স্টাফ রিপোর্টার: গঙ্গাদেবীর উদ্দেশে ফুল ভাসানোর মধ্যদিয়ে গতকাল রোববার থেকে পার্বত্য অঞ্চলে শুরু হয়েছে বৈসাবী উত্সব। বাংলা বর্ষবরণ ও বিদায়কে চাকমারা বিজু, মারমারা সাংগ্রাই, ত্রিপুরারা বৈসু ও তংচংগ্যা সম্প্রদায়ের মানুষ বিষু উত্সব হিসাবে পালন করে থাকে। বিজু সাংগ্রাই বৈসু ও বিষু উত্সবের মিলিত নাম বৈসাবি উত্সব। ভোর থেকেই বিভিন্ন পাহাড়ি সমপ্রদায়ের মানুষ ফুল ভাসাতে আসেন রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদের পাড়ে। রাজবাড়ী ঘাটে সংসদ সদস্য উষাতন তালুকদার হ্রদে ফুল ভাসিয়ে উত্সবের সূচনা করেন। এছাড়া সকালে রাঙ্গামাটি গর্জনতলী ত্রিপুরা কল্যাণ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজন করা হয় কাপ্তাই হ্রদে ফুল ভাসনো, বয়োজ্যেষ্ঠদের স্নান ও বস্ত্রদান, ত্রিপুরা তরুণ-তরুণীদের গড়াইয়া নৃত্য, আলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরণী ও ঐতিহ্যবাহী পিঠা উত্সব। অনুষ্ঠানে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা বয়োজ্যেষ্ঠদের স্নানের সময় অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। রাঙ্গামাটি গর্জনতলী ত্রিপুরা কল্যাণ ফাউন্ডেশনের সভাপতি সুরেশ ত্রিপুরা ও সাধারণ সম্পাদক ঝিনুক ত্রিপুরা প্রমুখ। বর্ষবিদায় এবং বর্ষবরণ উপলক্ষে প্রতিবছর চৈত্র সংক্রান্তিতে আয়োজিত এ উত্সবে সোমবার উত্সবের ২য় দিন। পুরনো বছরের সব দুঃখ, বেদনা, গ্লানি, ব্যর্থতা ধুয়ে-মুছে উত্সব আর আনন্দে মেতে ওঠার দিন। ছোট-বড় সবার জন্য রয়েছে সুস্বাদু আর সুমিষ্ট খাবারের সমহার- বড়দের জন্য কানজি, জগড়া ও দু’চুয়ানি মদের আয়োজন। বিজু উত্সবকে ঘিরে এবারও সমগ্র পার্বত্য জনপদ আনন্দমুখর হয়ে উঠেছে।
চাকমা রীতি অনুযায়ী গতকাল ১২ এপ্রিল পানিতে ফুল ভাসানোর মধ্যদিয়ে তিন দিনের সার্বজনীন উত্সব শুরু হয়। ১৩ এপ্রিল উদযাপিত হবে মূল বিজু। পয়লা বোশেখ গোজ্যাপোজ্যে দিন ও বর্ষবরণ উত্সব। গোজ্যাপোজ্যে দিন নানাবিধ পূজা-পার্বণ আর প্রার্থনার মধ্যদিয়ে তিন দিনব্যাপি উত্সব শেষ হবে। চাকমাদের মতে, বিজু মানে আনন্দ, নতুন করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন, সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় আর চেতনার নতুন প্রেরণা।
কাপ্তাই উপজেলার তংচংগ্যা সমপ্রদায় গতকাল আনন্দ আয়োজনে বিষু উত্সব উদযাপন করে। এ উপলক্ষে বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা, তংচংগ্যা সমাবেশ ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। শোভাযাত্রায় তংচংগ্যা সমপ্রদায়ের নারী-পুরুষ ছাড়াও নুরুল হুদা কাদেরী স্কুলের সকল শিক্ষার্থী অংশ নেয়। শোভাযাত্রায় আরো অংশ নেন রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের সদস্য সান্ত্বনা চাকমা ও থোয়াইচিং মারমা, কাপ্তাই উপজেলার পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অংসুইছাইন চৌধুরী, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসরাত জাহান পান্না, ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত বিকাশ, ওয়াগ্গা মৌজার হেডম্যান অরুন তালুকদারসহ অতিথিরা।