মাজরা পোকায় আক্রান্ত বিস্তীর্ণ এলাকার ধানক্ষেত

দামুড়হুদা উপজেলার ধানচাষিদের মাথায় হাত

 

তাছির আহমেদ: অধিকাংশই ধানের শীষে ভরে গেছে দামুড়হুদার বিস্তীর্ণ এলাকা। দিগন্ত জোড়ামাঠগুলো এখন শুধু সবুজের সমাহার। বোরো আবাদে এলাকার চাষিরা সার ও বিদ্যুতের সমস্যা কাটিয়ে উঠলেও এখন তারা মাজরা পোকার আতঙ্কে দিশেহারা। সকলেই রয়েছেন সর্বাত্মক সতর্ক। পোকায় আক্রান্ত ক্ষেতের ফসল রক্ষার্থে, চাষিরা করছে নিয়মিত তদারকি। পাতা ঝলসানো রোগে তাদের কোনো ক্ষতি করতে না পারলেও মাজরা পোকায় ক্ষতি করছে। তাতে অনেক বোরোচাষি উদ্বিগ্নে দিন কাটাচ্ছে।

উপজেলা কৃষি অফিসসূত্রে জানা গেছে, চলতি মরসুমে ৮ হাজার ২৬০ হেক্টর জমিতে বোরোচাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও অর্জিত হয়েছে ৮ হাজার ৫৭৫ হেক্টর। উপজেলার বিভিন্ন বোরো ক্ষেত সরেজমিনে দেখা যায়, বেশকিছু জমিতে মাজরা পোকার আক্রমণ। চাষিরা কীটনাশক প্রয়োগ করে এ শত্রুকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করলেই কেউ কেউ পড়েন চরম বিপাকে। ধান গাছের উপরিভাগের পাতা বিবর্ণ হয়ে দিনদিন মরে যাওয়ার মতো।

দামুড়হুদা দশমী গ্রামের খালেক গোলজারের ছেলে ধানচাষি আব্দুর রশিদ, গতকাল দুপুরে দামুড়হুদার চামপচা বিলের মাঠে এক ধানক্ষেত থেকে মাজরা পোকা আক্রান্ত ধানগাছ উঠিয়ে দেখালেন মাজরা পোকার ডিমসহ তাদের বসবাস। এ সময় তিনি বলেন, এ ক্ষেতটি দশমীর আলতাফ হোসেনের ছেলে লিটনের। এ ক্ষেতের অদূরেই রয়েছে তার ধানক্ষেত। তা আক্রান্তের ভয়ে তিনিও আছেন উদ্বিগ্নে। একই মাঠের অপর বোরোচাষি দশমীর মৃত জুজজিহার মণ্ডলের ছেলে জামান আলী বলেন, আমার ক্ষেতে মাজরা পোকা লাগেনি। পুরাতন হাউলীর আফসার মণ্ডলের ছেলে আক্কাচ আলী বলেন, নাউগড়া বিলমাঠে তার ধানক্ষেতে মাজরা পোকার আক্রমন অল্প অল্প দেখা দিয়েছে, এদের প্রতিকারের জন্য কীটনাশক স্প্রে করছি।

এ ব্যাপারে কৃষিবিদ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুফি মো. রফিকুজ্জামান জানান, এ বছর পোকার আক্রমণ হালকা কিছু দেখা দিলেও তা ব্যাপক নয়। কৃষি বিভাগের মাঠকর্মীরা এলাকার চাষিদের মাজরা পোকা দমনে আলোক ফাঁদ ও পার্চিং পদ্ধতিসহ বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে কাজ করছেন। এ পোকা সম্পর্কে তিনি বলেন, মাজরা পোকা আসে ঝাঁকে ঝাঁকে। তাই একবার এসে তারা যে ডিম পাড়ে সে ডিম ফুটেই মাজরার বাচ্চা বের হয়। গাছের কুশির গোড়ায় ছিদ্র করে এরা ভেতরে ঢুকে কুশি নষ্ট করে দেয়। তাই আগে থেকেই সতর্কতা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থ্যা নিলে এদের আক্রমণ থেমে যায়। সে জন্য চারা লাগানোর পরপরই ক্ষেতে মাঝে পাখি বসার জন্য ডাল বা কঞ্চি পুঁতে দিলে তাতে ফিঙেসহ অন্যান্য পাখিরা বসে মাজরা পোকা ধরে খায়। ফলে মা মাজরা পোকারা ধানগাছের পাতায় আর ডিম পাড়তে পারে না। আক্রান্ত ক্ষেতের মরা ডিগ বা শাদা শীষ ক্ষেতে নেমে সেগুলোর মাথা ধরে টান দিয়ে তুলে ফেলুন। তবে তুলে ফেলা মরা ডিগ বা শাদা শীষগুলো ভুলেও জমির আইলে ফেলে রাখবেন না। সেগুলো মাটিতে পুঁতে ফেলার পরামর্শ দেন তিনি।

Leave a comment