যে পুলিশ জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানের নিমিত্তে নিযুক্ত, সেই পুলিশের সাথে জনগণের সংঘর্ষ কেন? চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার দলকালক্ষ্মীপুরে পুলিশের সাথে গ্রামবাসীর সংঘর্ষে ৫ জন গুলিবিদ্ধসহ ১০ জন আহত হওয়ার পর সঙ্গত কারণেই এ প্রশ্ন উঠে আসে। গতপরশু এ ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে কর্তাদেরও নাকানিচুবানি খেতে হয়েছে। গ্রামবাসী রয়েছে মামলার ঝুঁকিতে।
ঘটনার পর সামাজিক, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ পুলিশ কর্মকর্তাদের অনানুষ্ঠানিক বৈঠকের পর বলা হয়, ভুল বোঝাবুঝির কারণে এ অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। ভুল বোঝাবুঝির অবসান হওয়ার পর পরিবেশ স্বাভাবিক হয়েছে। এ মন্তব্য সংবলিত সচিত্র প্রতিবেদন গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় তুলে ধরা হয়। যদিও ‘ভুল’ কি? তা মন্তব্যের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট প্রকাশ পায়নি। তবে ঘটনা বিশ্লেষণে যে বিষয়টি উঠে আসে তা হলো- উভয়পক্ষেরই বাড়াবাড়ি ছিলো।
ধর্মসভা বা অন্য কিছুর নামে রাস্তায় রঙিন রশি ধরে দান বা চাঁদা আদায় আইনসিদ্ধ নয়। পুলিশ প্রথমেই এ অবৈধ কাজের আপত্তি তুলতে পারতো, আইন প্রয়োগ করলেও বোধ করি পরিস্থিতি অতোটা অপ্রীতিকর পর্যায়ে পৌঁছুতো না। যদিও আইন থাকার পরও নানা কারণে কিছু আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় অনেকেই জানে না, কোনটি অন্যায়। পুলিশ তখনই আইন প্রয়োগ করতে গেছে, যখন পুলিশের এক শাদা পোশাকধারী সদস্য অপদস্থ হয়েছে- তখন। আর যারা অপদস্থ করেছে তারা তরুণ। একটি দলের সাথে সম্পৃক্ততা ওদের যতোটা না উগ্র করেছে তার চেয়ে বেশি, আবেগী করেছে ধর্মীয় কাজে সমাজেরই দায়িত্বশীলদের দেয়া দায়িত্ব। যারা ওই কাজে দায়িত্ব দিয়েছেন তাদের সচেতনতা যেমন প্রশ্নবিদ্ধ, তেমনই কয়েকজনকে ধরে আটকে নির্যাতনও পুলিশি ক্ষমতার অপব্যবহার। এ ঘটনাকে কি শুধু ভুল বোঝাবুঝি বলে দায় এড়ানো যায়? ঘটনার জন্য উভয়পক্ষেরই কি বাড়াবাড়ি দায়ী নয়? এরপরও বলতেই হয়, ঘটনার পর যেহেতু সমঝোতা বৈঠকে ঘটনাটিকে ভুল বোঝাবুঝি বলে আখ্যায়িত করা হয়, সেহেতু মামলায় জড়িয়ে গ্রামবাসী যেন হয়রানির শিকার না হয়- সেদিকে নজর রাখার দায়িত্ব পুলিশের শীর্ষ কর্তারই।
অনুমোদন নিয়ে ধর্মসভার আয়োজনে আপত্তি নেই। আইনে আপত্তি তখনই, যখন তার জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে রঙিন ফিতে ধরে অর্থ আদায় করা হয়। তা ছাড়া দান দয়া-দাক্ষিণ্যের জন্য হাত পাতার মধ্যে সুপ্তভাবে হলেও লুকিয়ে তাকে পরনির্ভরতা। যা প্রত্যয়ী মানুষ গড়ার কাজে অন্তরায়। সে কারণেই মূলত বিগত দিনের ওই ধরনের রেওয়াজ সমাজ থেকে উঠে গেছে প্রায়। যেটুকু আছে তা আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাবেই। অসচেতনতাও অনেকটা দায়ী।
সর্বক্ষেত্রে, সর্বস্তরে সকলের মধ্য থেকেই ক্ষমতার অপপ্রয়োগ পরিহার প্রয়োজন। তা না হলে সমাজের সম্প্রীতিই শুধু বিনষ্ট হয় না, রক্ত ঝরে। দলকালক্ষ্মীপুরে পুলিশের সাথে গ্রামবাসীর সংঘর্ষে প্রাণ না ঝরলেও ঘটনাটিকে খাটো করে দেখার জো নেই। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়াতে সকলকে দায়িত্বশীল হতে হবে। সচেতনতার আলোয় বিতাড়িত করতে হবে বাড়াবাড়ি নামক মনের অন্ধকার।