন্দা পুলিশ। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয় জানিয়ে এ চিকিৎসক বলেন, দ্রুত এ ফলাফল জানা যাবে। ঐশীর বাবা পুলিশ পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান এবং মা স্বপ্না বেগমের লাশের ময়নাতদন্তও করেছিলেন ডা. সোহেল। গত ১৬ আগস্ট শুক্রবার রাজধানীর চামেলীবাগে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কার্যালয় লাগোয়া ২ চামেলী ম্যানশনের ৬ তলার ৫/বি ফ্ল্যাট থেকে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সহযোগীসহ ঘটনা ঘটানোর পর পুলিশ দম্পতির মেয়ে ঐশী রহমান আত্মগোপন করে থাকে। পরদিন শনিবার রাজধানীর পল্টন থানায় ঐশী আত্মসমর্পণ করে। গোয়েন্দারা সেদিনই তাকে নিয়ে অভিযানে নামে। এক পর্যায়ে কাজের মেয়ে সুমি ও বন্ধু মিজানুর রহমান রনিকে গ্রেফতার করে পাঁচ দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এ ঘটনায় দুই বন্ধু জনি ও সাইদুলের নাম উঠে আসার পর আইরীন নামে জনির আরেক বান্ধবীর নামও আসে। যার বাসা থেকে স্বর্ণের খালি বক্স উদ্ধার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, ঐশীর দু বন্ধু জনি ও সাইদুলকে গ্রেফতার করা গেলে আরও অনেক তথ্য পাওয়া যাবে। এ দুজন ঘনঘন অবস্থান পরিবর্তন করছে। আবার রনির কাছ থেকে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে তাতে করে প্রযুক্তি তদন্তে তা সহায়ক। এখন প্রযুক্তিগত তদন্তের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তদন্ত সংস্থা।
ঐশীর ছোটভাই ঐহীর সাথে আবার কথা বলবেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। খোঁজ করা হচ্ছে জনির আরেক বন্ধু আইরিনের। সে পালিয়ে আছে। তাকে পেতে কৌশল অবলম্বন করছেন গোয়েন্দারা। তদন্ত সংস্থা বলছে, খুনের দায় স্বীকার করা সহযোগীসহ ঐশীকে প্রয়োজন হলে আবারও রিমান্ডে নেয়ার আবেদন জানানো হবে আদালতে।