পাগলাট্রেন পিছু ছুটছে খবরে দৌলতদিয়া মেল কুষ্টিয়া স্টেশনের লুপলাইনে
স্টাফ রিপোর্টার: বড় ধরনের একটি দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেলো যাত্রীবাহী ট্রেন ফরিদপুর এক্সপ্রেস। চালকছাড়াই ৪টি স্টেশন অতিক্রমের পর টিকিট কালেক্টরের দক্ষতায় ট্রেনটি থামানো হলে শতাধিক যাত্রীর প্রাণ রক্ষা পায়। অল্পের জন্য নকশিকাঁথা তথা গোয়ালন্দ মেলটিও দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছে।
রাজবাড়ী রেলওয়ে সূত্র জানায়, গতকাল রোববার রাজবাড়ী-ফরিদপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি সকাল ৮টা ১০ মিনিটে ফরিদপুরের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিলো। এজন্য ট্রেনটি রাজবাড়ী রেলস্টেশনের ২ নং প্লাল্টফর্মে ছয়টি বগি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। ট্রেনে যাত্রী ছিলো শতাধিক। সকাল ৮টায় ট্রেনটির ইঞ্জিন চালু করে প্রধান চালক মোহাম্মদ আলী, সহকারী মো. ফয়সাল ও ট্রেনের গার্ড সুভাষ চন্দ্র পাশে একটি চায়ের দোকানে চা পান করছিলেন। হঠাৎ করেই ট্রেনটি পেছন দিকে চলতে শুরু করে। এক পর্যায়ে প্রচণ্ড বেগে ট্রেনটি পর্যায়ক্রমে সূর্যনগর, বেলগাছি, কালুখালী ও পাংশা স্টেশন অতিক্রম করে। এ সময় ট্রেনের ভেতরে থাকা যাত্রীরা আতঙ্কে চিত্কার শুরু করে। এক পর্যায়ে ২৬ কি. মি. চলার পর ট্রেনটি পাংশা স্টেশন পার হয়ে আমতলী নামক স্থানে গিয়ে থামে। অপরদিকে রাজবাড়ী স্টেশন মাস্টার খবর দিতে থাকেন একের পর এক স্টেশনে। চালক ছাড়াই ট্রেন পিছু ছুটছে খবর পেয়ে খুলনা থেকে গোয়ালন্দ দৌলতদিয়া মেলটি কুষ্টিয়া স্টেশনের লুপলাইনে নেয়া হয়।
জানা গেছে, ট্রেনের টিকিট কালেক্টর আনোয়ার হোসেন ঝুঁকি নিয়ে চেন টেনে ট্রেনটিকে থামান। সকাল ১০টায় রাজবাড়ী-পোড়াদহ শাটল ট্রেনের একটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে এসে চালকবিহীন ফরিদপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটিকে নিয়ে রাজবাড়ীর উদ্দেশে রওনা হয়। এ ঘটনায় প্রায় দু ঘণ্টা রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। রাজবাড়ী স্টেশন মাস্টার কামরুজ্জামান বলেন, চালক, সহকারী চালক ও পরিচালক তিনজনই ট্রেনটি চালু রেখে চা পান করছিলেন। হঠাৎ করেই ট্রেনটি চলতে শুরু করে। রেলকর্তৃপক্ষ এ ঘটনায় চালক মোহাম্মদ আলী, সহকারী চালক ফয়সাল ও গার্ড সুভাষ চন্দ্র শর্মাকে সাসপেন্ড করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি করেছে।
রেলের ইতিহাসে এ অবিশ্বাস্য ঘটনাটিই ঘটেছে গতকাল রোববার। রাজবাড়ীতে। তবে ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছেন এর শতাধিক যাত্রী। যদিও প্রাণ বাঁচাতে লাফিয়ে নামতে গিয়ে আহত হয়েছেন কয়েকজন।
রাজবাড়ী স্টেশন মাস্টার মো. কামরুজ্জামান জানান, রাজবাড়ী থেকে কুষ্টিয়ার দিকে যেতে থাকলে সব স্টেশন মাস্টারদের পাগলা ট্রেনের খবর দেয়া হয়। সংশ্লিষ্ট স্টেশন মাস্টাররা লাইন ক্লিয়ার দিয়ে ট্রেনটি নির্বিঘ্নে চলার ব্যবস্থা করেন রাখেন। পাগলা ট্রেনের সাথে সংঘর্ষ এড়াতে খুলনা থেকে ছেড়ে আসা গোয়ালন্দঘাটগামী নকশীকাঁথা এক্সপ্রেস ট্রেন (সকাল সাড়ে ৮টায়) কুষ্টিয়া স্টেশনের লুপ লাইনে সরিয়ে রাখা হয়। এভাবে এড়ানো হয় বড় ধরনের দুর্ঘটনা। পরে রাজবাড়ী থেকে লাইট পাউয়ার (ইঞ্জিন) গিয়ে ফরিদপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি উদ্ধার করে রাজবাড়ী স্টেশনে নিয়ে আসে।
ঘটনার পরপরই চালক মোহাম্মদ আলী ও সহকারী চালক ফয়সাল আহমেদ স্টেশন থেকে সটকে পড়েন। তবে রেলওয়ে পুলিশ বিকালে তাদের আটক করে জিআরপি থানায় নিয়ে আসে। আটক করা হয় পরিচালক (গার্ড) সুভাষ কুমার শর্মাকেও। সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তাদের তিনজনকেই জিজ্ঞাসাবাদ চলছিলো। তিনজনকেই সাময়িক বহিষ্কার করেছে রেলওয়ে পাকশী ও রাজশাহী বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ। ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে।
পরিচালক সুভাষ কুমার শর্মা বলেন, তিনি গাড়ি ছাড়ার সব আয়োজন শেষ করে প্লাটফর্মেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। ড্রাইভার ও ফোরম্যানকে কথা বলতে দেখে তিনি পেছন দিকে হাঁটছিলেন। হঠাৎ ট্রেন পেছনের দিকে চলতে দেখে তিনি হতচকিত হয়ে যান। তখন তার কিছুই করার ছিলো না। তিনি জানান, এ ট্রেনটি সপ্তায় ছয়দিন ৬টি কোচ নিয়ে ফরিদপুর যায়। ফরিদপুর থেকে ফিরে সকাল ১০-৩৫ মিনিটে রাজবাড়ী থেকে ভাটিয়াপাড়ার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। তিনি বলেন, এ ঘটনার দায় আমার ওপর কীভাবে পড়ে আমি জানি না।