সারাদেশে বহিষ্কার ৩০ : চুয়াডাঙ্গায় অনুপস্থিত ৮৬ পরীক্ষার্থী

এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে শুরু : প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের পরিদর্শন

 

স্টাফ রিপোর্টার: এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার প্রথম দিনে সারাদেশে ১০ হাজার ১৯৬ পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিলো। বহিষ্কার করা হয়েছে ৩০ জনকে। গতকাল বুধবার পরীক্ষা শেষে সন্ধ্যায় আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটি এ তথ্য জানায়। চুয়াডাঙ্গায় ৮৬ জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকলেও কোনো কেন্দ্রের কোনো পরীক্ষার্থী বহিষ্কৃত হয়নি। পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মো. দেলোয়ার হোসাইন, পুলিশ সুপার রশীদুল হাসান, বিজিবি-৬’র পরিচালক লে. কর্নেল এসএম মনিরুজ্জামানসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে জেলা প্রশাসক বলেছেন, চুয়াডাঙ্গার পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পরীক্ষা গ্রহণ করা হচ্ছে।

গতকাল এসএসসিতে বাংলা (আবশ্যিক) প্রথমপত্র, সহজ বাংলা প্রথম পত্র, বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশের সংস্কৃতি প্রথম পত্র এবং বাংলা (আবশ্যিক) প্রথম পত্রের (ডিআইবিএস) পরীক্ষা হয়েছে। আর কারিগরি বোর্ডের অধীনে এইচএসসি (ব্যবসায় ব্যবস্থাপনায়) দ্বাদশ শ্রেণিতে বাংলা-২, একাদশ শ্রেণিতে বাংলা-১ (সৃজনশীল, নতুন সিলেবাস) ও বাংলা-১ (সৃজনশীল, পুরাতন সিলেবাস) পরীক্ষা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

এছাড়া কারিগরি বোর্ডের অধীনে ডিপ্লোমা-ইন কমার্সে দ্বাদশ শ্রেণিতে বাংলা-২, একাদশ শ্রেণিতে বাংলা-১ (সৃজনশীল) এবং মাদরাসা বোর্ডের অধীনে আলীমে কোরআন মাজিদ (সকল বিভাগ) পরীক্ষা হয়েছে।

প্রথম দিন ঢাকা বোর্ডে ১ হাজার ৯১১ জন, রাজশাহীতে ১ হাজার ১৩০ জন, কুমিল্লায় ৯৩৪ জন, যশোরে ১ হাজার ৭৪ জন, চট্টগ্রামে ৭৭৬ জন, সিলেটে ৪৭৭ জন, রবিশালে ৩৯৩ জন এবং দিনাজপুর বোর্ডে ৮৪৬ জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিলো।

মাদরাসা বোর্ডে ১ হাজার ৪৭৬ জন এবং কারিগরি বোর্ডে ১ হাজার ১৭৯ পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিলো বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। অন্যদিকে নকলের দায়ে মাদরাসা বোর্ডে ৭ জন এবং কারিগরি বোর্ডে ১০ পরীক্ষার্থী বহিষ্কার হয়েছে। এছাড়া বরিশাল ও মাদরাসা বোর্ডের দুজন করে পরীক্ষককে প্রথম দিনের পরীক্ষায় বহিষ্কার করা হয়েছে।

দু হাজার ৪১৯টি কেন্দ্রে আট হাজার ৩০৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১০ লাখ ৭৩ হাজার ৮৮৪ জন শিক্ষার্থী এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গায় গতকাল বুধবার এইচএসসি পরীক্ষার প্রথম দিনে ৮৬ জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিলো। পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক মো. দেলোয়ার হোসাইন ও পুলিশ সুপার রশীদুল হাসানসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জেলার বিভিন্ন কেন্দ্র পরিদর্শন করেন।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সাধারণ শাখা সূত্রে জানান গেছে, চলতি বছর চুয়াডাঙ্গা জেলায় ২০টি কেন্দ্রে ৯ হাজার ১৬ জন পরীক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করার কথা থাকলেও প্রথম দিনে অনুপস্থিত ছিলো ৮৬ জন পরীক্ষার্থী। এরমধ্যে এইচএসসি পরীক্ষার ১১টি কেন্দ্রে নিয়মিত ৫ হাজার ৯৬ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৭৪ জন, ব্যবসা ব্যবস্থাপনা ও ভোকেশনাল ৫৫৪ জনের মধ্যে ৪ জন এবং আলিম পরীক্ষায় ৩৬৬ জনের মধ্যে ৮ জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিলো। অনিয়মিত হিসেবে ৩ হাজার পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করছে। তবে প্রথম দিনে কোনো শিক্ষক ও ছাত্র বহিষ্কার নেই।

প্রথম দিনে বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষার শুরুতেই চুয়াডাঙ্গা পৌর কলেজ কেন্দ্রে অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। বেলা ১০টার কিছু আগে কলেজের অধ্যক্ষ শাহজাহান আলীর কক্ষে প্রশ্নপত্র বিলির প্রস্তুতির সময় একদল যুবক এসে কিছু পরীক্ষার্থীকে তাদের পছন্দের জায়গায় বসার ব্যবস্থা ও নির্বিঘ্নে পরীক্ষ দেয়ার দাবি করে। এ সময় কলেজ কর্তৃপক্ষ অপরাগতা প্রকাশ করলে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ ও বিভিন্ন প্রকার হুমকি দেয়া হয়। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে কলেজে ডিউটিরত ম্যাজিস্ট্রেট হাজির হলে এ সময় যুবকরা পালিয়ে যায়। বিষয়টি জানাজানি হলে জেলা প্রশাসক মো. দেলোয়ার হোসাইন, পুলিশ সুপার রশীদুল হাসান ও ভিজিলেন্স টিমের আহ্বায়ক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আবু সাঈদসহ এ টিমের সদস্যরা এ সময় উপস্থিত হন। পুলিশ সুপার এ সময় পুলিশকে তড়িৎ পদক্ষেপ গ্রহণের আদেশ দেন।

ভিজিলেন্স টিমের আহ্বায়ক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আবু সাঈদের নেতৃত্বে ভিজিলেন্স টিম পরে আলমডাঙ্গার মহিলা কলেজ ও এমএস জোহা কলেজ কেন্দ্র পরিদর্শন করে। এ সময় ভিজিলেন্স টিমের সদস্য সাবেক অধ্যক্ষ এসএম ইস্রাফিল, প্রেসক্লাব সভাপতি মাহতাব উদ্দিন, অ্যাড. রফিকুল ইসলাম ও শাহ আলম সনি সাথে ছিলেন। এছাড়া অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আনজুমান আরার নেতৃত্বে পৃথক অপর ভিজিলেন্স টিম জীবননগরের বিভিন্ন কেন্দ্র পরিদর্শন করে। এ সময় সাবেক অধ্যক্ষ সিদ্দিকুর রহমান ও মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম সাথে ছিলেন।

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, যশোর শিক্ষাবোর্ড থেকে রেজিস্ট্রেশন কার্ড না আসায় ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ মাহাতাব উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের ৪ শিক্ষার্থী এবার এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি। এ ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের পরিবারের পক্ষ থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষকে দায়ী করা হয়েছে।

কালীগঞ্জ মাহাতাব উদ্দিন ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০১৪-২০১৫ শিক্ষাবর্ষে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য রনি শুভ্রদেব ভদ্র, নাইম, বিপুল ও অরুপ ফরম পূরণ করে। এরপর গত ৪ দিন ধরে কলেজে ধরনা দিয়েও তারা রেজিস্ট্রেশন কার্ড পায়নি। সে কারণে তারা পরীক্ষা দিতে পারেনি।

শিক্ষার্থী শুভ্র কুমার ভদ্র জানায়, কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলো তাদের কার্ড ঠিক সময়ে আসবে। কিন্তু পরীক্ষার দিন পর্যন্ত তা আসেনি। ফলে আমার জীবন থেকে একটি বছর নষ্ট হয়ে গেলো। কলেজ অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুল মজিদ বিশ্বাস জানান, এইচএসসি পরীক্ষার আগে শিক্ষার্থীদের টেস্ট পরীক্ষা নেয়া হয়। যারা অকৃতকার্য হয় তাদের ফরম পূরণ করানো হয়নি। কিন্তু কিছু ছাত্র কলেজে কোনো খোঁজ না নিয়ে ব্যাংকের মাধ্যমে ফরম পূরণের টাকা জমা দেয়। উল্লেখিত ৪ জন ছাত্র টেস্ট পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছিলো কি-না তা আমরা খতিয়ে দেখছি।

এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মানোয়ার হোসেন মোল্লা জানান, ৪ ছাত্র রেজিস্ট্রেশন কার্ড না আসায় পরীক্ষা দিতে পারেনি এমনটি আমি শুনেছি। কেউ যদি আমার কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ করে তাহলে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। ভুক্তভোগী ৪ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের পক্ষ থেকে বিষয়টি তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানানো হয়েছে।

Leave a comment